প্রতারক চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার, ফ্রিজ-ওয়াশিং মেশিন উদ্ধার
রাজধানীর আদাবর থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ইলেকট্রনিক্স পণ্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মারুফ হোসেন সোহাগ (৪২), মহসিন (৫০) ও অসীম (৪৩) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক।
গত ১৩ অক্টোবর কসমো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আদাবর থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে এইচ এম আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মামলার বাদী মো. আব্দুর রাজ্জাক খান ‘কসমো ট্রান্সপোর্ট’ এজেন্সি নামে একটি পরিবহন ব্যবসা করেন এবং তিনি ওয়ালটনের তালিকাভুক্ত পরিবহন ঠিকাদার। গত ৯ অক্টোবর গাজীপুর জেলার চন্দ্রা ওয়ালটন ফ্যাক্টরি থেকে ‘কসমো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কাভার্ডভ্যানে (রেজি নং-ঢাকা মেট্রো-ন-১৩-৮২৪২) ৩০ পিস ওয়াশিং মেশিন নিয়ে রওয়ানা করেন। সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে সাতটার দিকে আদাবর থানাধীন শাহাবুদ্দিন প্লাজার সামনে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি গাড়িটির গতিরোধ করে।
তখন ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা গাড়িটিতে ওয়ালটনের মালামাল আছে কি না তা চালকের কাছে জানতে চায়। বলে, আপনার সঙ্গে মোবাইলে যার কথা হয়েছে তিনিই আমাদের মালামালগুলো নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। আমাদের গোডাউনে জায়গা না থাকায় এখানে দশটি মাল নামিয়ে রাখতে বলেছে। তখন গাড়ির চালক সরল মনে শাহাবুদ্দিন প্লাজার সামনে পাকা রাস্তার ওপর দশটি ওয়াশিং মেশিন চক্রের কাছে দিয়ে দেয় এবং বাকি মালামালগুলো গোডাউনের পেছনে আনলোড করবে বলে চালককে জানায়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাক ১৩ অক্টোবর আদাবর থানা একটি মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় ১৯ টি সিসি ফুটেজ দেখে চক্রের প্রধান হোসেন সোহাগকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্য মতে চক্রে আরও দুই সদস্য মহসিন ও অসীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, সবুজবাগ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে বিক্রয়করা দশটি ওয়াশিং মেশিন এবং তিনটি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
আজিমুল হক আরও জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই অপরাধ করে আসছে। চক্রের সদস্যরা ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স পণ্যকে টার্গেট করে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত চালকদের অনুসরণ করে। যে এলাকায় পণ্য সরবরাহর কথা সে এলাকায় চক্রের সদস্যরা আগে থেকে অবস্থান নেয়। পণ্যবাহী গাড়িটি নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছানোর আগেই চক্রের সদস্যরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে চালককে থামিয়ে নিজেদের ডিস্ট্রিবিউটর বা প্রতিষ্ঠানের লোক পরিচয় দিয়ে কিছু মালামাল নামিয়ে নেয় এবং বাকি মালামাল অন্য গোডাউনে নিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে শটকে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, আসামিরা গত এক বছরের ১৬টি অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। গত ১৬ তারিখে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকা থেকে একই কায়দায় ডিস্ট্রিবিউটর পরিচয় দিয়ে ওয়ালটনের তিনটি ফ্রিজ প্রতারণামূলকভাবে হাতিয়ে নেয়। এই ঘটনায় ফ্রিজের মালিক বাদী হয়ে মিরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল এবং আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নজরুল ইসলাম।
এসএএ/এসএম