স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে, সুফল নিয়ে সংশয়
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম আর নড়বড়ে স্বাস্থ্য খাতের প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রায় প্রতিটিতে চিকিৎসক-নার্সসহ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ফলে জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করাতে গেলেও যন্ত্রপাতি না থাকার দোহাই দিয়ে রোগীর পকেট কাটছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এমনকি জ্বর-সর্দি আর গুটিকয়েক ওষুধ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে মেলে না তেমন কোনো ওষুধ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালেও টাকা ছাড়া মেলে না সিট, ওষুধ, অপারেশনসহ চিকিৎসার সিরিয়াল।
দেশের স্বাস্থ্য খাতের এমন বেহাল অবস্থায় আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২) এ খাতে বরাদ্দ বাড়লে এর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার করোনা ভ্যাকসিনসহ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ভ্যাকসিনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবার মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকবে ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য দেওয়া হবে সাত হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।
করোনা ভ্যাকসিনসহ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ভ্যাকসিনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবার মোট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকবে ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য দেওয়া হবে সাত হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাদ্দ বাড়ানো হলেও খরচের দক্ষতা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। যা কিছু খরচ হয়, সেখানে দুর্নীতি আছেই। সবমিলিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন করে বরাদ্দ হলে সাধারণ জনগণ কী পরিমাণ সুফল পাবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এ খাতে বরাদ্দের সঙ্গে সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অবশ্যই বাড়ানো দরকার। আমরা চাই আমাদের মূল বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি এ খাতে বরাদ্দ হোক। জানতে পেরেছি এবার স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের সাত শতাংশের মতো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যা গত বছর পাঁচ শতাংশের মতো ছিল। আমরা মনে করি বরাদ্দের অর্থ যেখানে অব্যয়িত থাকে, সেখানে সাত শতাংশ বরাদ্দ আপাতত কম নয়। এখন এই টাকাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খরচ করাও একটা বড় বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের পকেট থেকে যেসব উদ্দেশ্যে এই টাকাগুলো বেরিয়ে আসে, সেই চিন্তাটা মাথায় রেখেই খরচ করতে হবে। আমরা জানি এই টাকাগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার জন্যই তাদের পকেট থেকে বের করে আনা হয়। অর্থাৎ জনগণ যেন হাসপাতালে গিয়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সেবা, আন্তরিক সহযোগিতা ও ওষুধ পায়। কিন্তু কোনো সরকারি হাসপাতালেই এর কোনোটা যথাযথভাবে মেলে না।’
সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে আমরা দেখি জনগণ গিয়ে যথাসময়ে চিকিৎসক-নার্সদের পান না। পেলেও অধিক সংখ্যক রোগীর কারণে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হন। ফলে সাধারণ লোকজন বেসরকারি হাসপাতালে চলে যান, যেখানে চিকিৎসক-নার্স থাকেন এবং ভালো সেবা পান। দ্বিতীয়ত, আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়াগনস্টিক সেবা (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) নেই বললেই চলে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ও নিত্যনৈমিত্তিক বেশকিছু পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়। এতে জনগণের পকেট থেকে আলাদাভাবে টাকা গুনতে হয়। ’
‘তৃতীয়ত, ওষুধ। আমরা জানি যে ওষুধের খরচ অনেক বেশি। সেটা যদি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হয়, সেখানে তাকে প্রচুর অর্থ গুনতে হয়। সেক্ষেত্রেও বাজেটে খেয়াল রাখা উচিত যেন হাসপাতালগুলোতে ওষুধের সাপ্লাই নিয়মিত থাকে, ওষুধের জন্য যেন আলাদা একটা ফান্ডিং থাকে। এছাড়া ওষুধের মান যেন ভালো হয়। তাহলে আমাদের বাজেটটা সেভাবেই করা উচিত যেন সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনে আনতে না হয়। স্বাস্থ্য বাজেট যেন সাধারণ মানুষের মৌলিক চিকিৎসা অধিকার মেটাতে পারে’— যোগ করেন তিনি।
সরকারি সংস্থা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খরচ করতে পেরেছে মোট বরাদ্দের মাত্র ২৬ শতাংশ। তারপরও এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গত অর্থবছরের সংশোধিত ১৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকার বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা (১৬ শতাংশ বেড়েছে)। শুধু তাই নয়, এ সময়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য নেওয়া ৫৩টি প্রকল্পে ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিলে কোভিড মোকাবিলায় দুই প্রকল্পের ১৩ মাস পার হলেও এডিবি থেকে নেওয়া ঋণের খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আর বিশ্ব ব্যাংকের টাকার তিন ভাগের এক ভাগ।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আব্দুল হামিদ আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা ব্যয় করা যায় না— এটি দৃশ্যমান। এর কারণ স্বাস্থ্য খাতের বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বাস্তব চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাজেট প্রস্তুত করেন না। আগের বছরের বাজেটের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পরের বছরের বাজেট তৈরি করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী না হওয়ায় অর্থ অব্যয়িত থেকে যায়। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বরাদ্দ দিতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শুধু বাজেট বাড়ালেই হবে না, এটার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও জরুরি। আমরা দেখি যে আমাদের বাজেটের অধিকাংশ অর্থই কেনাকাটাতে ব্যয় হয়। স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বলতে কেন তারা শুধু কেনাকাটা বোঝেন—সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের হাসপাতালগুলোতে দেখা যায় অসংখ্য যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ, সেগুলো ব্যবহার করার মতো দক্ষ জনবল নেই। এদিকে দক্ষ জনবল তৈরির দিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপও নেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল ঘাটতি মেটাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের চিকিৎসা গবেষণায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এখানেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।’
