বাজারে আসছে তরমুজ, দাম চড়া
বসন্ত প্রায় শেষ। ক’দিন বাদেই গ্রীষ্মকাল শুরু হবে। গরমের দুপুরে প্রশান্তির জন্য তরমুজের একটি ফালি যথেষ্ট। সারা বছর কম-বেশি দেখা মিললেও মৌসুমি এই ফলটি এখন পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজারগুলোতে মাঝারি থেকে বড় আকারের তরমুজ কিনতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তবে দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাজধানীর রায়ের বাজার, মিরপুর-১০, বনানী সুপার মার্কেট ও গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ফলের দোকানগুলোয় থরে থরে তরমুজ সাজানো আছে। দোকানিরা বলছেন, সারা বছর থাই তরমুজ পাওয়া যায়। তবে, মৌসুমি তরমুজ গত ১৫-২০ দিন ধরে আসতে শুরু করেছে। বাজারভেদে তরমুজের দামের পার্থক্য রয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর ফলের বাজারে বড় আকারের (তিন থেকে চার কেজি) তরমুজ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকাও হাঁকা হচ্ছে।
রাজধানীর রায়ের বাজারের ফলের দোকানি রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌসুমি এই ফলটি এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরেই তরমুজের সরবরাহ বেড়েছে। তরমুজ প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সদরঘাট ও গাবতলী রোডের সেকশন এলাকা থেকে আমরা তরমুজ সংগ্রহ করছি।বনানী সুপার মার্কেট ফল বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ১৫-২০ দিন হলো মৌসুমি তরমুজ আমরা দোকানে ওঠাতে পেরেছি। মাত্র বাজারে আসায় এখন দাম একটু বেশি। আমরা ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাজারে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে তখন হয়তো দাম একটু কমবে। বাজারে থাই তরমুজ সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে মৌসুমি তরমুজটা কয়েকমাস থাকে।
এক নজরে তরমুজ
তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল। এটির ইংরেজি নাম ওয়াটারমেলন (Watermelon) ও বৈজ্ঞানিক নাম সিট্রুলাস ল্যান্যাটাস (Citrullus lanatus)। তরমুজে প্রচুর পানি থাকে। ফলটিতে ৯২ শতাংশ পানি, ছয় শতাংশ চিনি ও দুই শতাংশ অন্যান্য উপাদান আছে। তরমুজে খুব সামান্য ক্যালরি আছে। তাই তরমুজ খেলেও ওজন বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা থাকে না। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও আঁশ।
মৌসুমি এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না।
তরমুজের আরো একটি গুণ হলো এটি চোখ ভালো রাখতে কাজ করে। তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় এ ফলটি চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। একইসঙ্গে চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে তরমুজ। চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
তরমুজে প্রচুর পানি ও কম ক্যালরি থাকায় পেট পুরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা উচ্চ পরিমাণে সিট্রুলিন মানব দেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
ফলের বাজারে আজকের দর
রাজধানীর বনানী সুপার মার্কেটের ফল ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, মাল্টা ১৫০ টাকা, কমলা ১৬০ টাকা, পাকা পেঁপে ১২০ টাকা, পেয়ারা ১২০ টাকা, কালো আঙ্গুর ৩৫০ টাকা, সাদা আঙ্গুর ২৫০, ড্রাগন ফল ৫০০-৫৫০ টাকা, সবুজ আপেল ৩৫০ টাকা, লাল আপেল ২০০ টাকা, এভোকেডো ১২০০ টাকা, কিউবি ৮৫০ টাকা, নাশপাতি ২৫০ টাকা, স্ট্রবেরি ৬০০ টাকা, বেদেনা ৩৫০ টাকা, সবেদা ১২০ টাকা, বরই ১৪-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কলা ১২০ টাকা ডজন ও বেল ৬০ থেকে ৭০ প্রতি পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
এমএইচএন/ওএফ