মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হাতে আসতে পারে স্মার্ট লাইসেন্স
তিন বছর আগে লাইসেন্সের পরীক্ষা দিয়েছেন, পাস করা সত্ত্বেও পাচ্ছেন না লাইসেন্স। এমন হতভাগারা পেতে যাচ্ছেন সুখবর। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাদের হাতে আসতে পারে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। এক বছরের মধ্যে প্রায় ৯ লাখ আবেদনকারী লাইসেন্স পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে চার জেলায় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। জেলা চারটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘এক বছরের মধ্যেই জট খুলে যাবে। সে চেষ্টা আমাদের থাকবে।’
বিআরটিএ বলছে, এ প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণে আর কোনো বাধা থাকছে না। চার ধাপে সারাদেশে চলবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার কার্যক্রম। বিআরটিএ-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চেন্নাই ভিত্তিক মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে চারটি জেলার লাইসেন্সপ্রার্থীদের আঙুলের প্রিন্ট নেওয়া শুরু করেছে। সামনের সপ্তাহেই স্মার্ট লাইসেন্স বিতরণ শুরু হবে। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ৪ জেলায় শুরু হওয়া এই কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে দেশের অন্যান্য জেলায়।
মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি পাঁচ বছরের। চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিআরটিএ-এর চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘণ্টায় ছয় হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির লজিক ফোরাম নামে বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘আগে বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তি ছিল টাইগার আইটির। সেটি বাদ যাওয়ার পর দুবার টেন্ডার হয়। গত বছরের ২৯ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি মেশিনারিজ, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ার স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। রোববার থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় শুরু হয়েছে লাইসেন্সপ্রার্থীদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার কার্যক্রম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে যারা আবেদন করেছেন অর্থাৎ বেশি সময় অপেক্ষায় থাকা প্রত্যাশীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আগে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। আমরা চার ভাগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথমে এই চার জেলায় শুরু হলো। এরপর বিভাগীয় জেলা শহর, ঢাকা মেট্রো এবং সারাদেশে একযোগে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স।’
বিআরটিএ সূত্র জানায়, আট লাখের বেশি লাইসেন্সপ্রত্যাশী ইতোমধ্যে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। তবে সরবরাহ বন্ধ থাকায় অভিযোগ ও ভোগান্তি ছিল বিস্তর।
যদিও এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। সেবা চালুর পর চাপ আরও বেড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘসময় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রিন্টিং বন্ধ থাকায় ঝুলতে থাকা প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন প্রায় ৯ লাখ। যদিও এ সময়ে প্রায় দুই লাখ কাগুজে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়েছে।
বিআরটিএ-এর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রিন্টিং স্টেশন, নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি, অনলাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার, স্টোরেজ মেইনটেইন, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে এসএমএস পাঠানোসহ সব ধরনের সেবা দেবে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
জেইউ/এআর/এইচকে/এফআর