সব জেনে ছুটছেন তারা সাগরপথে
‘মধ্যরাতে টেকনাফ থেকে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে উঠলাম। সেখানে মানুষের গাদাগাদি, নড়াচড়ার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। জায়গা নিয়ে কেউ কথা বললে তাকে গুলি করা হতো। পরে মরদেহ ফেলে দেওয়া হতো সাগরের নোনা জলে। প্রতিদিনই ছোটখাটো বিষয়ে মারধর করা হতো, গুলি করতেও পিছপা হতো না তারা।’
স্বপ্নপূরণের আশায় সাগরপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন কক্সবাজারের যুবক মো. জামাল (ছদ্মনাম)। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। উল্টো নির্মম নির্যাতন সহ্য করে তিন মাস কাটিয়ে দিতে হয় সাগরে। বাড়ি ছাড়ার ১৪ মাস পর ইন্দোনেশিয়া থেকে খালি হাতে দেশে ফেরেন জামাল। স্বপ্নহারা জামাল তার সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতিগুলো ব্যক্ত করেন ঢাকা পোস্টের কাছে।
জামাল জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তার পড়াশোনা। পরিবার চালাতে দিনমজুরের কাজ করতেন। ২০১৭ সালে স্থানীয় এক দালালের প্রলোভনে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহস দেখান। তবে কখনও মালয়েশিয়া, কখনও ইন্দোনেশিয়ার সাগরে ভেসে ভেসে মোহ কেটেছে তার।
মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, টেকনাফের আবু নামে এক দালাল হঠাৎ এসে আমাকে বলে, মালয়েশিয়া যাবা? আমার তখন দেশটির বিষয়ে তেমন ধারণা ছিল না। ওই দালাল বলে, মালয়েশিয়ায় গেলে অনেক টাকা পাবা, ভালো ইনকাম করা যাবে। মাত্র এক লাখ টাকা লাগবে। তবে, যেতে হবে অবৈধভাবে, সাগরপথে। সব জেনে জোর-জবরদস্তি করে পরিবার থেকে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাকে দেই। ওই দালাল আমাকে কক্সবাজার থেকে বোটে টেকনাফে নিয়ে যায়। মাঝরাতে টেকনাফ থেকে ট্রলারে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হই।
টেকনাফের আবু নামে এক দালাল হঠাৎ এসে আমাকে বলে, মালয়েশিয়া যাবা? আমার তখন দেশটির বিষয়ে তেমন ধারণা ছিল না। ওই দালাল বলে, মালয়েশিয়ায় গেলে অনেক টাকা পাবা, ভালো ইনকাম করা যাবে। মাত্র এক লাখ টাকা লাগবে। তবে, যেতে হবে অবৈধভাবে, সাগরপথে। সব জেনে জোর-জবরদস্তি করে পরিবার থেকে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করে তাকে দেই
যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে জামাল বলেন, আমার মতো আরও অনেকে ছিলেন। টেকনাফ থেকে একসঙ্গে রওনা দেই। রোহিঙ্গারাও ছিলেন। ট্রলারের মধ্যে প্রচণ্ড গাদাগাদি, একজনে ওপর আরেকজন... এমন অবস্থা। নড়াচড়ারও জায়গা ছিল না। একজন রোহিঙ্গা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর আর কেউ এ নিয়ে কথা বলেনি।’
‘যাত্রা শুরুর পর ট্রলারটি বিভিন্ন স্থানে থামানো হয়। এরপর আমরা মিয়ানমার সীমানার বঙ্গোপসাগরে পৌঁছায়। সেখানে সাতদিন অবস্থান করে ট্রলার। এরপর থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেই। থাইল্যান্ড থেকে কয়েকজন থাই-দালালও ট্রলারে ওঠে। তারা উঠে আমাদের মারধর শুরু করে। বাসা থেকে তিন লাখ টাকা পাঠাতে চাপ দেয়।’
এরই মধ্যে আমরা মালয়েশিয়ার সীমান্তে পৌঁছায়। কিন্তু কপাল খারাপ, সেখানে পৌঁছামাত্র দেশটির নৌবাহিনী আমাদের আটক করে। গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশি দালালদের। তবে থাইল্যান্ডের দালালরা পালিয়ে যায়। যেদিক দিয়ে আমরা এসেছি সেদিকে ট্রলারের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ট্রলারে বাংলাদেশি মাঝি, আর দু-তিনজন দালাল ছিল। মালয়েশিয়া থেকে ফের ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করি। গহীন বনাঞ্চলঘেরা এক পাহাড়ের পাশে ট্রলারটি অবস্থান নেয়। সেখানে সাতদিন কাটাই। পানি ছাড়া ওই সময় তেমন কিছু খাওয়া হয়নি।
আমার মতো আরও অনেকে ছিলেন। টেকনাফ থেকে একসঙ্গে রওনা দেই। রোহিঙ্গারাও ছিলেন। ট্রলারের মধ্যে প্রচণ্ড গাদাগাদি, একজনে ওপর আরেকজন... এমন অবস্থা। নড়াচড়ারও জায়গা ছিল না। একজন রোহিঙ্গা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর আর কেউ এ নিয়ে কথা বলেনি
সাতদিন সেখানে অবস্থানের পর ওই জায়গার স্থানীয়রা একটি বোটে এসে আমরা বাংলাদেশি নাকি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, এখানে কেন এসেছি— এসব বিষয়ে জানতে চান। আমরা মুসলমান কি না, সেটিও জানতে চান। মুসলমান জানার পর তারা আমাদের খাবার দেন। পরে ইন্দোনেশিয়ার বন্দরের দিকে আমাদের নিয়ে যান।
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশের সময় দেশটির নৌবাহিনী আমাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে, কেন এবং কোথা থেকে এসেছি? সবকিছু শোনার পর তারা আমাদের বলে, ‘তোমরা চলে যাও, আমাদের দেশে তোমাদের জায়গা হবে না।’ এরপর তারা আমাদের মালয়েশিয়ার জলসীমায় পাঠিয়ে দেয়।
