মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে আর দিন কয়েক বাকি। তার আগে দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন ‘মহালয়া’ ছিল রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর)। এই মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা ঘটছে। দুর্গাপূজা শুরুর প্রাক্কালে শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুষ্ঠানই মহালয়া নামে পরিচিত।
দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন উপলক্ষে রোববার ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান। এরপর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বেলতলায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে মা দুর্গার আগমনী আয়োজন। এই সময়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ মন্দিরে মন্দিরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন করা হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হয়েছে তর্পণ। ভক্তরা আত্মীয়-পরিজন ও পূর্ব পুরুষের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেছেন।
পুরাণমতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এদিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের (দেবী) পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। ১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমণধ্বনি শুনতে পাবেন। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন হয়েছে। মহালয়ার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেল।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪২টি, যা গত বছরের চেয়ে ৭টি বেশি।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, করোনার কারণে গত দুই বছর অনেকেই সশরীরে মন্দিরে উপস্থিত হয়ে দুর্গাপূজায় অংশ নিতে পারেননি। এবার তাই ভক্তদের সমাগম বিগত দুই বছরের তুলনায় বাড়তে পারে।
দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে রোববার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহানগরসহ দেশের সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে সব জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। যেকোনো অপশক্তি এখানে এসে কোনো ধরণের বাধা তৈরি করবে, এটা আমাদের কাম্য নয়।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আমাদের বারবার সভা হয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তারা যথেষ্ট সচেতন। আশা করছি, সারাদেশে সুন্দর পরিবেশেই পূজা সম্পন্ন হবে। করোনার পর এই বছর আমরা ঝাঁকজমকপূর্ণ অবস্থা লক্ষ্য করছি। ধর্মীয়ভাবে মানুষের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। পূজা অর্চনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। তবে আনন্দ সর্বজনীন। সব ধর্মের মানুষ মন্দিরে এসে আনন্দ করুক, এটাই আমরা চাই।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দুর্গাপূজায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সশরীরে এখানে আসতেন। সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ফিরলে আশা রাখছি তিনি মন্দিরে আসবেন। আমরা রাষ্ট্রপতিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি দুজনই উপস্থিত থাকবেন।
মহালয়া অনুষ্ঠানেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসতে দেখা গেছে। ভক্তদের আশা করোনার কারণে বিগত দুই বছরের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এবার সবাই একসঙ্গে দেবীর আরাধনায় শামিল হতে পারবেন।
সাভার থেকে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা শিক্ষার্থী অগ্নিলা চক্রবর্তী। সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিন তিনি। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা তার। মহালয়া উপলক্ষে মন্দিরে এসে দেবীর কাছে তার প্রার্থনা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আনন্দে কাটুক, পরিবারের সদস্যরা সুস্থ থাকুক।
অগ্নিলা চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে আগের দুই বছর মন্দিরে আসতে পারিনি। এবার পরিবারকে নিয়ে এলাম, অনেক ভালো লাগছে। অনেক পরিচিতজন দেখে বেশি ভালো লাগছে। মন্দিরে এসে অঞ্জলী দিলাম। মায়ের জন্য প্রার্থনা করলাম।
তিনি বলেন, আমি এবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। মায়ের (দেবী) কাছে চেয়েছি যাতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা ভালো কাটে। নতুন বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে অনেক মজা করতে পারি, পরিবারের সবাই যাতে ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, সেটাই চেয়েছি। আগের বছর কিছু সমস্যা হয়েছিল। এবার চাইছি যেন সে ধরনের কোনো সমস্যা না হোক।
রাজধানীর হাতিরপুল থেকে স্বামীর সঙ্গে কোলে ছোট বাচ্চা নিয়ে মন্দিরে এসেছেন প্রীতি নন্দী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার জন্য বিগত দুই বছরে পূজা উদযাপন করতে পারিনি। এবার এলাম। আশা করি ধীরে ধীরে অন্য সবাইও আসবে। সবাই একসঙ্গে উদযাপন করব। আজ থেকে শুরু হয়েছে। দশমী পর্যন্ত আশা করছি ভালোই কাটবে।
মেনকা সাহা এসেছেন রায়েরবাজার থেকে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা দেখছি না। গত দুই বছর আনন্দ করতে পারিনি। আশা করছি, এবার অনেক আনন্দ করতে পারব। মন্দিরে এসে সবাইকে দেখেও খুব ভালো লাগছে।
এএজে/জেডএস