ফাইজারের টিকা প্রয়োগ ‘শুধু ঢাকায়’, এমন সিদ্ধান্ত হয়নি
দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনামূল্যে করোনার টিকা সরবরাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ করোনার টিকা রোববার (৩০ মে) দেশে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ফাইজারের টিকার দুই লাখ ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা তাদের আছে। প্রথম দফায় টিকা এলে সেগুলো ঢাকাতেই সংরক্ষণ করা হবে। তবে এ টিকা শুধু ঢাকাতেই প্রয়োগ হবে কি না— এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ‘শুধু ঢাকাতেই দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ও কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি বলেছি, ফাইজারের টিকা ঢাকায় রাখার সক্ষমতা আছে। এটাকে যদি কেউ অন্যভাবে উপস্থাপন করে, তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। এটা তো মুশকিল, কিছু মনে করবেন না। মিডিয়াতে কিছু একটা বললে সেটাকে যদি অন্যভাবে প্রেজেন্ট (তুলে ধরে) করা হয়, তাহলে তো আর কিছু বলবই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি সক্ষমতার কথা। তারা লিখে দিয়েছে, ঢাকাতেই দেওয়া হবে। এটা আসলে ঠিক না। এজন্যই আমরা কথা বলতে ভয় পাই।’
ফাইজারের টিকাটি দুই ডোজের। প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এর সংরক্ষণ তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে টিকাটি পাঁচ দিন ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই ঘণ্টা কার্যকর থাকবে
শামসুল হক বলেন, ‘এই টিকা আমরা ঢাকায় রাখব, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোথায় দেওয়া হবে। আমাদের কমিটি এ বিষয়ে মিটিং করে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ফাইজারের টিকা ঢাকায় প্রয়োগের সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, এ টিকা তো মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। এ ধরনের ফ্রিজ তো সব জায়গায় নেই। এছাড়া এটা তো দূরের কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না। ফ্রিজ থেকে এ টিকা যদি খোলা হয়, তবে এক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবহার করতে হবে। সবমিলিয়ে ঢাকার বাইরে নেওয়ার অনেকগুলো জটিলতা রয়েছে। আমার মতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন শহর ছাড়া অন্য কোথাও প্রয়োগ সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র ঢাকায় এ টিকা প্রয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণত টিকা এলে সেগুলোকে স্টোরে নেওয়া হয়। পরদিন টিকা কমিটির একটা মিটিং হয়, সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় কবে, কখন এবং কোথায় এ টিকার প্রয়োগ হবে।’
ঢাকার বাইরে কোথাও ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে মাইনাস ৭০ ডিগ্রির একটি ফ্রিজ আছে। সেটি সম্ভবত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এর বাইরে আছে বলে মনে হয় না। ফাইজারের টিকা ঢাকা বা চট্টগ্রামের বাইরে কোথাও দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আর যদি দিতে হয় তাহলে নতুন করে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার ফ্রিজ কিনতে হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফাইজারের টিকা শুধুমাত্র ঢাকায় দেওয়া হবে— এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানেই কোল্ডচেইন মেইনটেইন করা যাবে, সেখানেই দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যদি আমরা কোল্ডচেইনের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে ঢাকার বাইরেও যাবে। এ টিকা তো অন্যান্য টিকার মতো নয়, এর কোল্ডচেইন তো আলাদা। দেশে টিকা এলে সেটা (স্থান) কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ইতোমধ্যে ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এ টিকা ১২ বছর এবং তার বেশি বয়সী ব্যক্তির জন্য ব্যবহারযোগ্য। দেশে এটি দেওয়া হবে সরকারের ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের ব্যক্তিদের।
টিকাটি দুই ডোজের। প্রথম ডোজের তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এর সংরক্ষণ তাপমাত্রা মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে টিকাটি পাঁচ দিন ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই ঘণ্টা কার্যকর থাকবে।
টিআই/আরএইচ/এমএআর/