মালয়েশিয়ার জলসীমায় প্রবেশের পর আবারও আমাদের আটক করা হয়। একইভাবে তারাও আমাদের ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় পাঠিয়ে দেয়। এভাবে আরও সাতদিন সাগরে ভেসে থাকতে হয়। জামাল বলেন, ‘ট্রলারে থাকা রোহিঙ্গারা এ সময় বলতে থাকেন, আমাদের (বাংলাদেশি) কারণে তারা আজ সাগরে ভাসছেন। আমাদের কারণেই দালালরা ধরা খেয়েছেন, তারা (রোহিঙ্গারা) মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।’ একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশিদের মারধর করতে শুরু করে, ছুরিকাঘাতও করে। জীবন বাঁচাতে ট্রলার থেকে অনেকে ঝাঁপ দেন সাগরে। ছুরিকাঘাতে ট্রলারে মারা যান দুজন (বাংলাদেশি)। পরে তাদের মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় সাগরে।
ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশের সময় দেশটির নৌবাহিনী আমাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ করে, কেন এবং কোথা থেকে এসেছি? সবকিছু শোনার পর তারা আমাদের বলে, ‘তোমরা চলে যাও, আমাদের দেশে তোমাদের জায়গা হবে না।’ এরপর তারা আমাদের মালয়েশিয়ার জলসীমায় পাঠিয়ে দেয়
হামলার জবাবে বাংলাদেশি কয়েকজন ট্রলারের তলা ফুটো করে দেয়। ফলে পানি ঢুকে সাগরে ডুবে যায় ট্রলার। এরপর আমরা সবাই সাগরে ভাসতে থাকি। পাশ দিয়ে বড় বড় মালবাহী জাহাজ চলে যায়। কিন্তু কেউ আমাদের তুলে নেয় না। পরে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের উদ্ধার করে তাদের দেশে নিয়ে যায়। সেখানে ১১ মাস আটকে রাখে। পরে বাংলাদেশ সরকার আমাদের ফিরিয়ে আনে।
টানা তিন মাস সাগরে ভেসে থাকার দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি জামাল। বলেন, প্রতিদিন একবেলা খাবার দেওয়া হতো। সাদা ভাত-মরিচ আর এক গ্লাস পানি। সকালের এ খাবার খেয়ে ২৪ ঘণ্টা পার করতে হতো। মাঝে একবার এক গ্লাস করে পানি মিলত। পর্যাপ্ত খাবার-পানির অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মারাও যান। কবর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই মরদেহগুলো সাগরেই সমাহিত করা হতো।
‘খাবার-পানি চাইলে মারধর করা হতো। তিন মাস ধরে আমাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়া বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে তাদের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দেই। বাড়ি ফেরা পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।’
এখন আর বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। সবাইকে বলি, কষ্ট করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই কিছু করার চেষ্টা করেন’— বলেন ভুক্তভোগী মো. জামাল।
শুধু জামাল নয়, এমন হাজারও ভুক্তভোগী রয়েছেন কক্সবাজারে, যারা কোনো রকম জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন দুর্বিষহ বিদেশযাত্রা থেকে। এরপরও থামছে না সাগরপথের যাত্রা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মানবপাচারের ঘটনা কিংবা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাশের দেশ ভারতে পাচারের ঘটনা নতুন নয়। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাগরপথে মানবপাচারের ঘটনাগুলো ছিল ভয়াবহ। ২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে। দালালদের বিরুদ্ধে হয় মামলা, চলে অভিযান। কিছুদিনের জন্য মানবপাচারের ঘটনা কমে এলেও সাম্প্রতিক সময়ে এটি আবারও বেড়েছে। অভিযোগ উঠছে, সাগরপথে মানবপাচারের বড় একটি অংশ কক্সবাজারকেন্দ্রিক, যা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রতিদিন একবেলা খাবার দেওয়া হতো। সাদা ভাত-মরিচ আর এক গ্লাস পানি। সকালের এ খাবার খেয়ে ২৪ ঘণ্টা পার করতে হতো। মাঝে একবার এক গ্লাস করে পানি মিলত। পর্যাপ্ত খাবার-পানির অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মারাও যান। কবর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই মরদেহগুলো সাগরেই সমাহিত করা হতো
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাবাহী ট্রলারডুবিতে ২১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তারা মূলত মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বল নজরদারিকে দায়ী করা হয়। সর্বশেষ নাফ নদী থেকে আট রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি সাগরপথে মানবপাচারের বিষয়টিকে ফের সামনে নিয়ে আসে।
