বয়স ২০ হলেই নিয়মিত স্তন পরীক্ষার পরামর্শ
২০ বছরের পর থেকে প্রতি মাসে মাসিক-পরবর্তী সময়ে নিজের স্তন পরীক্ষা করা জরুরি। আর ৪০ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার ম্যামোগ্রাম করানো জরুরি বলে মত দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ড. উম্মে হুমাইরা কানিতা।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) স্তন ক্যানসার সচেতনতা বিষয়ক এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। আমরা নারী, আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি নারীর মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারেরও বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার ৫০০ জন মারা যান।
এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও মৃত্যুঝুঁকি কমাতে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘আমরা নারী’ ও ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’।
সেমিনারে ড. উম্মে হুমাইরা কানিতা স্তন ক্যানসার সচেতনতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি স্তন স্ব-পরীক্ষা, প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেন। এ ছাড়া স্তন ক্যানসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ রোগে নারীর মৃত্যু কমাতে তৃণমূল পর্যায়ে স্তন ক্যানসার সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই নারী। তাই বয়স ২০ হলে নিয়মিত স্তন পরীক্ষার পরামর্শ দেন ডা. হুমাইরা। স্তন ক্যানসারের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বগলে বা স্তনে পিণ্ডের উপস্থিতি দেখা দেয়। একইসঙ্গে স্তনের ত্বকে ফোলাভাব, ব্যথা বা ফুসকুড়ি হতে পারে। এমনকি স্তনের আকৃতি বা লালচে পরিবর্তনসহ স্তনবৃন্ত থেকে স্রাব বের হতে পারে। এ ছাড়া স্তনে চুলকানি, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, চামড়ার রঙে পরিবর্তন হতে পারে। এসব লক্ষণের কোনোটি দেখামাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্তন ক্যানসার শুধু যে নারীদেরই হয় তা কিন্তু নয়। পুরুষেরও হতে পারে। যদিও নারীদের মধ্যেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে, পুরুষদেরও সচেতন থাকতে হবে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী-পুরুষ স্তন ক্যানসার নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন না। ফলে দুরারোগ্য এই ব্যাধি মারাত্মক আকার ধারণ করে।
এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ডা. হুমাইরা জানান, এ ক্ষেত্রে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা জরুরি। ধূমপান-মদপান এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতি বছর স্ক্রিনিং করতে হবে। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা যাবে না। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএলের ডিরেক্টর (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী, মো. সায়েদুল ইসলাম, সাবেক কৃষি সচিব, সাবেক চেয়ারম্যান কর্মসংস্থান ব্যাংক, রহিমা বেগম, অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়; অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন, উপদেষ্টা; হুসনা কাদরী, পরিচালক, শিক্ষা, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, সামিউল ইসলাম হিরণ, আইটি কনসালটেন্ট এবং আমরা নারী ও আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান (বিপ্লব)।
উল্লেখ্য, আমরা নারী একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক সংস্থা, যা নারীদের ক্ষমতায়ন, কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত। এর সহযোগী সংগঠন আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনের সেমিনার পরিচালনা করে। অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে, চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত; যাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত ও প্রতিরোধে সচেতন হতে পারে। এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হলো মেয়েদের স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখা, যাতে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকে। স্বাস্থ্য সচেতন একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠে।
এমএআর/