‘আমরা চাই মূল বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক। এটাও জানি যে হুটহাট বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই পরিকল্পনামাফিক আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে যেন স্বাস্থ্য খাতকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই টার্গেট আমাদের রাখতে হবে’— যোগ করেন তিনি।
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাস সংকট উত্তরণে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় যেকোনো মূল্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে আমাদের টিকা আনতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় টিকা উৎপাদনেরও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষেই এটা সম্ভব। সবমিলিয়ে করোনা মহামারির বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এটা করতেই হবে। আমাদের আরও মনে রাখতে হবে যে দেশে এখনো ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগ হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বর্তমানে আমাদের যে বরাদ্দ রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
বিএমএ সভাপতি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে মহামারি মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা কেমন। আমরা চাই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অন্তত ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হোক। বিশেষ করে আমাদের চিকিৎসা গবেষণায় আরও বরাদ্দ দেওয়া উচিত। আমাদের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে খারাপ নয়। তবে জেলাপর্যায়ে মেডিকেল শিক্ষার মান ভালো নয়। দেশের অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সনদ নেওয়ার আগে কোনো দিন রোগীর শরীর স্পর্শ করেন নাই। আমার মনে হয় এমন চিকিৎসক আমাদের দেশে দরকার নাই। বাজেটে এ বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে।’
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে মোট বাজেটের ৪.৯২ শতাংশ, তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫.০৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৫.৩৯ শতাংশ।
বাজেট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাজেটে করোনা ভ্যাকসিন, চিকিৎসা সেবা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বাজেট জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ। আমরা কাজ করছি জিডিপির ৯/১০ শতাংশে নিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট অনেক কম। যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ যুদ্ধ করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। কিন্তু চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য মানুষ খুব বেশি ভাবে না। স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে তেমন কোনো পরিকল্পনাও নেয় না। এবারের করোনা মহামারিতে বিশ্ব বুঝতে পেরেছে যে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ কতটা জরুরি। করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়া এ পৃথিবীতে মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য খাতের বাজেট অনেক কম। বাজেট বৃদ্ধিসহ বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।’
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা
জানা গেছে, আসছে বাজেটে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুখবর থাকছে। করোনায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে করোনা মোকাবিলায় দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলো করা হবে আরও আধুনিক। আইসিইউ সরঞ্জাম, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য এসব সরঞ্জাম আমদানি শুল্কমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও জানা গেছে, চলতি বাজেটে করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের এককালীন সম্মানি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে সম্মানি ভাতার পাশাপাশি দেওয়া হতে পারে ঝুঁকি ভাতা ও প্রণোদনা। এজন্য বরাদ্দ থাকছে ৮৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ চার হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক সেবা এবং অনলাইনে বিশেষায়িত সেবার মান বাড়াতে এ খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। চলতি অর্থবছর এ খাতে ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে তা ২০০ কোটি টাকা করা হতে পারে।
দেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে বেশি বেশি গবেষণার জন্য আসছে বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। এখন পর্যন্ত বাজেটে মোট স্বাস্থ্য ব্যয় জিডিপির ২.৩৪ শতাংশ। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ১১০ ডলার।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে যে বাজেট বক্তৃতা দেবেন সেখানে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়ন এবং এ খাতের উন্নয়নে আরও বেশি গবেষণার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ থাকবে প্রস্তাবিত বাজেটে।
আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেটের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে ৫০তম এ বাজেট। আলোচিত এ বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশনে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনও সংক্ষিপ্ত হবে বলে জানা গেছে।
টিআই/এমএআর/