খেপুপাড়া থেকে এখন কত দূরে রেমাল, কেমন গতিতে আছড়ে পড়বে?
বঙ্গোপসাগরে ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। গভীর নিম্নচাপটি শনিবার রাতে শক্তি বৃদ্ধি করে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। এরপর এটি এখন আরও শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে এবং রাতেই এটি ধীরে ধীরে উপকূলের আরও কাছে এগিয়ে এসেছে।
এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এটি এখন বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
ভারতের অবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে রোববার (২৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ওপর থাকা গভীর নিম্নচাপটি শনিবার রাতে শক্তি বৃদ্ধি করে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ক্রমে এটি আরও শক্তি বৃদ্ধি করতে চলেছে এবং রোববার সকালে পরিণত হবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
এরপর রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝে স্থলভাগে।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে সোমবার এবং মঙ্গলবারের জন্য রেড অ্যালার্ট বা লাল সতর্কতা জারি করেছে সেখানকার আবহাওয়া অফিস।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) রোববার ভোর ৫টা ৫২ মিনিটে দেওয়া আপডেটে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের প্রায় ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
এটি আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে একটি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে এবং মধ্যরাতের দিকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের তৎসংলগ্ন উপকূলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এদিকে রোববার সকালে কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ তৈরি হওয়ার পর গত ছয় ঘণ্টায় তা ধীরে ধীরে স্থলভাগের দিকে এগিয়েছে। এই সময়ে তার গতি ছিল ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার। বর্তমানে এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর বঙ্গোপসাগরেই অবস্থান করছে। সেখানেই আগামী ছয় ঘণ্টায় ‘প্রবল’ আকার নিতে চলেছে ‘রেমাল’।
আলিপুরও জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ‘রেমাল’-এর অবস্থান বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। এছাড়া দিঘা থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং ক্যানিং থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সাগরে শক্তি বাড়িয়ে ‘প্রবল’ আকার নেওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ রোববার মধ্যরাতে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে চলেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে এই ঘূর্ণিঘড় আছড়ে পড়বে।
সে সময়ে রেমালের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। অবশ্য কখনও দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছতে পারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্তও।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই জেলাগুলোতে রোববার এবং সোমবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সোমবার প্রবল বৃষ্টি হতে পারে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদেও।
আরও পড়ুন
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। কলকাতায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরেও বাতাসের বেগ একই থাকবে।
উত্তরবঙ্গে সোমবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে মঙ্গলবার বৃষ্টি বাড়বে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাগুলোতে মঙ্গলবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানেও জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রও উত্তাল হবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার এবং সোমবার সমুদ্রের ওপর ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। এর ফলে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ঢেউয়ের উচ্চতাও হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
আর এই কারণে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
টিএম