মিয়ানমারে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় সায় নেই ভারত-বাংলাদেশের
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের কারণে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (১৮ জুন) সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে বিশ্বের ১১৯টি দেশের সমর্থনে প্রস্তাবটি পাস হয়।
বিশ্বের ১১৯টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিলেও একমাত্র দেশ হিসেবে বিপক্ষে ভোট দিয়েছে কেবল বেলারুশ। এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের যোগানদাতা চীন ও রাশিয়া ছাড়াও প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ভারত ও বাংলাদেশসহ মোট ৩৬টি দেশ।
রাশিয়া ও চীন ‘পরিপূর্ণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না হলেও’ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত অস্ত্রের যোগান বন্ধে ভারত ও বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশের ভোটদান থেকে বিরত থাকা অনেককেই বিস্মিত করেছে। এছাড়া মিয়ানমারের অন্য আরও প্রতিবেশি দেশ ভুটান, লাওস, নেপাল এবং থাইল্যান্ডও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। এছাড়া বিস্ময়করভাবে ভোটের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেয়নি মিয়ানমারও।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করায় জান্তা সরকারের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পাস করা খসড়া প্রস্তাবে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সহিংসতা বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে প্রস্তাবটিতে।
শনিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘের এই প্রস্তাবটি মিয়ানমার মানতে আইনত বাধ্য না হলেও রাজনৈতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য ভারত বলছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া ওই খসড়া প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি নয়াদিল্লির মনোভাব প্রতিফলিত এবং এই কারণে ভারত এই প্রস্তাবে বিশ্বাস করে না। দেশটির অভিযোগ, প্রস্তাবটি অতি-দ্রুততার সঙ্গে নাকি টেবিলে তোলা হয়েছে।
নয়াদিল্লির দাবি, প্রতিবেশি দেশ হিসেবে মিয়ানমার ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লির কিছু বক্তব্য জাতিসংঘের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই বৈশ্বিক এই সংস্থাটির উচিত আরও আলোচনা ও গঠনমূলক পথে মিয়ানমার ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর উচিত সাধারণ মানুষের মতামতকে সম্মান করা। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের ফল মেনে জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করা উচিত। সামরিক শাসন থেকে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পার্লামেন্টকে কাজ করতে দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দিয়ে সব জাতীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি সামরিক বাহিনীকেও কাজ করতে হবে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই’কে বলেন, ‘প্রস্তাবটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ওঠানো হয়েছে। মিয়ানমারের কোনো প্রতিবেশি দেশ এবং আঞ্চলিক কোনো দেশের সঙ্গে প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অলোচনাই করা হয়নি।’
ভারতকে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে তিরুমূর্তি আরও বলেন, ‘দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মারাত্মক প্রভাব এবং মিয়ানমারের সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশেও তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার বিষয়ে নয়াদিল্লি জ্ঞাত রয়েছে।’
ভারত সবসময়ই শান্তিপূর্ণভাবে এ ধরনের সকল সংকট সমাধানের দাবি জানিয়ে এসেছে।
অবশ্য মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্র্যানার বার্গেনার সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা করার আমাদের দ্রুত সেটা করতে হবে। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সম্ভাবনা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে।’
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।
পরে ‘নির্বাচনে অনিয়মের’ অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয় সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৬০ গণতন্ত্রকামীর প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্র: পিটিআই
টিএম