৮০ ভাগ অভিযোগই আমলে নেয়নি দুদক
সদ্য সমাপ্ত বছরে (২০২২ সাল) জমা হওয়া প্রায় ৮০ ভাগ দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জমা হলেও দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়া কিংবা দুর্বল তথ্য-প্রমাণের কারণে এসব অভিযোগের শেষ ঠিকানা হয় স্টোর রুমে।
দুদকের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর, পত্রিকা বা টিভির প্রতিবেদন, ১০৬ হটলাইন ও এনফোর্সমেন্ট থেকে দুর্নীতির মোট ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগের মধ্যে দুদকে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় মাত্র ৯০১টি। অর্থাৎ মাত্র ২১ শতাংশ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। ১৫ হাজার ২৮৫টি অভিযোগ একেবারেই আমলে নেওয়া হয়নি। যদিও বাদ পড়া অভিযোগের মধ্যে তিন হাজার ১৫২টির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ও দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, যে পরিমাণ অভিযোগ আসে তার বেশির ভাগই অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না। কারণ, যেসব অভিযোগ আসে তার বড় অংশই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। দুদকের সেসব অভিযোগ গ্রহণের এখতিয়ার নেই। তফসিলভুক্ত না হলে আমরা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না।
‘দুদক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব অভিযোগ গ্রহণ করে তা অনেক সময় অসম্পূর্ণ থাকে। কমিশনে যে কয়টি সোর্সের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় তার একটি সরাসরি বা ডাকযোগে আসা অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ অভিযোগ হিসেবে নেওয়া হয়। কমিশন অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেলে তা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে।’
সাধারণত দুর্নীতির অভিযোগ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি। যার মধ্যে রয়েছে- অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ কি না, কাকে সম্বোধন করে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে, অভিযোগকারীর পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি না, প্রাপ্ত অভিযোগটির সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠতা, পক্ষ-বিপক্ষ কর্তৃক (শত্রুতাবশত) অযথা হয়রানির উদ্দেশ্যে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে কি না, অভিযুক্ত ব্যক্তির দপ্তর, তার দাপ্তরিক পদমর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কাল, অভিযোগের দরখাস্তে বর্ণিত অপরাধের ব্যক্তি ও অর্থ-সঙ্গতির পরিমাণ, প্রাপ্ত অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ ও দুর্নীতি দমন বিধিমালা- ২০০৭ মোতাবেক কার্যসম্পাদন শেষে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি না ইত্যাদি।
এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। এর বাইরে অভিযোগ জমা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু থাকে না। এমনকি অভিযোগ সত্য হলেও দুর্বল তথ্য-উপাত্ত তফসিলের সীমাবদ্ধতার কারণে অভিযোগটি আমরা অনুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না। এক্ষেত্রে দুদক আইন ও বিধির বাইরে যেতে পারে না। সে কারণে অনেক অভিযোগ দুদকের তফসিলের বাইরে হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে থাকে।
দুদকের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থায় জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে সরাসরি প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ এসেছে ১১ হাজার ৭৯৬টি, বেসরকারি দপ্তর থেকে ৯৬৭টি, সরকারি দপ্তর থেকে এসেছে ৩৮৭টি অভিযোগ। এছাড়া পত্রিকা বা টিভি প্রতিবেদন থেকে এক হাজার ৩৫৪টি, কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এক হাজার ৫৪৭টি অভিযোগ এসেছে। এছাড়া ১০৬ হটলাইন ও এনফোর্সমেন্ট থেকে ৫৮০টি অভিযোগ এবং আদালত, ইমেইল ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দুই হাজার ৭০৭টি অভিযোগ এসেছে।
আরএম/এমএআর/