সেতুর অপেক্ষায় ‘আশায় বসতি’ লাখো কৃষকের
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষি ও কৃষকের জন্য দারুণ সুখবর হয়ে আসছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে ওই অঞ্চলের কৃষকের। কৃষক তার কষ্টে উপার্জিত সবজি ও ফসল দ্রুত আনতে পারবেন রাজধানীতে; পাবেন উপযুক্ত মূল্য।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে একদিকে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগসূত্র তৈরি হবে, ঠিক তেমনি এ সেতু ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে সেতু চালু হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে ওই অঞ্চলের কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট যেমন ঘুচবে সেই সঙ্গে পাল্টে যাবে তাদের অর্থনৈতিক জীবন।
আরও পড়ুন : বাঁচবে সময়, বাড়বে কর্মসংস্থান; দক্ষিণে পালাবদলের সুর
এতদিন এ অঞ্চলের কৃষক তার সবজি ঢাকায় সরাসরি খুব একটা পাঠাতে পারতেন না। মধ্যস্বত্বভোগী আর ফড়িয়ারা তাদের উৎপাদিত ফসল কম মূল্যে কিনে নিত। এর কারণ ছিল ঢাকায় পণ্য পৌঁছানোর দীর্ঘ ধকল আর ফেরি ঘাটের ভোগান্তি। সেতু হওয়ার ফলে এখন দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষক চাইলে সরাসরি ঢাকায় এনে তার সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
শরীয়তপুরের কৃষক ভাসান ফকিরের সঙ্গে কথা হয় এ নিয়ে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নানা ধরনের সবজি ও কৃষিপণ্য উৎপাদন করি। কিন্তু আমরা তার সঠিক মূল্য পাই না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় দিনের পর দিন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
তিনি বলেন, সেতু চালু হলে এখান থেকে সরাসরি রাজধানীতে সবজি পৌঁছে দেওয়া যাবে। ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ১০-১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। ঘাটে অনেক সময় সবজি পচে যায়, নষ্ট হয়। বেশির ভাগ সময় লাভ হয় না। ভালো দাম পাই না। সেতু চালু হলে ভালো দাম পাব— এটা আমরা আশা করছি।
এতদিন এ অঞ্চলের কৃষক তার সবজি ঢাকায় সরাসরি খুব একটা পাঠাতে পারতেন না। মধ্যস্বত্বভোগী আর ফড়িয়ারা তাদের উৎপাদিত ফসল কম মূল্যে কিনে নিত। এর কারণ ছিল ঢাকায় পণ্য পৌঁছানোর দীর্ঘ ধকল আর ফেরি ঘাটের ভোগান্তি। সেতু হওয়ার ফলে এখন দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষক চাইলে সরাসরি ঢাকায় এনে তার সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
লাউ, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি করতে আসা কৃষক মো. আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব পণ্যের ভালো দাম পাই না। পদ্মা সেতু চালু হইলে, মাল চালান হইলে দাম বেশি পামু। এখন আমাদের খরচই ওঠে না।
স্থানীয় একটি আড়তে বেগুন, শসা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি করতে আসা কৃষক কমল বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এসব পণ্যের ভালো দাম পাই না। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর ভালো দাম পাব।
কথা হয় আরেক কৃষক কামাল শেখের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়। আমাদের কাছ থেকে পাইকাররা শাকসবজি কিনে নিয়ে ঢাকা শহরে বিক্রি করেন। ঘাট পার হতেই তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ঢাকায় পৌঁছানোর আগে এসব সবজি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। তাতে পাইকাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।
তিনি আরও বলেন, আমরা ধুন্দল পাঁচ টাকা আর চিচিঙ্গা সাত টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। অথচ এ ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ঢাকায় ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা নিজেরাই তখন সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাব। প্রতিদিন সবজি বিক্রি করে আবার ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসতে পারব।
কৃষক আলমাস হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখানে বেগুন, লাউ, শসা ও কলা নিয়ে এসেছি। যোগাযোগের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা এখন ভালো দাম পাই না। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আমাদের এখানে এসে এসব পণ্য কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতে পারবে। তাদের খরচ কমে আসবে আর আমরাও বেশি দাম পাব। কৃষক যেমন লাভবান হবে তেমনি পাইকাররাও লাভবান হবে।
পদ্মা সেতু হলে আপনার এলাকার কৃষকরা কেমন সুবিধা পাবেন— জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোবারাক আলী শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাজিরা এলাকাটা খুবই উর্বর। বর্ষার সময় জমিতে পলিমাটি পড়ে। উর্বর পলিতে প্রচুর শাকসবজির ফলন হয়। কিন্তু প্রায়ই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন না। অনেক সময় তারা শাকসবজি গরু-ছাগলকে খাওয়াতে বাধ্য হন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, শসা, পেঁয়াজ, রসুন ভালো উৎপাদিত হয়। যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না কৃষকরাও ভালো দাম পেতেন না। পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু জাজিরা এলাকাই উন্নত হবে না, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময় মতো রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবেন।
এসএএ/জেএস