আরও এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ চায় কারিগরি কমিটি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। যদিও এ নিয়ে সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সোমবার (১৯ এপ্রিল) সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকালে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আরও এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন রাখার পরামর্শ দিয়ে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। চলমান লকডাউনের বিষয়ে পর্যালোচনা সভার পর পরবর্তী বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এর আগে গতকাল (১৮ এপ্রিল) রাতে কারিগরি কমিটির দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতেও লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিধিনিষেধ বাড়তে পারে, সিদ্ধান্ত সোমবার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভা জুমের মাধ্যমে ১৮ এপ্রিল রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। সভার শুরুতে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় ও পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। সভায় কমিটির সব সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিচের সুপারিশসমূহ গৃহীত হয়।
এতে বলা হয়, সভায় সংক্রমণের অবস্থা ও প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সারাদেশে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে সভা উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন সুপারিশ করেছিল। সরকার ইতোমধ্যে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। কমিটি এতে সন্তোষ প্রকাশ করে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায়না। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে, বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাঙ্খিত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করে। পাশাপাশি সভা সামাজিক সমতার বিষয়েও নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
স্বাস্থ্য, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কমিটি খোলা রাখা জরুরি সেবার তালিকা প্রকাশ করার অনুরোধ করে। অন্যথায় বিরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। উদাহারণ হিসেবে চলমান লকডাউন এ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিউটির জন্য চলাচলে বাধা ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। কাঁচা বাজার উন্মুক্ত স্থানে স্থাপনের প্রস্তাব আবারও দেওয়া হয়। কমিটি আরও এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করে। পরবর্তী সময়ে সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। ধীরে ধীরে লকডাউন শেষ করার পূর্ব পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল চালু হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়। রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় অতি দ্রুত আরও সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
করোনা রোগী দ্রুত শনাক্ত করা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। সাম্প্রতিককালে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। নমুনা সংগ্রহ সহজ ও রোগীদের হাতের নাগালের মধ্যে আনার জন্য শহর অঞ্চলে প্রতি ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা প্রয়োজন। রিপোর্ট দ্রুত প্রেরণ করার জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নমুনা পরীক্ষা সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে কমিটি ইতোমধ্যে সরকারী নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার পরামর্শ দিয়েছে। পিসিআর টেস্ট কিটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার মূল্য পূননির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে যেমন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে, তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসবে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পরীক্ষা করা যাবে। সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে। এতে করে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত দিয়েরে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে, যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি/বেসরকারি সব হাসপাতাল, ক্লিনিকে গর্ভবতী করোনা/নন করোনা মা’দের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিন্তে করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এ ব্যাপারে অন্যথা উচিৎ নয়। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন ডিএনসিসি হাসপাতালে গর্ভবতী মা’দের একটা কর্ণার এ বিশেষায়িত (আইসিইউ) ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রতিটি হাসপাতাল তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী চেইন অফ রেফারেন্স সিস্টেম মেনে চলবেন।
সব মৃদু করোনা রোগীদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কোয়ালিটি সেবা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। পরে গণপরিবহন অর্ধেক আসনে যাত্রী বহনের শর্ত দিয়ে চালুর অনুমতিও দেওয়া হয়। খোলা হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল।
করোনা পরিস্থিতি ক্রমে অবনতি হওয়ায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউন চলাকালে দেশে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে টানা দুই দিন। যদিও গত কয়েক দিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কম। বলা হচ্ছে লকডাউনের কারণে নমুনা কম দেয়ায় শনাক্ত রোগী কমছে।
টিআই/এসএম