সমতা আনতে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি
একটা মেয়ে সংগ্রাম করে প্রতিযোগিতার বাজারে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকে। তোমার খাগড়াছড়িতে বদলি হয়েছে, চাকরি ছেড়ে দাও। এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কোনোদিন সমতা আনা সম্ভব হবে না...
রাশেদা কে চৌধুরী। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও উন্নয়নকর্মী। জন্ম ১৯৫১ সালে সিলেটে। মা সাবিকুন নিসা চৌধুরী ছিলেন চিকিৎসক। বাবা গোলাম ইয়াহইয়া চৌধুরী ছিলেন কলেজের অধ্যাপক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষে যোগ দেন উন্নয়ন পেশায়। কাজ করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক। ২০০৮ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নূর মোহাম্মদ।
ঢাকা পোস্ট : স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী শিক্ষায় অগ্রগতি কতটুকু?
রাশেদা কে চৌধুরী : ধন্যবাদ, বিষয়টি উঠানোর জন্য। এ বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি পালন করবে। এ সময় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। ইতিহাসে অনেক অর্জন এবং ধারা সূচিত হয়েছে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময় নারী-পুরুষ কারও জন্য শিক্ষা এত সহজ ছিল না। ওই সময় দেশে গড় সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ২১ শতাংশ। সেখানে নারী সাক্ষরতার হার ছিল অনেক নিচে।
ওই আইনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের আলোকে সকল নাগরিকের জন্য একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। বঙ্গবন্ধু সে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কাজটি আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নিয়ে যে স্বপ্ন ও ভাবনা ছিল, তাকে হত্যা না করলে আজ বাংলাদেশের চিত্র অন্য রকম হতো
রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
অন্যদিকে স্কুল-কলেজের মেয়েদের ভর্তির হারও ছিল নগণ্য। সমাজে মধ্যবিত্ত বা সচ্ছল পরিবারের মেয়েরাই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেত। শিক্ষার এ বৈষম্য দূর করে সর্বজনীন করার প্রথম উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করে বাধ্যতামূলক করেন। সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এ কমিশন গৃহীত হয়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে হোঁচট খায় শিক্ষা খাত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাকে সর্বজনীন ও প্রাথমিক শিক্ষা আইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি এখনও।
ঢাকা পোস্ট : ওই আইনে কী বলা হয়েছিল?
রাশেদা কে চৌধুরী : ওই আইনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের আলোকে সকল নাগরিকের জন্য একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। বঙ্গবন্ধু সে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কাজটি আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা নিয়ে যে স্বপ্ন ও ভাবনা ছিল, তাকে হত্যা না করলে আজ বাংলাদেশের চিত্র অন্য রকম হতো।
ঢাকা পোস্ট : পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা শিক্ষা খাতের অগ্রগতিতে কোন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
রাশেদা কে চৌধুরী : গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছুতেই অগ্রগতির ধারা সূচিত হয়। সব সরকার মেয়েদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। জাতিসংঘ এর নাম দিয়েছিল ‘এফারমেটিভ অ্যাকশন পলিসি’। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নারী শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করা হয়।
এই, একটি জায়গায় শুধু ব্যতিক্রম দেখেছি। শিক্ষায়, বিশেষ করে নারী শিক্ষায়। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয়নি। বরং আগের সরকারের কাজগুলো পরবর্তী সরকার এগিয়ে নিয়ে গেছে
রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
ঢাকা পোস্ট : সরকার পরিবর্তনের প্রভাব নারী শিক্ষায় পড়েছে কি?
