শিবিরের অর্ধশতাধিক তরুণ-সাবেক নেতৃত্বে জামায়াতের আস্থা

‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সংস্কার ছাড়া হলে সেটি হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচনের গণহত্যা।’ জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
‘নির্বাচনের তোড়জোড় কিংবা আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’—আলোচনায় যাই আসুক না কেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ কষেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে শতাধিক আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনেই প্রাথমিক প্রার্থীদের নাম-তালিকা দলীয় ফোরামে ঘোষণা করেছে। পার্লামেন্টারিয়ান বোর্ড সেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকার অনুমোদনও দিয়েছে। ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীগণ এলাকায় কাজ করছেন। নির্বাচনী যোগাযোগ ও গণসংযোগ শুরু করেছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৌড়ে দলটির বর্ষীয়ান নেতৃবৃন্দের তুলনায় এবার বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। যারা দীর্ঘসময় ছাত্রশিবিরের সঙ্গে রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে এখন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন ইউনিটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। দলীয় গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রনেতা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৌড়ে দলটির বর্ষীয়ান নেতৃবৃন্দের তুলনায় এবার বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। যারা দীর্ঘসময় ছাত্রশিবিরের সঙ্গে রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে এখন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন ইউনিটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। দলীয় গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই শতাধিক সাবেক ছাত্রনেতা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

কবে হচ্ছে নির্বাচন?
নির্বাচন কবে হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে ভোট ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তুতি আমাদের নেই। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইউএনডিপিসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন।
বৈঠক শেষে ইসির অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গত ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয়, সেখানে যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আর যদি আরেকটু সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন করা সম্ভব।
নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতির বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আমাদের তাড়াতাড়ির তারিখটা ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের অনুরোধ এলে তখন ইসি বিষয়টি সম্ভব কি না, বিবেচনা করতে পারে।’
‘আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমে ফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত হয় এমন কিছুর বিষয়ে কমিশনও সজাগ থাকবে।’

৩০০ আসনেই জামায়াতের তোড়জোড়
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় মাস ধরে দেশ চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার পাশাপাশি বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে জড়িতদের বিচার এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ন্যায় প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও।
৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। এরই মধ্যেই শতাধিক আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জামায়াত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেছে। আগস্টের হিসেবে তারা ছয় মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছে। এই ছয় মাসে যে পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে, তা নয়। তবে, অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
১৯৮২ সালে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল আলম খান মিলন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান, জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে
‘গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১০ লাখ মানুষ মারা যাবে। ৫ আগস্টে তাদের পতনের পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও গুজবের ন্যায় কিছু ঘটেনি। তবে তারা থেমে নেই। তারা ক্যু-পাল্টা ক্যু চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই ন্যূনতম সংস্কারের পক্ষে আমরা।’
‘জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনেই প্রাথমিক প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। পার্লামেন্টারিয়ান বোর্ড সেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকার অনুমোদন দিয়েছে। ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি আছে আমাদের। সেই লক্ষ্যে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীগণ এলাকায় কাজ করছেন। নির্বাচনী যোগাযোগ ও গণসংযোগ শুরু করেছেন।’
তবে, আগামী নির্বাচনে ইসলামী ও অন্য ছোট দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমঝোতা করে ভোটের লড়াইয়ে নামারও সম্ভাবনা রয়েছে জামায়াতের। এমনকি ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে প্রয়োজনে সব দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করারও চিন্তা রয়েছে দলটির। সেক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীর সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।

অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘জামায়াতের আমির মতবিনিময় করেছেন। পরস্পরের প্রতি সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমির যেখানেই গেছেন সেখানেই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিছুদিন আগে বরিশালে গিয়েও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ফরিদপুরেও দেখা করেছেন। এক্ষেত্রে ইসলামপন্থি দল ও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে একটি অনুকূল পরিবেশও তৈরি হয়েছে।’
পিরোজপুরে তিনটি আসনে ঘোষিত তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজন আল্লামা সাঈদীর পুত্র। পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী) আসন থেকে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী ও পিরোজপুর-২ (নেছারাবাদ, কাউখালি ও ভান্ডারিয়া) আসন থেকে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এবং পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসন থেকে মঠবাড়িয়া উপজেলা আমির অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ আব্দুল জলীল নির্বাচন করবেন
বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে কোনো বিরোধ তৈরি হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘না, সে রকম কিছু নেই। যে কোনো দল যে কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে। এটা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফুটে উঠুক, সেটা আমরা চাই। এটা ছিল না বলেই রাজনীতিতে প্রতিহিংসা, মারামারি হয়েছে। জগদ্দল পাথরের মতো স্বৈরাচার চেপে বসেছিল।’
এদিকে, দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার আলোচনার পাশাপাশি সব আসনে নির্বাচন করতে তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্ব দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, সেক্রেটারিসহ আঞ্চলিকভাবে প্রভাবশালী সাবেক ছাত্রনেতাদের নির্বাচনের মাঠে রেখেছে দলটি।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রম পুরোদমে চালাচ্ছে দলটি। এসব কর্মসূচি ঘিরে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষনেতারা সারা দেশ সফর করছেন।
নির্বাচনী দৌড়ে অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী সাবেক ছাত্রনেতা
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল আলম খান মিলন ঢাকা-১১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১ আসন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চট্টগ্রাম-১০ আসন, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে লড়বেন জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট-১ আসন, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসন, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬ আসন থেকে লড়বেন।
এ ছাড়া মানিকগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় সরব আছেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে লড়বেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মুহাম্মদ শিশির মনির, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩ (দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী) আসন থেকে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন। জামায়াত থেকে তাকে ওই আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৬তম সভাপতি ও শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আতিকুর রহমান ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া ও সদর উপজেলার একাংশ) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মহানগর সদর থানার আমির অধ্যক্ষ সালাহউদ্দিন আইউবী, কুমিল্লা-৫ আসন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, শেরপুর সদর-১ আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মু. গোলাম কিবরিয়া ভিপি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসন থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলা) আসন থেকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করবেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মপরিষদ সদস্য মাজেদুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসন থেকে লড়বেন ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব আলম সালেহী, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ) আসন, প্রয়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর জামাতা ও শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল কুমিল্লা-৮ আসন, বর্তমান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম-১ আসন, সাবেক কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক শেখ নেয়ামুল করিম বাকসু জিএস ঝালকাঠি-২ আসন, রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি এমাজ উদ্দিন মন্ডল রাজশাহী সদর, সাবেক কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক মতিউর রহমান দিনাজপুর-১ আসন, খুলনা-৬ আসন থেকে (কয়রা-পাইকগাছা) কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক অফিস সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ঢাকা-৮ (শাহবাগ, মতিঝিল, রমনা) আসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার শাকের উল্লাহ কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন, সাবেক কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আমিনুল ইসলাম মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা) আসন, রাজশাহী মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. কেরামত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, সাবেক কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক হারুন অর রশীদ লালমনিরহাট-৩ আসন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন।
পিরোজপুরে দুই আসনে লড়বেন সাঈদীপুত্র মাসুদ ও শামীম
এদিকে, পিরোজপুরে তিনটি আসনে ঘোষিত তিন প্রার্থীর মধ্যে দুজন আল্লামা সাঈদীর পুত্র। পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী) আসন থেকে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী ও পিরোজপুর-২ (নেছারাবাদ, কাউখালি ও ভান্ডারিয়া) আসন থেকে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এবং পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসন থেকে মঠবাড়িয়া উপজেলা আমির অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ আব্দুল জলীল নির্বাচন করবেন।
পাবনা-১ থেকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে নিজামীপুত্র ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে।
তবে, অসুস্থতাজনিত কারণে ১৯৮৪ সালে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক তাসনিম আলম এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক আমির ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামের নির্বাচন করার সম্ভাবনা কম।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সারা দেশে সভা ও সমাবেশ করছে। সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে আগামী নির্বাচন ও সরকার গঠনের বিষয়টি। ফ্যাসিবাদ ও চাঁদাবাজরা যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিলে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক দেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জামায়াত এখনও চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন এখনও অনেক দূরে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এখন প্রাথমিকভাবে সিলেকশন করা হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে নির্বাচনে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত। একটি দল এককভাবে, জোটগতভাবে অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। এই তিন অপশন সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি।’
জেইউ/এমএআর