দুর্নীতির ফাঁদে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নথি পেতে এত বিপত্তি!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ১৩০ একর জমিও পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে সেই স্বপ্ন আজ কালো মেঘে ঢাকা!
২০১৭ সালের ১১ জুন চার বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আশা করা হয়েছিল তার হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিপূর্ণতা পাবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো উপাচার্য থাকাকালীন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। নির্ধারিত ক্যাম্পাস চালু না করা, অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং কেনাকাটায় অর্থের অপচয়সহ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ওঠে বিশ্বজিৎ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
২০১৭ সালের ১১ জুন চার বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আশা করা হয়েছিল তার হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিপূর্ণতা পাবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি
২০২০ সালের শুরুতে ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পায় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু অনুসন্ধানে নেমে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট নথি সংগ্রহে ঘাম ঝরে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার। উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ দফায় দফায় চিঠি দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী নথি পাননি। বরং বারবার সময় চেয়ে কৌশলে সময় নষ্ট করেছেন সদ্য সাবেক হওয়া উপাচার্য বিশ্বজিৎ ও তার অফিস।
অভিযোগ উঠেছে, ২০২১ সালের জুনে বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিলেও অদৃশ্য ইশারায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত নথি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর দুদক কর্মকর্তা সর্বপ্রথম ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন নথি চেয়ে প্রথম দফায় চিঠি দেয়। চিঠিতে চাহিদা অনুযায়ী নথি দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে ধাপে ধাপে অর্ধডজনের বেশি তলবি চিঠি দেওয়া হয়। এমনকি ফোন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহের জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। ফলে কিছু নথি পাওয়া গেলেও অপ্রাসঙ্গিক কাগজই বেশি সরবরাহ করা হয়।
কাঙ্ক্ষিত নথি না পাওয়ায় অনুসন্ধান কাজও এগোচ্ছে না। এরই মধ্যে উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথির অভাবে শেষ করা যায়নি দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম।
সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি নথিসহ বক্তব্য দেওয়ার জন্য দুদকে তলব করা হয় সাবেক উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষকে। রোববার সকালে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিলেও মেলেনি চাহিদা অনুযায়ী নথি। জানা গেছে, আবারও সময় চেয়েছেন তিনি।
কাঙ্ক্ষিত নথি না পাওয়ায় অনুসন্ধান কাজও এগোচ্ছে না। এরই মধ্যে উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথির অভাবে শেষ করা যায়নি দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে সটকে পড়েন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ। তবে দুদকের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দুদকের অনেক প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, তদারককারী কর্মকর্তা পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুসন্ধানের বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, ‘অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের আলোকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য ড. বিশ্বজৎ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
যেসব নথি তলব করে দুদক
ড. বিশ্বজৎ ঘোষের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর পর দুদক যেসব রেকর্ডপত্র তলব করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশ আইন/২০১৬ এবং বর্ণিত আইনের আলোকে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের কপি; রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর (ডিসি), রেজিস্ট্রার, শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি; যেমন- নিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনপত্র, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ পরিচালনা সম্পর্কিত নিয়োগ কমিটি গঠন, নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা পদ্ধতি, পরীক্ষার ফলাফল, নিয়োগপত্র প্রদান, যোগদান প্রভৃতির নথি।
এছাড়া পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এবং পরিচালক (পরিকল্পনা) পদে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত/পরিচালনার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাবতীয় সব নথি; যেমন- বাস/গাড়ি/কম্পিউটার/আসবাবপত্রসহ অন্য যেসব সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে তার বিবরণী এবং ক্রয় সংক্রান্ত সরকারি অনুমোদনপত্রসহ সংশ্লিষ্ট নথি।
ড. বিশ্বজৎ ঘোষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি তা অমান্য করে ঢাকায় তার সাবেক কর্মস্থলে ‘ভিসি অফিস’ স্থাপন করেন। সেখানে বসে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন
ড. বিশ্বজৎ ঘোষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি তা অমান্য করে ঢাকায় তার সাবেক কর্মস্থলে ‘ভিসি অফিস’ স্থাপন করেন। সেখানে বসে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস (বাড়ি নং- ৬৫/এ, রোড নং-৬/এ, ধানমন্ডি) হিসেবে বাড়িভাড়া নেওয়া এবং ওই বাড়িতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির অনুমোদনপত্র; বাড়িভাড়া সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্রও তলব করা হয়।
মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক বরাবর প্রেরিত প্রতি বছর বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনের কপি; বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন কোন বিভাগে/সাবজেক্টে কত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়েছে, এসব ভর্তি পরীক্ষা কোথায় পরিচালিত হয়েছে এবং ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি; রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ খোলার সরকারি অনুমোদনপত্র; সিলেবাস প্রণয়নে সরকারি অনুমোদনপত্র; সিনেট/সিন্ডিকেট গঠনের অনুমোদনপত্র; নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোর সরকারি অনুমোদনসহ যাবতীয় নথি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক পরিচালিত ‘বিশ্ব কলা কেন্দ্র’ নামীয় কোচিং সেন্টার পরিচালনা এবং ‘খামখেয়ালি সভা’ নামীয় রেকর্ডপত্র।
তলব করা নথির মধ্যে আরও রয়েছে- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক অডিট রিপোর্টের কপি; ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি বাবদ কত টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং উক্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন খাতে/কোন অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে, তার স্টেটমেন্ট; রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কয়টি অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে, এসব অ্যাকাউন্ট কার কার স্বাক্ষরে পরিচালিত, তাদের নাম ও পদবি এবং অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন বিভাগ/অনুষদ খোলার সরকারি অনুমোদন, সিনেট/সিন্ডিকেট গঠনের অনুমোদনপত্রও তলব করে দুদক।
অভিযোগে যা উল্লেখ করা হয়
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে দেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ২০১৬ সালে সংসদে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৮ মে (২৫ বৈশাখ) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমান) শেখ হাসিনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়। ১৩০ একর জমিও নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয় চার বছরের জন্য। কিন্তু চার বছর পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত স্থানটি বিল হিসেবে এখনও পড়ে আছে। সেখানে হচ্ছে মাছচাষ।
অভিযোগ ওঠে, উপাচার্য তার মেয়াদকালে শুধু অনিয়ম আর দুর্নীতিই করেছেন। এসব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। অভিযোগে বলা হয়, ভিসি বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস চালু না করা, অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ পঞ্চাশের বেশি অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ১৪০ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, অ্যাডহক ভিত্তিতে একজন এমএলএসএস, ঝাড়ুদার, পিয়ন, ড্রাইভার নিয়োগ; এমনকি ঘুষ-বাণিজ্যেরও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ভিসি বিশ্বজিৎ ঘোষ গত চার বছরে সরকারি ১০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোনো অডিট হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্স পরিচালিত হচ্ছে, কিন্তু সিলেবাসের অনুমোদন দেয়নি ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে অন্য একটি সংস্থা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ভিসি বিশ্বজিতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গোলাম সারোয়ার ও গোলাম আযম ২০১৮ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ২০১৭ সালে অন্য একটি আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক ছিলেন তারা। ২০২০ সালে গোলাম সারোয়ার পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে নিয়োগ পান। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরে ছয় ধাপ বেতন স্কেলে উন্নীত হন তিনি!
প্রতিষ্ঠার পর গত চার বছরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫ কর্মকর্তা ও ১৪৪ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষা বছরে পাঠদান শুরু হয়। মোট শিক্ষার্থী ৩৯৬ জন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনও কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মিত হয়নি। অস্থায়ী ও ভাড়া করা ভবনে চলছে কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেজেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু না হলেও ২০১৯ সালের ১৬ মে তিন হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের চুক্তি সম্পাদন করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভিসির ‘কথিত’ অস্থায়ী কার্যালয়ে যেসব আসবাবপত্র কেনা হয় সেগুলোর কোনো অডিট হয়নি। এর অনেক কিছুই আবার ছিল অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ মালামাল ক্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। সবমিলে প্রায় ১০ কোটি টাকা ‘অপচয়’ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপ-রেজিস্ট্রার পদে আট বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ থাকলেও সেই নিয়ম না মেনে মো. সোহরাব আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ‘ভিসির ঘনিষ্ঠ’হিসেবে পরিচিত। সব নিয়োগে তার স্বাক্ষর রয়েছে। বিভিন্ন নিয়োগে ভিসির ঘনিষ্ঠজনদের ভাই, ভগিনীপতি, ফুপাত ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, স্বামী-স্ত্রী নিয়োগ পেয়েছেন। জনসংযোগ বিভাগে নিয়োগে গণযোগাযোগ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রির বিধান থাকলেও নেওয়া হয়েছে সংগীতে স্নাতক।
১৫ বছরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থাকলেও কোনো অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে সহপরিচালক (হিসাব) পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘শূন্য’ বছরের অভিজ্ঞ সহপরিচালককে। পরিচালক পদে এক বিজ্ঞপ্তিতে সর্বনিম্ন বয়স ৪৫, অপর বিজ্ঞপ্তিতে ৪০ বছর— এহেন তুঘলকি কারবার হয়েছে জনবল নিয়োগে।
আরএম/এমএআর//