চট্টগ্রামের মানবিক পুলিশ শওকত বদলি, ইউনিট বিলুপ্ত
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আলোচিত কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনকে বদলি করা হয়েছে। ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যের কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক অফিস আদেশে শওকতকে বন্দর জোনে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকলে কথাবার্তায় আমাদের কিছুটা বিধি-নিষেধ আছে। বিভাগ বহির্ভূত কোনো কথাবার্তা বলার সুযোগ নেই আমাদের। এটা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিষয়টা কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায় আমরা তা দেখছি।’
অসহায় মানুষের জন্য করা সিএমপির ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ বন্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমদের সব পুলিশই মানবিক। আলাদা করে মানবিক ইউনিট রাখছি না। কারণ এখানে যেসব মেম্বার আছে বেশিরভাগই হাসপাতালের সদস্য। তারা তো এমনিতেই কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে কারণে মানবিক ইউনিট করা হয়েছিল, পরিস্থিতি তার থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন মানবিক কাজ করার জন্য সবাইকে দায়িত্ব দিয়েছি। সবাইকে বলেছি মানবিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে। আলাদা করে গ্রুপের প্রয়োজন নেই। সবাই তো অমানবিক না। সবাইকে মানবিক কাজ করতে বলা হয়েছে।’
দীর্ঘদিন নীরবে কাজ করার পর ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর নগর পুলিশের কল্যাণ সভায় কনস্টেবল শওকত রাস্তায় স্বজনহীন অসহায় মানসিক রোগীদের সেবার বিষয়টি সামনে আনেন। তার বক্তব্য শুনে তখনকার পুলিশ কমিশনার ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ চালু করেন।
জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় একটি মাহফিলে অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন শওকত। সেখানে তিনি বলেন, ‘যখন শুনবেন ভালো বক্তারা আসছে, তখন দৌড়ে ওয়াজ শুনতে চলে আসবেন। আপনি ভণ্ড মুসল্লি। ইসলামের কথা যদি ওনারা আপনাদের মধ্যে ঢুকাতে পারত, তাহলে আমার মতো নগণ্য মানুষ এই চেয়ারে বসতে পারত না। লোকজন সব অলি হয়ে যেত। আপনাদের আশেপাশে অনেক মানুষ আছে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। অথচ আপনারা বড় বড় বক্তা এনে ওয়াজ করাচ্ছেন। মনের কষ্ট থেকে এসব কথা বলছি।’
ভাসমান মানুষদের সেবায় এগিয়ে না এসে ওয়াজ শুনতে আসা শ্রোতাদের নিয়েও সমালোচনা করেন শওকত। তিনি আরো বলেন, ‘সারাদিন ওয়াজ শুনে লাভ নেই, সবাইকে মানবিক হতে হবে।’ সেখানে তিনি আরও কিছু বক্তব্য দেন যেগুলো নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক চলছে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাস্তায় স্বজনহীন কোনো মানুষ পড়ে থাকার খবর পেলেই ছুটে যেতেন এই ইউনিটের সদস্যরা। তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। ইউনিট গঠনের আগে থেকেই রাস্তায় স্বজনহীন অসহায় কিংবা মানসিক রোগী যাদের হাসপাতালে স্থান পেত না সেসব রোগীদের নিজেদের টাকায় সেবা দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কিছু সদস্য। আর তাদের নেতৃত্বে ছিলেন কনস্টেবল শওকত।
কেএম/ওএফ