দুই সন্তানেই ‘ফুলস্টপ’ দিচ্ছেন ৭৯ শতাংশ মা
১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে সেই বাজেটের আকার (প্রস্তাবিত) দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায়। স্বাধীনতা অর্জনের ৫১ বছরে বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে দেশটি।
এ সফলতা কোনো রূপকথার গল্পের জাদুর কাঠির মাধ্যমে আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সফলতার অন্যতম কারণ হলো- পরিবার পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।
বলা হয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রধান সমস্যা ছিল জনসংখ্যা ও দরিদ্র্যতা। সে সময়ে একজন মা যেখানে ছয় থেকে সাতটি সন্তান জন্ম দিতেন, বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে দুই থেকে তিনে। ২০২০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বিডিএইচএস) তথ্য মতে, বর্তমানে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে দুই সন্তান বিশিষ্ট ৭৯ শতাংশ নারী পরবর্তী সন্তান গ্রহণে অনিচ্ছুক, যা ২০০৪ সালে ছিল ৬৭ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে দেশের প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ছিল ৬ দশমিক ৯, অর্থাৎ ওই সময়ে একজন মা গড়ে প্রায় সাত সন্তানের জন্ম দিতেন। ১৯৭৫ সালে প্রজনন হার ছিল ৬.৩, ১৯৮১ সালে এটি কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২-এ। এরপর তা আরও কমতে থাকে। সর্বশেষ (২০২০ সাল) বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ বলছে, দেশের প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ৩, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে, ২০২৫ সালের মধ্যে ২ শতাংশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা সরকারের।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে দেশের প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) ছিল ৬ দশমিক ৯, অর্থাৎ ওই সময়ে একজন মা গড়ে প্রায় সাত সন্তানের জন্ম দিতেন। ১৯৭৫ সালে প্রজনন হার ছিল ৬.৩, ১৯৮১ সালে এটি কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২-এ। এরপর তা আরও কমতে থাকে। সর্বশেষ (২০২০ সাল) বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ বলছে, দেশের প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ৩, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে, ২০২৫ সালের মধ্যে ২ শতাংশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা সরকারের
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি না থাকলে কেমন হতো?
দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যাদের, তারা হলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠকর্মী। একবার ভাবুন তো দেশে যদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি না থাকতো, অধিদপ্তর না থাকতো, কোনো কর্মী না থাকতো কেমন হতো আজকের বাংলাদেশ? চোখ বুঝে ভাবলেই ব্যাপারটা আঁতকে ওঠার মতো নয় কি? এসব বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) মতিউর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের সবচেয়ে বড় একটি সফলতা হলো বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আরেকটি বড় কারণ হলো দেশের জনসংখ্যাকে কাম্য মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। যদি কোনো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি না থাকত, তাহলে দেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াত, এই বিশাল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে নিশ্চিত দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিত।’
মতিউর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, আর পাকিস্তানে ছিল সাড়ে চার কোটি। পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম সফলতার কারণে আজ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের জনসংখ্যা কিন্তু এই সময়ে ২০ কোটি ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানের মতো যদি আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেত, তাহলে মোট জনসংখ্যা দাঁড়াত ২২ কোটিরও বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়েছি। আমাদের পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণকারীর হার বেড়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ওই সময়ে একজন মায়ের গড়ে সন্তান সংখ্যা ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এখন সেটি কমিয়ে গড়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, আমাদের পরিবারে আমরা তিন ভাই ও তিন বোন। অর্থাৎ তৎকালীন পরিবারগুলো এমনই বড় হতো। কিন্তু এখন দেখবেন কোনো পরিবারেই দুজনের বেশি সন্তান জন্ম নিচ্ছে না। এটা কিন্তু পরিবার পরিকল্পনারই একটি অবদান। মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’
প্রজনন হার কমে আসায় আবারও পাল্টেছে সরকারের ‘স্লোগান’
