তোমায় খুব মনে পড়ে মা
আমি আমার মাকে একদম ভালোবাসি না! কেন জানেন? মা আমার থেকে ক্যান্সারকে বেশি আপন করে নিয়েছিল তার শরীরে। তাইতো তীব্র যন্ত্রণা, সুস্থ শরীরের জন্য ক্ষতিকারক আলোকরশ্মি, মুঠো মুঠো ওষুধ, এসবের কাছ থেকে আমাকে অনেক দূরে রেখেছিল। কারণ দরজায় বড় বড় করে লাল দাগ দিয়ে লেখা ছিল শিশুদের এখানে আসা নিষেধ। মায়ের যন্ত্রণাগুলো যেন আমি নিজ চোখে না দেখি তাই এই ব্যবস্থা!
মা, তোমার স্বার্থহীন ভালোবাসা এখন আর কারো কাছে খুঁজে পাই না। তোমার শেষ দিনগুলোর স্মৃতি আজও ভুলতে পারছি না। শেষ তোমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না, শেষ খাইয়ে দেওয়া, তোমার চরণে চুমু দেওয়া। শেষ যখন তোমার নিথর দেহটা পড়েছিল শুধু আমি তার যত্ন করেছি মা।
তোমার শরীরের গন্ধ খুব অনুভব করি, তোমার ভাঁজ করা শাড়িগুলো আজও ঘ্রাণ নেই আমি। তুমি জানো তোমার রেখে যাওয়া কানের দুল, চুরি এগুলো এখন আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।
তোমার রান্নাঘরে গেলে হাত পুড়িয়ে ফেলি, শুধু এটাই ঠিক হলো না বয়সের দোষে। এইটুকু বয়সে আমাকে রেখে চলে গিয়েছো, তোমার মেয়ে তো রান্নাঘরে দুর্ঘটনা ঘটাবেই! আম্মু আম্মু আম্মু, গত দু’বছর হলো ডাকিনা। আমি মনে হয় ভুলতে বসেছি এটা ডাকটা। গভীর রাতে রেকর্ডারটা কাছে নিয়ে আম্মু ডাকটা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলি, আর বারবার শুনি সেই রেকর্ড, যেন ভুলে না যাই। বুকটা হাহাকার করে যখন কষ্টের চরম সীমানায় থাকি, হতাশা আমায় জড়িয়ে ধরে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই আম্মু ডাকটা শুনি কিন্তু বলতে পারিনা মুখ ফুটে। যেন সবাই আমাকে প্রশ্ন করে তোমার মা কোথায়?
আমি কখনোই স্বীকার করি না যে তুমি আমার সঙ্গে নেই। আমি বলি আমার মা আছে। বড্ড মিথ্যে বলি, মা তোমায় নিয়ে। আমার এই ছোট বয়স কখনোই তোমার মৃত্যু মেনে নেবে না। তোমার স্মৃতিতে ডুবে থাকতে চাই মা, তোমার সঙ্গে তো আমার নাড়ির টান আছে। একটা ছোট স্মৃতি বলে শেষ করি আজ মায়ের কথা।
আম্মুর যখন ক্যান্সারে সব চুল মাথা থেকে ঝরে পড়ছিল, এটা মায়ের জন্য সহ্য করা আরো কষ্ট করছিল। মা তখন আমার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলতো, মা, তোর চুলগুলো কোমর পর্যন্ত বড় করবি। আর তেল মেখে চুলের যত্ন নিবি তুই তো চুলের যত্ন নিস না।
মা তুমি জানো, তোমার এই ছোট চুলের মেয়েটার চুল আজ কোমরে। আমি কিন্তু চুলের যত্ন নেই কারণ তুমি তা বলেছিলে। পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, তোমায় খুব মনে পড়ে মা।
অনার্স প্রথম বর্ষ, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।