ব্যবসায় না পেরে নারী উদ্যোক্তার ভুয়া অশ্লীল ছবি ছড়ানোর হুমকি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে ২০১৭ সাল থেকে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন নারী উদ্যোক্তা তানিয়া আকতার (৩৪)। তিনি অনলাইনের পাশাপাশি শান্তিনগরের ইস্টার্ন প্লাস শপিং কমপ্লেক্সে একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন। দুই মাধ্যমে ভালোভাবেই ব্যবসা করে আসছিলেন। তবে তানিয়ার ব্যবসায়িক সফলতা মেনে নিতে পারছিলেন না একই মার্কেটের গোলাম মঞ্জু নামে আরেক কাপড় ব্যবসায়ী।
দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে তানিয়ার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল মঞ্জু। সব কৌশলে ব্যর্থ হয়ে তিনি সবশেষে বেছে নেন অসৎ উপায়। এডিট করে তানিয়ার নামে আপত্তিকর ছবি বানিয়ে তারই ব্যবসায়িক পেজের বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করতে থাকেন মঞ্জু। এতেই ক্ষান্ত হননি। ইস্টার্ন প্লাস থেকে দোকান সরিয়ে না নিলে এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠানোর হুমকি দেন তিনি।
এ অবস্থায় পুলিশের দ্বারস্থ হন তানিয়া। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে মঞ্জুসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, তানিয়ার দোকানের পাশেই গোলাম মঞ্জুর স্ত্রীর একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে। মঞ্জুর স্ত্রীও দোকানের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে নারীদের কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। তানিয়া ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে দোকানে ও পেজ থেকে ভালো ব্যবসা করছেন। এদিক থেকে পিছিয়ে ছিল মঞ্জুর স্ত্রীর দোকান। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তানিয়াকে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পনা করেন মঞ্জু।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তানিয়ার ফেসবুক পেজ থেকে তার দোকানের কাপড়ের প্রমোশনের জন্য করা লাইভকে বেছে নেয় মঞ্জু। পেজে লাইভ চলাকালে মঞ্জু ও তার সহযোগীরা ১০-১২টি ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে তানিয়ার দোকান এবং ব্যবসা নিয়ে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে কমেন্ট করতে থাকেন। কিন্তু এসব করেও তানিয়ার প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে না পারায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মঞ্জু।
সব শেষ মঞ্জু বেছে নেন তানিয়া ও তার স্বামীর বিষয়ে মিথ্যা অপ্রচারের কৌশল। এ অপ্রচারের কৌশল হিসেবে তানিয়ার ফেসবুক পেজের লাইভ চলাকালে ভুয়া আইডি দিয়ে এই নারী উদ্যোক্তা ও তার স্বামীর বিষয়ে মিথ্যা ও সম্মানহানিকর কমেন্ট করতে থাকেন মঞ্জু। এতেও ক্ষান্ত হননি। গোপনে তানিয়ার ছবি সংগ্রহ করে তা এডিট করে অশ্লীল ছবি বানান। পরে ওই নারী উদ্যোক্তার ফেসবুক পেজের বিভিন্ন পোস্টে ভুয়া আইডির মাধ্যমে এসব এডিটেড অশ্লীল ছবি দিয়ে কমেন্ট করেন মঞ্জু। এতেও ব্যবসা ঘুটিয়ে না নেওয়ায় এক ক্রেতার মাধ্যমে মঞ্জু তানিয়াকে হুমকি দেন— ব্যবসা বন্ধ না করলে এসব অশ্লীল ছবি তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও পাঠিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন: এমপি-পুলিশসহ তিন শতাধিক মানুষের হাজার কোটি টাকা হাওয়া
এ বিষয়ে তানিয়ার স্বামী মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে আমার স্ত্রী ও গোলাম মঞ্জুর স্ত্রীর কাপড়ের দোকান ইস্টার্ন প্লাস শপিং কমপ্লেক্সের একই ফ্লোরে। আমাদের দোকানের নাম ‘কালার হিল’, তাদের দোকানের নামে শোভা ফ্যাশন। দুই দোকানে একই ধরনের কাপড় বিক্রি হয়। তারা অনলাইনে ব্যবসা করে, আমরাও করি। কিন্তু আমাদের বিক্রি দেখে সবসময় ঈর্ষান্বিত থাকত শোভা ফ্যাশনের মালিক ও তার স্বামী। গোলাম মঞ্জু আমাদেরকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করারা জন্য নানা অপকৌশল করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
তিনি বলেন, মঞ্জু ও তার সহযোগীরা ১৫-১৭টি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে কালার হিলের ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করার জন্য আমাদের পেজের লাইভে এসে আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকে। এতেও কাজ না হলে আমার স্ত্রীর ছবি গোপনে সংগ্রহ করে এডিটের মধ্যমে অশ্লীল বানিয়ে কালার হিল পেজে কমেন্ট করে। এছাড়াও মঞ্জু হুমকি দিয়েছে, আমরা ব্যবসা বন্ধ না করলে এসব ছবি ছড়িয়ে দেবে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করি।
মামলার এজাহারে তানিয়া অভিযোগ করেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর কালার হিল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে গোলাম মঞ্জু ও তার সহযোগী আজিজুর রহমান নামের ভুয়া আইডি দিয়ে আমার ও আমার স্বামীসহ প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য আক্রমণাত্মক মিথ্যা তথ্য দিয়ে কমেন্ট করে। ভুয়া আইডিগুলো হলো— Barishaillar khetar Gatthi, Sharmin shila, Colour Hill, Monir sumon, Tonima khan, Fariha Jannat, Lucca Harun Back, M Er Emon Rahman, Tania Akter Sumon, Fariha Sumon, কাজের বেটি শেফালী, অদৃশ্য মায়া। এছাড়া গত ১৯ তারিখ আমার কিছু ছবি এডিট করে অশ্লীল বানিয়ে আমার পেজে কমেন্ট করে। সর্বশেষ মঞ্জু আমার দোকানের এক ক্রেতাকে বলে, আমি যদি দোকান সরিয়ে না যাই তাহলে এসব অশ্লীল ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেবে এবং আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেবে।
এ বিষয়ে তানিয়া আকতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিলে তিলে ব্যবসাটা দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু মঞ্জু ঈর্ষান্বিত হয়ে একদিকে যেমন আমার ব্যবসা নষ্ট করতে চাইছে তেমনি অশ্লীল ছবি বানিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে সবার কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইছে।
রামপুরা থানা সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুর এসব অপকর্মের কিছু প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তানিয়ার ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যেসব ভুয়া ফেসবুক আইডি মঞ্জু ব্যবহার করত তার মধ্যে ৩-৪টি পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত করতে পেরেছে।
তানিয়া আকতারের করা মামলাটির বিষয়ে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তানিয়া আকতার গত ১৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমাদের থানায় করেন। তারা অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে গতকাল (শুক্রবার) রাতে মামলা আকারে নথিভুক্ত হয়েছে। মামলার দুই আসামি গোলাম মঞ্জু ও আজিজুর রহমানসহ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তানিয়া আকতার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মঞ্জু নানা মিথ্যা অপপ্রচার ও অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে আসছিল।
এমএসি/এসএসএইচ