৫ মিনিটের রাস্তা ৩০ মিনিটেও হয় না পার
উত্তরার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে এয়ারপোর্ট বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আগে রাস্তা ফাঁকা থাকলে স্বাভাবিকভাবে পথটুকু বাসে পার হতে সময় লাগত মাত্র ৪-৫ মিনিট। যানজট, ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পার হওয়া গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজের জন্য ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ শুরুর পর এই পথটুকু পাড়ি দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিনিবাস, সিনএনজি ও বাইক। সরু রাস্তার ওপর বিশৃঙ্খলভাবে যাত্রীর জন্য এসব যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখায় তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। যা যাত্রীদের কষ্ট বাড়িয়েছে বহুগুণ।
উত্তরার জসীমউদ্দিন বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ির ধীরগতি শুরু হচ্ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টারের পর শুরু হচ্ছে মূল যানজট। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা অভিমুখে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের শুরুর দিক থেকে মূল মহাসড়কের তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা খনন করে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। ঢাকা অভিমুখে যেসব গাড়ি সামনের দিকে যেতে চাইছে তাদের এই জায়গায় এসে সরু সড়কে ঢুকতে হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তরার জসীমউদ্দিন বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ির ধীরগতি শুরু হচ্ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টার পার হওয়ার পর শুরু হচ্ছে মূল যানজট। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা অভিমুখে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের শুরুর দিক থেকে মূল মহাসড়কের তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা খনন করে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। ঢাকা অভিমুখে যেসব গাড়ি সামনের দিকে যেতে চাইছে তাদের এই জায়গায় এসে সরু সড়কে ঢুকতে হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন। আবার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস ও মিনিবাসগুলো সরু সড়কের পাশে এলোমেলোভাবে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে আর কোনো গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এই রাস্তাটুকু পার হতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকতে হচ্ছে। আবার ফ্লাইওভারে উঠতেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।
এমন অবস্থায় একদিকে সরু সড়কে যানচলাচলের সিঙ্গেল লাইন, অপরদিকে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের ফলে তৈরি হচ্ছে মহা ভোগান্তি। অথচ তার পাশেই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এমআরটি-১ ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্পের কাজ চলমান। সব ধরনের যানবাহন থামানো নিষেধ’। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা বিরক্ত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘অফিসের নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে বের হলেও এয়ারপোর্টের যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে’— জানিয়ে নুরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘একদিকে রাস্তা কাটা, অন্যদিকে বাসগুলো এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে যানজট চলে যায় একেবারে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত। যেহেতু রাস্তা কাটা হয়েছে, উচিত ছিল এই জায়গায় ভালো ট্রাফিকিং ব্যবস্থা রাখা। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। কোনো নিয়মশৃঙ্খলা এই জায়গায় নেই। গাড়িগুলো যে যার ইচ্ছামতো রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।’
উত্তরা রাজউক কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ইসলাম বলেন, কলেজে যেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু আসার সময় প্রচণ্ড যানজটে নাজেহাল হতে হয়। জসীমউদ্দীন থেকে আসতে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। কলেজ থেকে ফেরার সময় ক্লান্ত হলেও মাঝেমধ্যে যানজটে বিরক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে রাস্তাটুকু পার হই। শুধু ওই অংশটুকু নয়, আশকোনা হাজিক্যাম্পের রাস্তাও খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সেখানেও গাড়ি চলে না। প্রতিদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমাকে দুই কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। অথচ জনবহুল এলাকা বিবেচনায় এসব কাজ দ্রুতগতিতে হওয়া এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা সুন্দর হওয়া উচিত ছিল।
