বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে পারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত: ব্লুমবার্গ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে খনিজ তেল, কয়লার মতো জ্বালানি গ্যাসের দামও প্রতিদিনই বাড়ছে বিশ্বজুড়ে; আর এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন যে বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে তার প্রধান কারণ বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। বাজারের পরিস্থিত যদি অপরিবর্তিত থাকে—সেক্ষেত্রে আগামী তিন বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই ভোগান্তি বাংলাদেশকে সহ্য করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
দেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ তার বার্ষিক গ্যাসের চাহিদার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। তরলীকৃত (এলএনজি) আকারে এই গ্যাস আমদানি করা হয়।
কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চুক্তি রয়েছে। সে চুক্তির আওতায় আমদানিকৃত গ্যাসের কিছু অংশ মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে থেকে ছাড়কৃত মূল্যে পায় বাংলাদেশ। বাকি অংশ খোলা বাজার থেকে কেনে বাংলাদেশের সরকার।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এভাবেই চলছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর বদলে যায় সার্বিক চিত্র। যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন ও রাশিয়াকে চাপে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইউরোপ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু বাস্তবিক অর্থে, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা দীর্ঘদিনের। মহাদেশটির অন্তর্ভূক্ত ২৮টি দেশের মোট বার্ষিক গ্যাসের চাহিদার ৩০ শতাংশই এতদিন রাশিয়া থেকে আসত। হঠাৎ করে ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে দেয়।
গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহে টান পড়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই নানামূখী সংকট শুরু হয় ইউরোপের অর্থনীতি ও জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। এসব সংকটে দিশেহারা ইউরোপ গত বেশ কিছুদিন ধরেই গ্যাসের বিকল্প বাজার খুঁজছে এবং এক্ষেত্রে ইউরোপের প্রথম পছন্দ মধ্যপ্রাচ্য।
এদিকে, ইউরোপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক বাজারেও। আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে এলএনজি গ্যাসের দাম।
নসরুল হামিদ জানান, এলএনজির দাম বাড়তে থাকায় দেশের রিজার্ভ বাঁচাতে গত জুন মাসেই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ। এখন চুক্তির আওতায় কেবল কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
‘আমরা কাতারকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু দেশটির সরকার আমাদের জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা (রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো) সম্ভব নয়,’ বলেন নসরুল হামিদ।
এদিকে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়তে থাকা এবং খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করায় বাংলাদেশে একদিকে যেমন ফিরে এসেছে লোডশেডিং, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যেও লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গ্যাসের বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক লুজিয়া কাও ব্লুমাবার্গকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘এশিয়ার উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের সরকার চলতি বছর থেকেই এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছিল। এলএনজি গ্যাসের অতিরিক্ত দাম ছিল তার প্রধান কারণ।’
‘কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে, তা ধারণারও অতীত। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশগুলো যে সমস্যায় পড়বে, তা খুবই স্বাভাবিক এবং (এসব দেশের) সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না নেয়, সেক্ষেত্রে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠতে থাকে এই সংকট।’
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস অবশ্য বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এলএনজি আমদানির জন্য জ্বালানি অনুসন্ধান, উত্তোলন ও বিপণন বিষয়ক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পেট্রোবাংলাকে এলএনজি আমদানি বাবদ ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়।
এসএমডব্লিউ