হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেপ্তার ঘিরে ভারত-বাংলাদেশের বাগযুদ্ধ
এক হিন্দু সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে নতুন করে বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ-ভিত্তিক একটি হিন্দু সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। হিন্দু এই নেতার গ্রেপ্তার ঘিরে তার সমর্থকদের হামলায় এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ‘‘গভীর উদ্বেগ’’ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারত। বিবৃতিতে হিন্দু অন্যান্য সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। এতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর থেকে কিছু মহল তা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
ঐতিহ্যগতভাবে উষ্ণ সম্পর্ক ভাগাভাগি করে নেওয়া দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে—দেশব্যাপী অস্থিরতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সপ্তাহব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভের জেরে আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর ভাটা পড়েছে। তখন থেকে ভারতেই রয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারতে তার অবস্থান ঘিরে উভয় দেশের মাঝে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন
হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে, ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা—বিশেষ করে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য কৌশলগত অংশীদার ও মিত্র ছিল বাংলাদেশ। ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিন্দুরা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু।
গত সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অক্টোবরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সংগঠন ইসকন গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ‘‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সোচ্চার কর্মী’’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের একটি আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করেন। সেখানকার পুলিশ বলেছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার শত শত সমর্থক পুলিশের ভ্যান ঘিরে ফেললে সহিংসতার শুরু হয়। পরে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মতে, হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ২০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত ও সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এসএস