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এই সহকারী পরিচালক বলেন, শুরুতে আমাদের স্লোগান ছিল ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’। মাঝখানে আমাদের নতুন করে স্লোগান হলো, ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা আবারও পূর্বের স্লোগানে ফিরে আসি। পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যে একটি সন্তান এলে সংসারের জন্য সমস্যা হয়। কারণ, একটি বাচ্চা যেখানে আছে সে তার খেলার সঙ্গী পায় না। আবার একটি সন্তান যদি ছেলে হয়, তার ওপর সংসারের বিশাল চাপ চলে আসে। এজন্য আমরা মনে করি দুটি সন্তানই উত্তম।
তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর একটা সময় শুধু কাজ করতো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে। এখন শুধু নিয়ন্ত্রণে নয়, সামগ্রিকভাবে পরিবারের কল্যাণের জন্য কাজ করে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের জন্য কাজ করে। এই পরিকল্পিত পরিবার গঠনে কয়েকটা সংখ্যার কথা আমরা বলি। সেগুলো হলো- ২, ৩, ১৮, ২০, ৩৫। অর্থাৎ দুইয়ের অধিক বাচ্চা নয়।
‘আমরা বলি, একটি বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর তিন বছর বিরতি নিতে হবে। মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়। ২০ বছরের আগে কোনো সন্তান নয়। কারণ, ২০ বছর বয়সের আগে একটি নারী সন্তান গর্ভধারণের উপযোগী হয় না। তার শারীরিক গঠনে অনেক অপূর্ণতা থেকে যায়। আবার ৩৫ বছরের পর কোনো নারী সন্তান জন্ম দেবে না। কারণ, ৩৫ এর পর সন্তান জন্মদানে নারীর অনেক জটিলতা দেখা দেয়। আবার কোনো নারীর যদি ঘনঘন বাচ্চা হয়, তাহলে বাচ্চা ও মা দুজনের জন্যই ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়’— যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
সাফল্য ম্লান হওয়ার শঙ্কা, পাল্টে যেতে পারে হিসাব-নিকাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, সমগ্র প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) হ্রাসকরণে আমরা অনেকটা সফল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, তাদের তুলনায় প্রজনন স্বাস্থ্য সূচকে (যেমন- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার) আমরা অনেক বেশি এগিয়ে। সেক্ষেত্রে সরকারের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে এনজিওগুলোর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনায় সাফল্য, জনসচেতনতা-যোগাযোগের মাধ্যমে আচরণের পরিবর্তন, নারীশিক্ষা ও নারীদের কম সন্তান নেওয়ার প্রবণতা, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ সবাই এখানে কাজ করেছে।
‘আমরা দেখছি, আগের তুলনায় আমাদের মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি বেড়েছে, এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে। সবার যৌথ প্রচেষ্টায় বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। তবে, করোনার সময়ে আমাদের মধ্যে শঙ্কা ছিল। প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল, তখন কী পরিমাণ নারী শিক্ষার্থী ড্রপ আউট হয়েছে, তাদের মধ্যে কী পরিমাণ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে— সেটা তো গবেষণার বিষয়। নতুন করে কোনো গবেষণা হলে বোঝা যাবে কোভিড পরবর্তী প্রজনন হার বা ফার্টিলিটিতে কী প্রভাব পড়েছে।’
মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনায় আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। বাল্যবিয়ে হ্রাসে আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাইনি। আমাদের এডোলেসেন্ট ফার্টিলিটি রেট এখনও অনেক বেশি। অর্থাৎ আমাদের মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ১৯/২০ বছর হওয়ার আগেই মা হয়ে যায়। ১৮ বছরের আগে বিয়ে হলে এক বছরের মধ্যেই সন্তান নিয়ে নেয়। ২০১১ সালে বাল্যবিয়ের যে হার ছিল তা ২০১৭-১৮ সালেও একই ছিল বা কমেনি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের বাংলাদেশেই বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। তাদের যেমন আগে বিয়ে হয়ে যায়, তেমনি আগে সন্তানও নিয়ে নেয়।’
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে। কিশোরী মাতৃত্ব যেন না ঘটে সেজন্য কাজ করতে হবে। অপূর্ণ চাহিদা (আনমেট নিড) কমাতে কাজ করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোটিভেশন ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) বেশি। এসব জায়গায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কম। এখানে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। চর-হাওরসহ অধিকতর ভালনারেবল যেসব জায়গা আছে, সেগুলোকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে। বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে মেয়েদের শিক্ষা বাড়াতে হবে।
এখন আর কন্ট্রোল নয়, পপুলেশন ডেভেলপমেন্টে সরকারের নজর
