বৈঠকে বসছে ঢাকা-ওয়াশিংটন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে গুরুত্ব
দুই বছর বিরতির পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোর দিতে চায় ঢাকা। অন্যদিকে ওয়াশিংটন মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আইপিএস) গুরত্ব দেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক স্থগিত ছিল। এবারের অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোববার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড নেতৃত্ব দেবেন।
বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে কোন বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এনগেজমেন্ট বাড়াতে চাই। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, ব্যবসা-বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করা কিংবা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাদের আরও সম্পৃক্ততা চাই আমরা। তাছাড়া র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে করতে চাই। এটা নিয়ে তাদের সহযোগিতা চাইবে ঢাকা।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বাড়াতে চাই। তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চাই। তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ চাই। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, জিএসপির পুনর্বহাল বা সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি তুলব।
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা হবে কিনা- জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, র্যাবের ওপর আমাদের জনগণের আস্থা রয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলছি, তোমরা সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই কর। আমরা চাই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক তারা, এটা তাদের বলব। আর ইউক্রেন ইস্যু কূটনৈতিকভাবে সমাধান হোক, সেটাই আমাদের চাওয়া। আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই, সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমরা অবশ্যই গুরত্ব দেব। যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে, যেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, কোভিড সহযোগিতা, জলবায়ু ইস্যু, জিএসপি পুনর্বহাল, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সফর বিনিময়, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয় থাকবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ঢাকার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন চাইবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল তথা আইপিএসে ঢাকা যেন দেশটির সঙ্গে কাজ করে। এছাড়া মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, শ্রম অধিকার পরিস্থিতি, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবে দেশটি।
এদিকে, ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপে অংশ নিতে তিন দিনের সফরে এরইমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন তাকে স্বাগত জানান।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতার উপর জোর দিতে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড ১৯ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করবেন। সফরে প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরের নীতিবিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি আমান্ডা ডরি থাকছেন।
আন্ডার সেক্রেটারি ন্যুল্যান্ড বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় অংশীদারিত্ব সংলাপে অংশ নেবেন। আর নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সফরে আন্ডার সেক্রেটারি ও তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধি দল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করতে এবং সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকা-ওয়াশিংটনের অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপে নেতৃত্ব দেওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ন্যুল্যান্ড বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সোমবার ন্যুল্যান্ড ঢাকা থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা করবেন।
এনআই/ওএফ