যে কারণে বাংলাদেশের ত্রাণ নিচ্ছে না পাকিস্তান
বর্ষাজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও তার জেরে পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ গলে যাওয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী কোনোভাবেই গ্রহণ করা সম্ভব নয় ইসলামাবাদের পক্ষে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া ও বাংলাদেশের উদ্ভব এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলার কারণেই এই ত্রাণ নেওয়া সম্ভব নয় বলে আমিরাতভিত্তিক ইংরেজী দৈনিক নেশনকে জানিয়েছেন দেশটির একজন জেষ্ঠ্য রাজনীতিবিদ।
মঙ্গলবার দ্য নেশনকে তিনি বলেন বলেন, ‘আমরা কীভাবে তাদের ত্রাণ সহায়তা নিতে পারি, বলুন? জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা কী বলে বেড়ায় তা কি আপনারা জানেন না? তারা আমাদের গালাগালি করে এবং দাবি করে—১৯৭১ সালে আমাদের পরাজিত করেছিল।’
পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশটির অধিকাংশ এলাকায় যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা ভেঙে দিয়েছে গত ৪০ বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও তার ফলে দেশটির উত্তরাঞ্চলের পর্বতগুলোর হিমবাহ গলে যাওয়ায় গত জুন-জুলাই থেকে নজিরবিহীন বন্যা শুরু হয় পাকিস্তানে।
দেশটির এক তৃতীয়াংশ এলাকা এখনও বন্যার পানির নিচে আছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ইতোমধ্যে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং আশ্রয়,সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কাটাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। পাকিস্তানের ৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মনুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং বন্যায় ইতোমধ্যে কয়েক শ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল পাকিস্তানের সরকারকে । বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এসব সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ টন বিস্কুট, ১০ টন ড্রাই কেক, ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৫০ হাজার প্যাকেট ওরাল স্যালাইন, ৫ হাজার মশারি, ২ হাজার কম্বল ও ২ হাজার তাঁবু।
পাকিস্তানের সরকার এই ত্রাণ গ্রহণ করতে অপারগতা জানায়। কিন্তু কী কারণে এই অপারগতা— সে সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায়নি।
দ্য নেশনকে ওই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফোরামে যেভাবে তারা (বাংলাদেশ) আমাদেরকে, আমাদের সেনাবাহিনীর উদ্দেশে নেতিবাচক মন্তব্য করে, তাতে এখন তাদের থেকে ত্রাণ নিলে আমাদের মান-সম্মান বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। পাকিস্তানের ভৌগলিক অখণ্ডতা আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এসএমডব্লিউ