ক্ষতিপূরণ রায়ের বাস্তবায়ন কতটুকু?
কোনো সংস্থা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটলে এবং তাতে কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা নিহত বা আহত হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে উচ্চ আদালতে রিট করার সুযোগ রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলেই সাংবিধানিক আইনে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ক্ষতিপূরণের এমন অনেক যুগান্তকারী রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। হাইকোর্টের রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আবার অনেক ক্ষতিপূরণের রায় আইনি মারপ্যাঁচে আটকে গেছে।
উচ্চ আদালত সূত্রে জানা যায়, আলোচিত এসব মামলার মধ্যে শাজাহানপুরের শিশু জিহাদের পরিবার ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ অর্থাৎ ২০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন। দুই বাসের রেষারেষিতে প্রথমে হাত, পরে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের পরিবার ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা এখনও পাননি। বর্তমানে এটি আপিল বিভাগে আটকে আছে। একই কারণে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান। ভুল আসামি হিসেবে সাজা দেওয়ায় তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে সাড়ে চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায়ও আটকে আছে আপিল বিভাগে। নিরপরাধ পাটকলশ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ না হওয়ায় এখনও তিনি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় ভোলার ভুক্তভোগী জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় আটকে গেছে চেম্বার আদালতে
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারকে সাড়ে চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায়ও আটকে আছে আপিল বিভাগে। নিরপরাধ পাটকলশ্রমিক জাহালমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ না হওয়ায় এখনও তিনি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় ভোলার ভুক্তভোগী জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় আটকে গেছে চেম্বার আদালতে।
এদিকে, রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা যাওয়া চার রোগীর পরিবারের মাঝে ক্ষতিপূরণের এক কোটি টাকা প্রদান করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর পল্টন কালভার্ট রোডের ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শানু মিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল ক্ষতিপূরণের ১০ লাখ টাকার চেক চলতি বছর (২০২১ সাল) বুঝে পেয়েছেন।
শিশু জিহাদের পরিবার পেয়েছে ২০ লাখ টাকা
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাসার কাছে শাজাহানপুর রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় শিশু জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিট করেন। শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।
শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে শিশু জিহাদের পরিবারকে মোট ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শিশু জিহাদের পরিবারকে আদালতের রায় অনুসারে ২০ লাখ টাকার চেক ও পে অর্ডার বুঝিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মামলার রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু জিহাদের মামলার শুনানিকালে বাংলাদেশে প্রথম যে ইস্যুটি সামনে আসে সেটি হলো সাংবিধানিক আইনে দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট নিজেই ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। সরকারি কাজের অবহেলার কারণে যদি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এ ক্ষতিপূরণ অন্যান্য ক্ষতিপূরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাংবিধানিক আইনে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার যে দায়বদ্ধ, এটি সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু জিহাদের ক্ষতিপূরণ রায়ের মাধ্যমে।
আপিলে আটকা রাজীবের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায়
রাজধানীর কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রথমে হাত এবং পরে প্রাণ হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসান। পরবর্তীতে রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি দেবে ২৫ লাখ, স্বজন পরিবহন দেবে ২৫ লাখ টাকা। আদালতের নির্দেশে রাজীবের দুই ভাই মেহেদী হাসান হৃদয় ও আবদুল্লাহ বাপ্পী উভয়কে ২৫ লাখ টাকা করে দিতে বলা হয়।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া চার রোগীর পরিবারকে ২৫ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ এপ্রিল ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ
২০১৯ সালের ২০ জুন রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ এ রায় দেন।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিপূরণের রায়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
ইউনাইটেডে আগুনে মৃত্যু : চার পরিবার পেল ১ কোটি টাকা
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া চার রোগীর পরিবারকে ২৫ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ এপ্রিল ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
পরে আপিল বিভাগ প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার পরিবারকে ৩০ লাখের জায়গায় ২৫ লাখ করে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। গত বছরের ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এসি বিস্ফোরণের পর আগুনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ১ জুন বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রানজীব, ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ ও নিয়াজ মাহমুদ জনস্বার্থে পৃথক দুটি রিট দায়ের করেন।
‘ভুল’ আসামি হিসেবে প্রায় চার বছর কারাগারে বন্দি থাকেন তিনি। এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত বছরের (২০২০ সাল) ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই রায় চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে তা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে
নির্দোষ আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায়
রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন হাইকোর্ট। ‘ভুল’ আসামি হিসেবে প্রায় চার বছর কারাগারে বন্দি থাকেন তিনি। এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত বছরের (২০২০ সাল) ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
ওই রায় চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে তা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে।
গত বছরের ২১ এপ্রিল ভুল আসামি হিসেবে প্রায় চার বছর কারাগারে বন্দি থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যু : ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল পরিবার
রাজধানীর পল্টন কালভার্ট রোডে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যান শানু মিয়া নামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন হাইকোর্ট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণের এ অর্থ দিতে বলা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীর পল্টন কালভার্ট রোডে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যান শানু মিয়া নামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তি। ওই ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন হাইকোর্ট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণের এ অর্থ দিতে বলা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ সন্ধ্যায় পল্টনের খোলা ম্যানহোলে পড়ে শানু মিয়া নামের (৫০) এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মারা যান। ওই ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে ৭ মার্চ হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ওয়াসার এমডিসহ দুজনকে তলব করেন এবং তাদের লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুলও জারি করা হয়। এ বিষয়ে ১৯ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন আদালত এক আদেশে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঢাকা ওয়াসা ও ডিএসসিসির প্রকৌশলীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের রায়ে ১০ লাখ টাকার চেক পেলেন পা হারানো রাসেল
গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেলকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। চলতি বছরের (২০২১ সাল) ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পা হারানো রাসেল ১০ লাখ টাকার চেক বুঝে নেন।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল গ্রিনলাইন পরিবহনের ধাক্কায় প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই ঘটনায় একই এলাকার বাসিন্দা (গাইবান্ধা) ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য (বর্তমানে কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক) অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি রিট আবেদন করেন।
তারেক মাসুদের পরিবারকে সাড়ে ৪ কোটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায়
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে চার কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন চার কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেবেন ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে চার কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বর্তমানে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে
২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। বর্তমানে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মনির। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তীতে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা।
জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায়
নিরপরাধ পাটকলশ্রমিক জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬টি মামলায় জড়ানো হয়। পরে তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। তবে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশ হয়নি।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
ভোলার জলিলের ক্ষতিপূরণের রায় আটকে গেছে চেম্বার আদালতে
ধর্ষণ মামলায় ‘ভুল আইনে’ বিচার করায় ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গত ১২ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ধর্ষণ মামলার আসামি জলিল শিশু হওয়ার পরও তার বিচার ‘শিশু আইনে’ না করে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ করা হয়। তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড ও জরিমানা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জলিল। আপিলে সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভুল বিচারের জন্য ১৪ বছরের সাজাভোগ করায় জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সংঘর্ষে নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের আদেশসহ বিভিন্ন রিট মামলায় ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আপিল বিভাগে কেন আটকে আছে— প্রশ্ন রাখা হয় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খুরশিদ আলম খানের কাছে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আটকে আছে বা ঝুলে আছে— এমনটি বলা যাবে না। এটি তো জুডিশিয়াল প্রসেস (বিচার প্রক্রিয়া)। আপিল বিভাগ প্রত্যেকটি মামলা সিরিয়াল অনুযায়ী শুনছেন এবং নিষ্পত্তি করছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ ছিল। এছাড়া আপিল বিভাগে অনেক মামলা বিচারাধীন আছে। এ কারণে হয়তো ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানিতে সময় লাগছে।
এমএইচডি/এমএআর/