বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বাণিজ্যে বইছে সুবাতাস, বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে। আর এতে উভয় দেশের বাণিজ্যে বইছে সুবাতাস। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার এই বাণিজ্যে উভয় দেশেরই আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে।
অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপেও পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ৯টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ঘাটতি চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৭.৫৫ শতাংশ বেড়ে ৪.৪৭৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৩.০৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা এর পেছনে চীন ও ভারত থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আমদানিকে দায়ী করেছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীন থেকে আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে একই দেশে রপ্তানিও কমেছে পাকিস্তানের।
দ্য ডন বলছে, গত বছরের তুলনায় আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তানের পণ্য রপ্তানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মূলত এই তিন দেশে পাকিস্তানের রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি চীনে দেশটির রপ্তানি হ্রাসের প্রভাবকে অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছে বা ভারসাম্যপূর্ণ করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় পণ্য রপ্তানি চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখেছে। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সংকলিত তথ্য অনুসারে, এখনও অন্যান্য দেশে বিশেষ করে চীনে পাকিস্তানি পণ্য রপ্তানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে।
আফগানিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইরান, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ — এই ৯টি দেশে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের রপ্তানির মোট পরিমাণ ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ১.৯৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরে ছিল ১.৮৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এর বিপরীতে এসব দেশ থেকে পাকিস্তানে পণ্য আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৬ দশমিক ৪৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশে পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মূলত জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ ৩১৩.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪১.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানির পরিমাণ ৩০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৬.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকায় হাসিনা সরকারের পতনের পর বাণিজ্যের এই বৃদ্ধি ঘটেছে বলেও জানিয়েছে দ্য ডন।
পাকিস্তানের এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চীন থেকে পাকিস্তানে পণ্য আমদানি প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী এই দেশটিতে পাকিস্তানের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভারত থেকে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি ৬ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে পাকিস্তান থেকে দেশটিতে রপ্তানি গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে আরেক প্রতিবেশী আফগানিস্তানে পাকিস্তান থেকে রপ্তানি ৭৩.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০৬.৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে আমদানি করা হয়েছে ৮৫ লাখেরও বেশি মার্কিন ডলারের পণ্য।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে ইরানের সাথে পাকিস্তানের বেশিরভাগ বাণিজ্য পরিচালিত হয় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে। আর তাই দেশটির সঙ্গে ইসলামাবাদের বাণিজ্যের কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের সীমান্ত দিয়ে ইরানি পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং এলপিজির ক্রমবর্ধমান চোরাচালানের মাধ্যমে এই বাণিজ্য হয়ে থাকে।
এছাড়া পাকিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৫.৩ শতাংশ বেড়েছে। নিজেদের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পর শ্রীলঙ্কায় দেশটির রপ্তানিতে এই উল্লম্ফন হয়েছে। আর মালদ্বীপে একই সময়ে পাকিস্তানের রপ্তানি প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পাকিস্তান ও ভুটানের মধ্যে কোনো বাণিজ্য পরিলক্ষিত হয়নি বলে জানিয়ে দ্য ডন।
টিএম