এমন অবস্থায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুর, মাটিকাটা, ইসিবি, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ এলাকা থেকে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে আসা রোগীরা। মুসলিমা ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, উত্তরায় অনেকগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত রোগীরা ডাক্তার দেখাতে আসেন। কিন্তু বাসায় ফেরার সময় এই জায়গায় প্রচণ্ড যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। যানজট এতই দীর্ঘ হয় যে ফ্লাইওভারে উঠে সরাসরি পার হয়ে যাওয়ার অবস্থাও থাকে না। এমনও হয়েছে, এই রাস্তাটুকু পার হতে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। রোগীরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হন, আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাভাবিক সুস্থ মানুষই ঠিক থাকতে পারেন না।
‘একদিকে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, অন্যদিকে সরু পথের ওপর আবার বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। বিষয়টি অন্তত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তা না হলে দিনদিন মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।’
অবশ্য, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বাড়তি যানজটের বিষয়ে আগেভাগেই সবাইকে সতর্ক করেছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজের জন্য এয়ারপোর্ট রোডে ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম চলছে। সেজন্য যানজটের আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এই রুটে চলাচলকারী জনসাধারণ ও পরিবহনকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিনটি স্টেশন থেকে ধীরে ধীরে পরিষেবা লাইন স্থানান্তর করা হচ্ছে। এটি শেষ হতে আরও সময় লাগতে পারে। কারণ, ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইনের দুটি অংশ থাকবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ যাবে মাটির নিচ দিয়ে এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার যাবে মাটির ওপর দিয়ে।
অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্র্যাফিক উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সোহেল রানা জানান, সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে এখানে এসেছেন। সড়কে নিয়মবহির্ভূতভাবে যানবাহন দাঁড়ানোর বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁড়া রাস্তায় কষ্টে আছেন আশকোনা-দক্ষিণখানের মানুষ
বিমানবন্দর মূল সড়ক থেকে ভেতরের দিকের হাজিক্যাম্প ও আশকোনা এলাকায় প্রবেশের সড়কটির উন্নয়নকাজ চলমান। এ কারণে বাসস্ট্যান্ডেই যানবাহন আটকে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতির এই উন্নয়ন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অত্র এলাকার মানুষের। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাজি ক্যাম্পের সামনে চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। আন্ডার পাস নির্মাণকাজের জন্য পুরো এলাকা টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। একপাশের ফুটপাত দিয়ে পায়ে হেঁটে মানুষজন চলাচল করতে পারছেন। এই স্বল্প জায়গার ফুটপাতের অধিকাংশ স্থান দখল করে নিয়েছেন হকারেরা। তার সামনে আশকোনা বাজার থেকে শুরু হয়েছে মূল রাস্তা খুঁড়ে ড্রেন নির্মাণের কাজ। এরপর আরও অন্তত ৭০০ মিটারের বেশি সড়ক খনন করে মাত্র রড বসানো হয়েছে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করা বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের মালিকেরা।
তারা বলছেন, বিমানবন্দরের পাশের এই এলাকায় প্রতিদিন হজযাত্রীসহ অসংখ্য মানুষ আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকতেন। যা এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। পুরো মাসে ১০-১২ জন বর্ডারের দেখাও পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে এমন রাস্তার কারণে সবার ব্যবসায়িক অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আব্দুল আউয়াল নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তা খারাপ থাকায় বিদেশযাত্রীরা আর এখানে আসতে পারেন না। এলাকার হোটেলগুলোর প্রধান কাস্টমারই হচ্ছেন তারা। রাস্তা খারাপ থাকায় কেউ লাগেজ নিয়ে এদিকে আসতে পারছেন না। ফলে ব্যবসা একেবারে না-ই হয়ে গেছে। সড়কের এই খানাখন্দ কবে শেষ হবে, আল্লাহ ভালো জানেন। আমরা এখন খুবই বিপাকে আছি।
ফরিদ রেজা নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফ্লাইট ধরার জন্য অনেকে আগেভাগে এসব হোটেল-মোটেলে এসে অবস্থান নিতেন। প্রতিদিন প্রতিটি হোটেলই ভরপুর থাকত। কিন্তু এখন একেবারে দৈন্যদশা। অনেকে হোটেল বন্ধ করে রেখেছেন। কারণ, কাস্টমার না থাকায় কারেন্ট বিলও উঠছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।
রাস্তা বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের স্কুলে নিতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে— জানিয়ে এনামুল হাসান নামের এক অভিভাবক বলেন, একেবারে খানাখন্দে ভরপুর। এই শীতের মধ্যে বৃষ্টি নাই, তবুও রাস্তায় পানি জমে আছে। এরপর আবার আধা কিলোমিটার রাস্তা কাটা। সবমিলিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতটুকু পথ পায়ে হেঁটে বাচ্চারা যেতে চায় না। সকালবেলা প্রতিটি অভিভাবককে অনেক কষ্ট করতে হয়। যারা এই দায়িত্ব পালন করছেন তাদের উচিত দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করা।
বিষয়টি নিয়ে আশকোনা-দক্ষিণখান সড়কে কাজ করা শ্রমিক ও উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরএইচটি/এমএআর