প্রতিটি দিনই ‘মা দিবস’ হোক
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শব্দের দীর্ঘতম অনুভূতির নাম হচ্ছে ‘মা’। আমাদের কানে ‘মা’ শব্দের কম্পন আন্দোলিত হয় ঠিকই তবে এর মর্মার্থ দোল খেতে থাকে আমাদের হৃদয়ে। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় কোন একটি শব্দ শোনার পর ০.১০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্রোতার মস্তিষ্কে এর অনুভূতি থেকে যায়। তবে মা শব্দ শোনার অনুভূতি কোনো সাংখ্যিক মানের মধ্যেই কি সীমাবদ্ধ?
প্রতিউত্তরে যদি বলতেই হয় তবে বলতে হবে মা হলেন- সৃষ্টিকর্তার এমন এক অলৌকিক উপহার যিনি সাধারণত ৯ মাস (৭-১০) দিন গর্ভে; ৩ বছর কোলে এবং আমৃত্যু নিজের হৃদয়ে আগলে রাখেন সন্তানকে।
মাকে সংজ্ঞায়িত করার মত সাধ্য আমাদের নেই। মা সব ত্যাগ-তিতিক্ষা উপেক্ষা করে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে হয়তো হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেন কিংবা বেঁচে থাকেন আমাদের মাঝে। ধরণীতে আমরা ভূমিষ্ঠ হলে সর্বপ্রথম মায়ের দৃষ্টি কাড়ে প্রসব হওয়া সন্তানের প্রতি। এই দৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে থাকে মমতা, ভালোবাসা, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার প্রাপ্তি।
সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় মা যে ব্যথা পেতেন তিনি যেন ঈশ্বর হতে প্রাপ্ত স্বর্গীয় ব্যথা অনুভব করেন। তাইতো আমরা বীরপুরুষের ন্যায় বজ্রকন্ঠে বলি- আমরা এমন একজন বীর জননীর সন্তান যিনি আমাদেরকে জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুকে জয় করেছেন। তিনি একজন বীর জননী হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন দার্শনিকও বটে। যিনি কিনা সন্তানের মুখশ্রী দেখা মাত্র-ই বলে দিতে পারেন সন্তানের ভালো-মন্দের গল্প। মা হলেন শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শ্রেষ্ঠ দায়িত্ববান, শ্রেষ্ঠ জ্ঞানদাতা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে- মায়ের দুগ্ধ। এইজন্যই বিখ্যাত শিল্পী
মা দিবস মানে হচ্ছে মাকে ভালোবাসা, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, প্রাপ্যতা, পুণ্য সবকিছুই তার পায়ে অর্পণ করা। এ দিনে কেক কেটে উদযাপন করে পুরো ধরনীর সন্তানেরা। মেতে উঠে পৃথিবীর সকল মায়েরা তাদের সন্তানের আবেগময় ভালোবাসা দেখে। মায়েরা হয়তো ভাবে সেদিন- মাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বা উপলক্ষের প্রয়োজন আছে কি? মাকে তো সব সময় ভালোবাসা যায়। মায়ের এই হৃদয় নিঙড়ানো ব্যথার গল্প শোনা যায় এদেশের বৃদ্ধাশ্রমগুলো থেকে।
বর্তমানে অনেকে মা দিবসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মা তোমাকে ভালোবাসি’ লিখলেও মা-কে জড়িয়ে ধরে একথা বলতে পারে না। অনেকে মায়ের কোনো খোঁজও নেয় না, মায়ের খাবার-ওষুধের খবরটুকুও নেয় না। ভুলে যায় প্রসবকালীন মায়ের যন্ত্রণার কথা, সামান্য বয়স হলেই বৃদ্ধ মা-কে ছেড়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। এই প্রাপ্তিই কি ছিলো সেই মায়ের? এই স্বপ্নই কি তিনি দেখেছিলেন সন্তান গর্ভে ধারণ করে?
শুধু একদিন দিবস পালন না করে মাকে ভালোবাসুন, মায়ের যত্ন নিন, মাকে সম্মান দেখান, মায়ের প্রতি বিনম্র আচরন করুন। শুধু একদিন মা দিবস নয় বরং আপনার প্রতিদিন হোক মায়ের জন্য।
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।