শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, সা. সম্পাদক নিয়ে আলোচনা
৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। টানা নয়বার তিনি দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগে তিনি এক প্রকার ‘বিকল্পহীন অবলম্বন’ হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও মানবকল্যাণকামী রাজনৈতিক দলটির সভাপতির দায়িত্ব পেলেও নিজ মেধা, মননশীলতা, অসাধারণ প্রতিভা ও কর্মগুণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন, দলের কান্ডারি হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল ‘শেখ হাসিনা’ই।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর শেখ হাসিনাই সর্বোচ্চ নয়বার দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় তাকে। সেই থেকে ৪০ বছর ধরে দলটিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা বিকল্পহীন অবলম্বন হয়ে উঠেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত ছিল। নেতৃত্ব তৈরি না হলে ভ্যাকিউম (শূন্যস্থান) তৈরি হতে পারে। নেতৃত্ব বাছাইয়ে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে দলের শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত এক ধরনের পেশাদারিত্ব মনোভাব তৈরি করা যেতে পারত। এটি হলে ভ্যাকিউমটা তৈরি হতো না।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। আবদুল মালেক উকিল একবার সভাপতি এবং সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার দলটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির ৭২ বছরে সর্বোচ্চ নয়বার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দলটির ইতিহাস বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২১টি জাতীয় সম্মেলনের মধ্যে দুবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান। আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি ও সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন দলটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির ৭২ বছরে সর্বোচ্চ নয়বার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার পরে আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন কে— এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত ছিল। শেখ হাসিনার ৪০ বছরের নেতৃত্বে তিনি বিকল্পহীন হয়ে উঠেছেন। কিন্তু যদি কোনো কারণে তিনি অপারগ হন, অবর্তমান হন তাহলে আওয়ামী লীগের হাল ধরবে কে? বঙ্গবন্ধু ৬৬-তে সভাপতি হয়ে ৭১-এর মধ্যে দ্বিতীয় সারির নেতা তৈরি করেছিলেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যাদের আমরা জাতীয় চার নেতা বলে চিনি। তাদের মতো নেতা তো এখন খুঁজে পাচ্ছি না। তাহলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে?
দলটির নেতারা বলছেন, আমরা তাকে (শেখ হাসিনা) বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু চিন্তা করতে পারি না। আমাদের সামনে বিকল্প নেই, বিকল্প তৈরি হয়নি। তার (শেখ হাসিনা) যে অভিজ্ঞতা, তার যে জ্ঞানের বহর, তার যে দক্ষতা এবং তিনি যেভাবে সারা বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ধারণ করে দল পরিচালনা করছেন, সেই সক্ষমতা আমাদের কারোর নেই। তারপরও আমরা মনে করি, তৃণমূলের অনুভূতি বঙ্গবন্ধু পরিবারকেন্দ্রিকই।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি কে হবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় কাউন্সিলের মাধ্যমে, সবসময় এটিই হয়ে আসছে— বলছেন তারা।
এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দল। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি কে হবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সবসময় কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। ঘরে বসে কোনো নির্বাচন হয় না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। চারবার সাধারণ সম্পাদক হন প্রয়াত জিল্লুর রহমানও। তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। দুবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও ওবায়দুল কাদের। একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররাই নেতৃত্বের পরিবর্তন আনেন। ভবিষ্যতে কখন, কোন পর্যায়ে পরিবর্তন হবে— সেটা তারা (কাউন্সিলররা) ঠিক করবেন। তাদের মাধ্যমেই আমাদের নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।
এখন পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় সম্মেলনে ১০ জন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। চারবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত জিল্লুর রহমানও। তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। দুবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও ওবায়দুল কাদের। একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নেতৃত্ব তৈরি করাই এখানে জরুরি ছিল। আওয়ামী লীগ যদি সজাগ না হয় তাহলে একটা ভ্যাকিউম তৈরি হবে। এ ভ্যাকিউম তৈরি হলে বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিও তৈরি হবে। এজন্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে কীভাবে নেতৃত্ব বাছাই করা যায়, একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত একটা ফর্মুলা যদি দাঁড় করানো যেত তাহলে ভ্যাকিউমটা তৈরি হতো না।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের তৃণমূল নেতাদের অনুভূতি সবসময় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রিক। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা যেমন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, ভবিষ্যতেও ওনার অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিদের মধ্যে কেউ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। গত ৪০ বছরে সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তন এসেছে। আগামীতেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন মুখ আসতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তিনি বারবার চেষ্টা করছেন, আমরা যেন তাকে বাদ দিয়ে বিকল্প চিন্তা করি। কিন্তু আমাদের সামনে বিকল্প নেই, বিকল্প সৃষ্টি হয়নি।’
‘তার (শেখ হাসিনা) যে অভিজ্ঞতা, তার যে জ্ঞানের বহর, তার যে দক্ষতা এবং তিনি যেভাবে সারা বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে চেনেন, এমন এমন মানুষের নাম উনি বলেন, আমরা যাদের চিনিই না। উনি যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের ধারণ করে দলটা পরিচালনা করছেন, সেই সক্ষমতা তো আমাদের কারও নেই। এ কারণে আমরা উনার ওপর বারবার চাপিয়ে দিচ্ছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনুভূতি ওনাকে কেন্দ্র করেই।’
‘আল্লাহ না করুন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি চলে যান তাহলে তো আমাদের বিকল্প লাগবে। সেখানেও তৃণমূলের অনুভূতিটা, আমরা যেটা বুঝি বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রিকই...। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে কে সামনে আসবেন, কাকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব— তখনই সিদ্ধান্ত হবে।’
এইউএ/এমএআর/