রাশেদা কে চৌধুরী : এই, একটি জায়গায় শুধু ব্যতিক্রম দেখেছি। বাংলাদেশে সাধারণত যা ঘটে একটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি বা পলিসি অন্য রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে বা নীতিকে পাশ কাটিয়ে যায়। অথবা বাস্তবায়নই করে না। কিন্তু শিক্ষায়, বিশেষ করে নারী শিক্ষায় এটি হয়নি। সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয়নি। বরং আগের সরকারের কাজগুলো পরবর্তী সরকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। এক সরকার মেয়েদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করে। পরের সরকারগুলো ধাপে ধাপে স্নাতক পর্যন্ত করল। এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় যুক্ত হলো, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির ইতিবাচক ফল শুরুর দিকে না দেখা গেলেও এখন দৃশ্যমান।
ঢাকা পোস্ট : প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও উচ্চশিক্ষায় এখনও সমানভাবে এগোতে পারছে না। তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন...
রাশেদা কে চৌধুরী : হ্যাঁ এটা সত্য। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়েরা বেশি পড়ালেখা করলেও ওপরের শ্রেণিতে তা কমে যাচ্ছে। তবে আশার কথা, এখন উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশই মেয়ে। এখানে লক্ষণীয়, উচ্চবিত্ত বা সচ্ছল পরিবারের মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় বেশি আসছে। তার কারণ, উচ্চশিক্ষায় প্রধান সমস্যা আবাসিক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল-হোস্টেল বলতে কিছু নেই। সরকারিতে যা আছ তাও অপ্রতুল। আরেকটি যাতায়াত। তাই মেয়েদের জন্য আরও বেশি সুরক্ষিত আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য এখনও নিরাপদ হতে পারেনি। বিশেষ করে, মফস্বলে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়। সত্তর-আশির দশকেও এত ছিল না, যেটা ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে।
সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার লাগাম এখনও টেনে ধরা যায়নি, এজন্য অভিভাবকরা মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত থাকেন। মেয়েরা যখন বড় হয় তখন তারা তাকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হন।
উচ্চশিক্ষায় প্রধান সমস্যা আবাসিক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল-হোস্টেল বলতে কিছু নেই। সরকারিতে যা আছ তাও অপ্রতুল। আরেকটি যাতায়াত। তাই মেয়েদের জন্য আরও বেশি সুরক্ষিত আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা থাকা জরুরি
রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
ঢাকা পোস্ট : বিদ্যমান অনেক আইন থাকা সত্ত্বেও নারী নির্যাতন কমছে না, তার কারণ কী?
রাশেদা কে চৌধুরী : বাংলাদেশ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নানা ধরনের আইনকানুন আছে। বাল্যবিবাহ, শিশু-কিশোর নির্যাতন দমন আইন, ধর্ষণবিরোধী আইন, যেটায় এখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। আইনের অভাব নেই। কিন্তু বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলো বাবা-মা যখন দেখেন তখন তারা মেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পান।
ঢাকা পোস্ট : নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের সফলতা কতটুকু?
রাশেদা কে চৌধুরী : সব জায়গায় মেয়েদের নিরাপত্তা শুধু সরকার দেবে, এটা চিন্তা করা আসলে ভুল। ভুল যে তা প্রমাণিত হয়েছে। দেখেন, নোয়াখালীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার পর মাদরাসার অধ্যক্ষের পক্ষে মাঠে নেমেছিল তথাকথিত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা। অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধনও করেছিল তারা। প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর কেবল অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এখানে আমাদের তিনটি জায়গায় দুর্বলতা আছে। একটি সমাজের মেয়ে নির্যাতিত হয়ে উল্টো ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এটা কি সরকার করে? নাগরিক সমাজের দায়-দায়িত্ব নেই? এটাও তো দুর্বৃত্তদের সহায়তা করা।
ঢাকা পোস্ট : সামাজিক আন্দোলনের কথা বলছেন…
