বাংলাদেশের ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি পাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
সর্বশেষ ক্ষীরসাপাতি আমের পর এবার রসালো, আঁশবিহীন, আকারে বিশাল ফজলি আম এবং কালো ডোরা কাটা বাগদা চিংড়ি খুব শীঘ্রই জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর বা জি-আই সনদ পেতে যাচ্ছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
সরকারের পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে গেজেট প্রকাশ করা হয়ে গেছে; পরবর্তী দিন পনেরোর মধ্যে সনদ দেবার কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী স্বীকৃতির জন্য আবেদন আসার পরে এই দুই কৃষি পণ্যের ভৌগলিক নির্দেশক যাচাই করা হয়েছে, দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে।
এই পণ্যের নির্দেশক নিয়ে এখনো কেউ আপত্তি করেনি। জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে এটি নিজেদের বলে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ফজলি আমের জিআই সনদের আবেদন করেছিল ফল উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র। আর বাগদা চিংড়ির জন্য আবেদন করে মৎস্য অধিদপ্তর।
যে কারণে এই দুটি পণ্যে বাংলাদেশের স্বীকৃতি
ফজলি মূলত বাজারে আসে প্রতিবছর আমের মৌসুমের শেষের দিকে। পাশের দেশ ভারতের এই আম উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে, লবণাক্ত পানির চিংড়ি বাগদা পাওয়া যায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশে।
এই কৃষি পণ্য দুটি কেন বাংলাদেশের জিআই সনদ কেন পাবে সেটি ব্যাখ্যা করে মোঃ আবদুস সাত্তার বলছেন, ‘যে পণ্য একটি অঞ্চলের ঐতিহ্যের অংশ সেটির ক্ষেত্রে এই সনদ দেয়া হয়। আবহাওয়া, মাটি, পানি ও ভৌগলিক গঠনের ওপর যেকোনো কৃষি পণ্যের বৈশিষ্ট্য, ঘ্রাণ ও স্বাদ নির্ভর করে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সেটা পাওয়া যায়।’
‘যেমন এশিয়ার বেশ কিছু দেশে 'ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প' বা বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় সেটার বৈশিষ্ট্য অন্য কোনটির সঙ্গে মিলবে না। অন্য কোথাও এই বাগদার চাষ হলেও সেটার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাংলাদেশে উৎপাদিত বাগদার সঙ্গে মিলবে না।"
জি-আই সনদ পেলে যে লাভ
বাংলাদেশের মোট নয়টি পণ্য এপর্যন্ত জিআই সনদ পেয়েছে। এসব পণ্য হলো- ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাতি আম, দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও বাংলাদেশি কালিজিরা চাল, জামদানি, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি।
বাগদা চিংড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী প্রাণী। বাংলাদেশে ৮০'র দশক থেকে এটির বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে, রফতানি করা হচ্ছে বিদেশে। তবে সম্প্রতি এটির রফতানি কিছুটা পড়ে গেছে।
আবদুস সাত্তার বলছেন, ‘আমরা দেখেছি যে জিআই সনদ পাওয়ার পর বিদেশের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। জিআই ট্যাগ ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করছে। কোনো পণ্যের জিআই সনদ না থাকলে তার মূল্য কম হয়। ক্রেতারা সেটিকে ব্র্যান্ডেড বলে মনে করে না।"
তিনি বলেন, ‘বিসিকের তথ্য অনুযায়ী জামদানি জিআই সনদ পাওয়ার পর রপ্তানি এবং এর মূল্য দুটোই বেড়েছে।’
আব্দুস সাত্তার আরও জানান, জিআই সনদ পেলে বাংলাদেশ পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাবে। অন্য কোন দেশ আর সেগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না।
এসএমডব্লিউ