প্রজনন হার হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরাসহ সরকারের সফলতা প্রসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ-শিশু ও মায়ের যত্নে চিকিৎসা) ডা. মো. মাহমুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আগের স্লোগান ছিল 'দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়'। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন আমাদের বলেছেন, এই স্লোগান আর চলবে না। এখন আবার আমরা আগের স্লোগানে ফিরে যাব, ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’। সেই কারণে আমরা এখন পপুলেশন কন্ট্রোলের চেয়ে পপুলেশন ডেভেলপমেন্টে জোর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের পপুলেশন (জনসংখ্যা) যথেষ্ট কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যেখানে সন্তান জন্মদানের গড় হার ছিল ৬/৭ শতাংশ, এখন সেটি ২ শতাংশে চলে এসেছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পপুলেশন ‘কন্ট্রোল’ শব্দটি আর পছন্দ করেন না। তিনি চান পপুলেশন যাই হোক, সেটার ডেভেলপমেন্ট যেন নিশ্চিত হয়। যখন পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট করতে যাব, তখন কন্ট্রোল এমনিতেই হবে।
নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নে গুরুত্বারোপ করে পরিচালক বলেন, আমরা যদি নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারি তাহলে একজন নারী তার স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন কখন ও কয়টা সন্তান নেবেন বা দুই সন্তান নিলে কত দিন বিরতি দেবেন। সংসারে যখন একজন নারী তার পূর্ণ অধিকার পাবেন, তখন তিনি এমনিতেই দুই সন্তানের বেশি নেবেন না।
ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমানো। আমরা শিশুমৃত্যু কমিয়ে এনেছি, যার প্রতিদানস্বরূপ আমরা ইতোমধ্যে এমডিজি (জাতিসংঘ-ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পুরস্কার অর্জন করেছি। সামনে আছে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পুরস্কার। সেটি আমাদের অর্জন করতে হবে। সেজন্য আমাদের মাতৃমৃত্যু কমাতে হবে। সারা পৃথিবীতে যতগুলো দেশ আছে মাতৃমৃত্যু সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। আমাদের দেশে এখনও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি এক লাখ মায়ের মধ্যে ১৬৩ জন মারা যান। সংখ্যাটি ভাবতে গেলে অনেক বেশি। মাতৃমৃত্যু রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন। তা হলো- আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মাতৃমৃত্যু প্রতি লাখে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে। এটি করতে গেলে আমাদের তিনটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে। প্রথমত, অল্প বয়সে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অল্প বয়সে প্রেগন্যান্সি বন্ধ করতে হবে এবং তৃতীয়ত, ঘনঘন সন্তান নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা : দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রথম পদক্ষেপ
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। স্বেচ্ছামূলক উদ্যোগে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ইতিহাস সূচনা হয় পঞ্চাশ দশকের গোড়াতে। কর্মসূচির গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৬৫ সালে পরিবার পরিকল্পনাকে জাতীয়করণ করা হয় এবং সরকারিভাবে পরিবার পরিকল্পনা সেবাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৩-৭৮ সালের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বেগবান করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয় হয়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সরকারিভাবে এ দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে প্রথম জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়। পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ২৫টি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে ২০১২ সালে পরবর্তী জনসংখ্যা নীতি প্রণীত হয়। বর্তমানে এ নীতির আলোকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর শুধুমাত্র জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করে না। এ অধিদপ্তর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ছাড়াও মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা এবং পুষ্টিসেবা নিয়ে কাজ করে। পরিকল্পিত পরিবার গঠন পরিবার পরিকল্পনার মূল বিষয়। কারণ, পরিকল্পিত পরিবার হলো আলোকিত পরিবার। পরিকল্পিত পরিবার গঠন করতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ রোধ হবে এবং মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমবে।
পরিবার পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হলো- প্রতিটি গর্ভই হোক পরিকল্পিত এবং প্রতিটি জন্মই হোক নিরাপদ। নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতকরণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন তিন হাজার ৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৮৬০টি কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ প্রসব সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ৯৬টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টিতে জরুরি প্রসূতি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বড় সফলতা হলো- প্রতিষ্ঠানটির নানা কর্মতৎপরতায় বর্তমানে দেশে মোট প্রজনন হার প্রায় দুই শতাংশে নেমে এসেছে।
টিআই/এসএম/এমএআর