এদিকে, মানবপাচারের এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হলেও তদন্ত ও মামলার নিষ্পত্তিতে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না। মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে আটক দালালরা বের হয়ে আসেন। নতুন করে শুরু করেন অপতৎপরতা।
কারা এবং কেন পাচারের শিকার হচ্ছেন
ভাগ্যোন্নয়নে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রথমে টার্গেট করেন স্থানীয় দালালরা। তারা বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান। বলা হয়, যেতে তেমন খরচ হবে না। হাত খরচটা সঙ্গে নিলেই হবে। এছাড়া অর্থবৈভব আছে এমন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া, এমনকি নিউজিল্যান্ড পাঠানোরও লোভ দেখানো হয়। নারীদের বলা হয়, হোটেল-মোটেল, পার্লার বা শপিং মলে ভালো কাজ দেওয়া হবে। বিনিময়ে দেওয়া হবে মোটা অঙ্কের বেতন।
ভাগ্যোন্নয়নে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রথমে টার্গেট করেন স্থানীয় দালালরা। তারা বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান। বলা হয়, যেতে তেমন খরচ হবে না। হাত খরচটা সঙ্গে নিলেই হবে। এছাড়া অর্থবৈভব আছে এমন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া, এমনকি নিউজিল্যান্ড পাঠানোরও লোভ দেখানো হয়। নারীদের বলা হয়, হোটেল-মোটেল, পার্লার বা শপিং মলে ভালো কাজ দেওয়া হবে। বিনিময়ে দেওয়া হবে মোটা অঙ্কের বেতন।
যাদের অর্থবৈভব আছে তাদের কাছ থেকে প্রথমে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তাদের ওপর জোরপ্রয়োগ করা হয় না। আর যারা আগাম টাকা দিতে পারেন না তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়, মালয়েশিয়া পৌঁছে টাকা দেবে। এমনও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় চাকরি পাওয়ার পর কিস্তিতে টাকা শোধ করলেও হবে। পরবর্তীতে তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়।
কেন বন্ধ হচ্ছে না সাগরপথে মানবপাচার, যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানবপাচারের মতো ঘটনায় পুলিশ অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাগরপথে মানবপাচার কেন ঠেকানো যাচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আমিরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোস্টগার্ড অবৈধ মানবপাচার রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা ও মানবপাচারের শিকার হওয়া দুই হাজার ৫৪৪ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড।
দেশের উপকূলে ১০টি রাডার স্টেশন দিয়ে কোস্ট গার্ডের সার্ভেল্যান্স সিস্টেম (নজরদারি পদ্ধতি) স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কক্সবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকায় আরও কার্যকর নজরদারি সম্ভব হবে— মনে করেন কোস্ট গার্ডের এ কর্মকর্তা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এক হাজার দুজন মানবপাচারের শিকার ভিকটিমকে উদ্ধার করেছি। পাশাপাশি ৩৩০টি অভিযান পরিচালনা করে ৯৫০ মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
‘আসলে মানবপাচারের ঘটনা কিন্তু লোভে পড়ে হয়। অনেকে আবার পাচারকারীদের সঙ্গে অর্থ ফেরতের নেগোসিয়েশন (সমঝোতা) করেন। কেউ আবার পুনরায় বিদেশযাত্রার আশায় নেগোসিয়েশন করেন। অনেক ক্ষেত্রে ভিকটিমও মামলা করতে চান না। আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিকটিমদের বুঝিয়ে মামলা করাই। তবে মানবপাচারের মামলা আমরা তদন্ত করি না। আর বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
অর্থাৎ সাগরপথে মানবপাচার বন্ধ না হওয়ার পেছনের কারণগুলোর অন্যতম হলো- মামলা না হওয়া, মামলা হলেও এর দীর্ঘসূত্রতা এবং অপরাধীদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সমঝোতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবাই কিন্তু বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন না। যাদের অভাব আছে, তারা একটু ভালো থাকার আশায় কম খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে এ পথ বেছে নিচ্ছেন। আবার অনেকে জেনে-বুঝে টাকা খরচ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে যারা যাচ্ছেন বা তাদের পরিবার যদি দায়িত্বশীল, সচেতন না হন; কোনোভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
‘একটি দুর্ঘটনার পর দু-একটি অভিযান পরিচালনা করলেই চলবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সারাবছরই সক্রিয় থাকতে হবে, অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া দেশীয় চক্রের সঙ্গে মানবপাচারে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিকভাবে তৎপরতা চালাতে হবে।’
জেইউ/এআর/এমএআর/