রাশেদা কে চৌধুরী : মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু সরকারের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। এখানে সমাজের বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেই দায়িত্ব কি তারা পালন করে? সমাজ কেন অবস্থান নেয় না। এমসি কলেজের ঘটনাটির কথা বলি, গৃহবধূকে নির্যাতনের পর প্রশাসন যখন অভিযুক্তদের গ্রেফতারে গেল, তখন পরিবারের লোকজনই তাদের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করল। পরিবার কি জানত না তারা কত বড় অপরাধ করেছে? তারা কেন থানায় নিয়ে যায়নি। আমি মনে করি, এখানে পরিবারের দায়-দায়িত্ব আছে।
সব জায়গায় মেয়েদের নিরাপত্তা শুধু সরকার দেবে, এটা চিন্তা করা আসলে ভুল। ভুল যে তা প্রমাণিত হয়েছে। দেখেন, নোয়াখালীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার পর মাদরাসার অধ্যক্ষের পক্ষে মাঠে নেমেছিল তথাকথিত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা। অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধনও করেছিল তারা। প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর কেবল অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছিল
রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
যে ছেলেটি নির্যাতন করেছে, সে পরিবারের দায়িত্ব হলো তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া। এটি আমরা পালন করি না। সবাইকে সচেতন হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভয়-সংশয়ে বা রাজনৈতিক চাপের কারণে অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করে। নারী যখন নির্যাতিত হয় তখন পরিবার, সমাজ থেকে বাধা আসে। এ বাধা অতিক্রম করে যখন সে থানায় যায়, তখন নানা অজুহাতে মামলা নেওয়া হয় না। মামলা নিলেও তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষী না থাকায় অনেক সময় আদালত অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ সুযোগে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এ পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে পারছি না।
ঢাকা পোস্ট : কারিগরি শিক্ষায় নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এর পেছনের কারণ বলবেন কী?
রাশেদা কে চৌধুরী : একদম সত্য। সাধারণ শিক্ষায় যেভাবে নারীদের বিপ্লব হয়েছে, কারিগরি শিক্ষায় ঠিক তার উল্টো চিত্র। এখানে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও দৃশ্যমান নয়। কারিগরিতে এখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী আসছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, মোট ২০ শতাংশ। কিন্তু এখানে নারীর অংশগ্রহণ নগণ্য। এর প্রধান কারণ প্রচারণার অভাব। এছাড়া নারীর আবাসিক ও যাতায়াতের অসুবিধা তো রয়েছেই।
ঢাকা পোস্ট : শিক্ষকতা পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ কতটুকু বেড়েছে?
রাশেদা কে চৌধুরী : খুবই ভালো প্রশ্ন। শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশায় প্রবেশের হারও বেড়েছে। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান অর্জন হলো শিক্ষকতা পেশা। প্রাথমিক কোটা অনেক আগে পূরণ হয়ে গেছে। মাধ্যমিকে হওয়ার পথে। যা খুবই ভালো লক্ষণ। নারী শিক্ষক হওয়ার কারণে অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
এমসি কলেজের ঘটনাটির কথা বলি, গৃহবধূকে নির্যাতনের পর প্রশাসন যখন অভিযুক্তদের গ্রেফতারে গেল, তখন পরিবারের লোকজনই তাদের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করল। পরিবার কি জানত না তারা কত বড় অপরাধ করেছে? তারা কেন থানায় নিয়ে যায়নি
রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
ঢাকা পোস্ট : চাকরিতে নারীর সমতায় আর কত দিন লাগতে পারে?
রাশেদা কে চৌধুরী : কত দিন লাগবে সেটা বলতে পারব না। কারণ যতদিন আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন সম্ভব নয়। একটা মেয়ে সংগ্রাম করে প্রতিযোগিতার বাজারে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম বাধাটা আসে পরিবার থেকে। তোমার খাগড়াছড়িতে বদলি হয়েছে, চাকরি ছেড়ে দাও। এই মানসিকতার পরিবর্তন না হলে কোনোদিন সমতা আনা সম্ভব হবে না। যতদিন শেয়ারিং করার মনোভাব না আসবে, ততদিন এ পরিবর্তনও সম্ভব নয়।
ঢাকা পোস্ট : কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই নারীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। প্রতিকারের উদ্যোগ সেভাবে চোখে পড়ার মতো নয়, আপনার অভিমত কী?
