ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চায় সরকার

কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করে এ তিন দেশের সঙ্গে এমন সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে ঢাকা।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে বেশি মাখামাখি নয় বরং বিগত সরকারের সময়ে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক যে অবস্থায় ছিল, সেটি স্বাভাবিক করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে বিশেষ আলাপকালে বর্তমান সরকারের এমন অবস্থানের কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কারণ, তিনটি দেশই আমাদের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই আমাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করে দেশ তিনটির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায়ও নেই।
আরও পড়ুন
‘রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পদত্যাগের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ফলে উদ্ভূত জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অস্বস্তির অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নয়াদিল্লির সঙ্গে এ অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক স্থাপন করা, যা পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে এবং উভয় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে পারে; সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কিছু বাধা আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এলে বাধা আসে। আমরা উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এ বাধাগুলো কাটিয়ে একটি ভালো ও কার্যকর সম্পর্ক তৈরি লক্ষ্যে সচেষ্ট।’
আরও পড়ুন
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, বেইজিংয়ের সঙ্গে সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। চীন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
পাশাপাশি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না বলেও প্রত্যাশা ঢাকার। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করছি না। আমাদের অনুমান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে।’
‘পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বজায় রাখার কোনো কারণও নেই’ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তৌহিদ হোসেন। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েন রাখার একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়াস ছিল। তবে, আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। পাকিস্তানও সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমরা সেটি স্বাগত জানিয়েছি।’
আরও পড়ুন
তার মতে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবেচনা অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্র-যোগাযোগ পুনরায় চালু করা উভয়ের জন্য লাভজনক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে চায় না। বরং নতুন করে যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট।’
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দুই দেশের মধ্যে কিছু সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে, যদি আমরা এ বিষয়গুলোতে স্থির থাকি তাহলে কোনো পক্ষই লাভবান হব না। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা এবং সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করব। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অন্য যে কোনো দেশের মতোই দেখতে চাইব’— ঢাকা পোস্টকে বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এনআই/