রাশেদা কে চৌধুরী : একটা মেয়ে যখন পরিবারের বাধা অতিক্রম করে ঘরে থেকে বের হয়ে চাকরিতে ঢুকে, তখন কোনো হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে পরিবার থেকে প্রথমেই বলা হয় সহ্য করে থাক। তারা বলে, চাকরি-বাকরি করতে গেলে একটু এদিক-ওদিক সহ্য করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, নারীর কর্মস্থল নিরাপদের জন্য কমিটি করতে হবে। কিন্তু আমাদের কয়টা প্রতিষ্ঠানে এসব কমিটি আছে, থাকলেও কতটুকু কার্যকর? এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : হতাশার মধ্যেও ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়েছে কি?
রাশেদা কে চৌধুরী : হ্যাঁ, শত হতাশার মধ্যেও খুশির খবর আছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নারী সেখানে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে নারীকর্মীর সংখ্যাও বেশি। সেজন্য সারাদেশে তিন লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার অধিকাংশই নারী। কৃষি, জুয়েলারি, মুরগির খামার থেকে শুরু করে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নারী প্রধান, সেখানে নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠে।
মেয়েরা এর প্রতিবাদ করে সোজা টানটান করে বলে দিল, আমার তো স্কুলে যেতে চাই, পড়ালেখা করতে চাই। ঝরে যেতে চাই না। কাউন্সিলিং আমাদের দরকার নেই, কাউন্সিলিং করতে হলে বখাটে ছেলেদের করেন অথবা বাবা-মাকে। তারা যেন আমাদের বিয়ে না দেয়
ঢাকা পোস্ট : করপোরেট, বেসরকারি চাকরি নারীবান্ধব না হওয়ার কারণ কী?
রাশেদা কে চৌধুরী : এর দুটি প্রধান কারণ। একটি হলো- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়েদের চাকরি দিতে চায় না। কারণ, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যটি হলো, মাতৃত্বকালীন ছুটি। সরকার যেহেতু মাতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করেছে, তাই এটা এড়ানো যাবে না। এজন্য মেয়েদের চাকরি দেওয়া হয় না
ঢাকা পোস্ট : তারপরও মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে…
রাশেদা কে চৌধুরী : যারা চাকরির বাজারে সামান্য সুযোগ পাচ্ছে, তারা সেটাকে কাজে লাগিয়ে উপরে উঠে আসছে। তারা কিন্তু প্রতিবাদীও। সুযোগ পেলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও মেয়েরা উঠে আসছে। তাদের যদি নিরাপত্তা সুরক্ষা দেওয়া যায়, তারা কিন্তু উন্নতি করতে পারবে।
ঢাকা পোস্ট : নারীদের নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা…
রাশেদা কে চৌধুরী : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়েদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমরা ঝরে যাও কেন? সেখানে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসা করেছিল, রাস্তায় ছেলেরা উত্ত্যক্ত করে কিনা, মেয়েরা বলেছিল করে। তখন প্রশাসন থেকে স্কুলের মেয়েদের সহায়তার জন্য কাউন্সিলিংয়ের কথা বলে। মেয়েরা এর প্রতিবাদ করে সোজা টানটান করে বলে দিল, আমার তো স্কুলে যেতে চাই, পড়ালেখা করতে চাই। ঝরে যেতে চাই না। কাউন্সিলিং আমাদের দরকার নেই, কাউন্সিলিং করতে হলে বখাটে ছেলেদের করেন অথবা বাবা-মাকে। তারা যেন আমাদের বিয়ে না দেয়। তাদের কথা আমাকে সেদিন অবাক করেছিল।
এনএম/এমএআর/এফআর/এমএমজে