দেশে ‘এআই’ নিয়ে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সংক্ষেপে এআই। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, শেখার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের মতো গুণাবলি কম্পিউটার বা মেশিনের মাধ্যমে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। বর্তমান পৃথিবীতে বেশ আলোচিত বিষয় এ প্রযুক্তি। যদিও এর পক্ষে-বিপক্ষে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা মত ও গবেষণা চালু রয়েছে।
তবে, একটি বিষয়ে সবাই একই মত পোষণ করেন যে, এআই বর্তমান যুগের সবচেয়ে আলোচিত এবং দ্রুত বিকশিত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যার রয়েছে কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষের মতো চিন্তা করা, শেখা এবং সমস্যার সমাধান করার সক্ষমতা। এবার এ ‘এআই’ নিয়েই বাংলাদেশে প্রথম পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি। তারা দেশের প্রথম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করেছে।
এমন উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রয়োগ শিখতে পারবেন। এ ছাড়া বিশ্বমানের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা, এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহারে সক্ষম পেশাজীবী গড়ে তোলা, প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, বাংলাদেশকে এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, দেশে এআইভিত্তিক উদ্ভাবন এবং দেশের বিভিন্ন খাতে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার সুযোগও তৈরি হবে চার বছর মেয়াদি ‘বিএসসি ইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স’ স্নাতক কোর্সের মাধ্যমে। একই সঙ্গে কারিকুলামভিত্তিক এ পড়াশোনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে এআই শিক্ষার প্রসার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে বলেও প্রত্যাশা করছেন তারা।
আরও পড়ুন
গ্রিন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি কেবল একজন শিক্ষার্থীকে তার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতা বাড়াবে না বরং প্রযুক্তিচালিত ভবিষ্যতের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যও প্রস্তুত করবে। কারণ, বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির প্রভাব যত বাড়ছে ততই এআই ও ডেটা সায়েন্সে দক্ষ পেশাদারদের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। সুযোগ তৈরি হচ্ছে গুগল, মাইক্রোসফট, আমাজন ও টেসলার মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরির। কারণ, ‘এআই’ এখন শুধু শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেই নয় বরং স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি, বাণিজ্য, এমনকি কৃষি খাতেও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং হচ্ছে।
নতুন এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রয়োগ শিখতে পারবেন। এ ছাড়া বিশ্বমানের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা, এআই প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহারে সক্ষম পেশাজীবী গড়ে তোলা, প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, বাংলাদেশকে এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, দেশে এআইভিত্তিক উদ্ভাবন এবং দেশের বিভিন্ন খাতে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার সুযোগও তৈরি হবে চার বছর মেয়াদি ‘বিএসসি ইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স’ স্নাতক কোর্সের মাধ্যমে
বাংলাদেশেও বাড়ছে ‘এআই’ ব্যবহার
গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী পাঁচ বছরে এ খাতে বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের প্রায় ২৮ শতাংশ বাড়বে। যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভবিষ্যতমুখী কর্মক্ষেত্রের আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারি খাতে এআই ও ডেটা সায়েন্সের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্মার্ট চাষাবাদ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় উন্নতি, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক করা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়করণে ‘এআই’ ভূমিকা পালন করছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ, যুগোপযোগী ও স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে ‘এআই অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স’ বিষয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্নাতক কোর্স সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
৪ বছরের স্নাতক প্রোগ্রামে ‘এআই’ নিয়ে যা শেখাবে গ্রিন ইউনিভার্সিটি
এআই নিয়ে নিয়ে স্নাতক পর্যায়ের এ কোর্সটি প্রয়োগমুখী শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেজন্য শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখাতে আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাখা হয়েছে উন্নত ল্যাব ব্যবস্থাপনা। যেখানে শিক্ষার্থীরা এআই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমের সুযোগ পাবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চার বছরের বিএসসি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স, নিউরাল নেটওয়ার্ক, ক্লাউড কম্পিউটিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং এআই ইথিক্সসহ বিভিন্ন আধুনিক বিষয় সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করবেন। একই সঙ্গে গ্রিন ইউনিভার্সিটির উন্নত ল্যাব এবং এতে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ শিক্ষার্থীদের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা দেবে। যা তাদের কর্মজীবনে সফল হতে সহায়তা করবে।
গ্রিন ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গড়ার একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এমন দক্ষতা অর্জন করবেন যা তাদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে।
এ ছাড়া ডেটা সায়েন্সকে নতুন দিনের নতুন আবিষ্কার হিসেবে কারিকুলামভিত্তিক পড়াশোনায় অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তথ্যের বিশ্লেষণ, ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল হিসেবে ডেটা সায়েন্স ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সমাধান বের করতে সহায়তা করবে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন- ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদিতে কাজ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন।
আরও পড়ুন
ডেটা সায়েন্সের স্নাতকেরা ডেটা সায়েন্টিস্ট, এআই ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট, এনএলপি ইঞ্জিনিয়ার, বিগ ডেটা অ্যানালিস্ট, এআই কনসালট্যান্ট এবং আরও বিভিন্ন পেশায় কাজ করার সুযোগ পাবেন। এ প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করবে, যেখানে তারা উন্নত কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
রয়েছে দেশ-বিদেশে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রিন ইউনিভার্সিটি বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি শুধু শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেই দায়িত্ব শেষ করে না, পাশাপাশি তাদের ক্যারিয়ারের দিকনির্দেশনা প্রদান, ইন্টার্নশিপ ও চাকরিপ্রাপ্তির জন্য কাজ করে। এজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেন্টার ফর ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট (সিসিডি)। এ ছাড়া গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যেন ক্রেডিট ট্রান্সফার করে দেশ-বিদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন সেই সুযোগও রাখা হয়েছে।
নান্দনিক ক্যাম্পাসে সাশ্রয়ী খরচে হওয়া যাবে এআই গ্র্যাজুয়েট
অবকাঠামোর দিক দিয়ে অনন্য সুবিধা পাচ্ছেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এজন্য ঢাকার সন্নিকটে পূর্বাচল আমেরিকান সিটির নান্দনিক পরিবেশে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে যেতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে অর্ধশতাধিক বাস ও মাইক্রোবাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে সবধরনের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য সাশ্রয়ী খরচে কোর্স সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গণিতে দক্ষ হলে সহজ হবে ‘এআই’ শেখা
গণিতে দক্ষ হলে খুব সহজেই শিক্ষার্থীরা এআই শিখতে পারবেন। তবে, কেউ যদি আগ্রহী হন তাহলে শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করেও সম্ভব হবে নতুন এ প্রযুক্তির জ্ঞানলাভ। গ্রিন ইউনিভার্সিটির ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স’ বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. মুহাম্মদ আবুল হাসান এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এআই এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মেশিন বা কম্পিউটার প্রোগ্রামকে মানুষের বুদ্ধিমত্তার মতো আচরণ করতে শেখানো হয়। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে কম্পিউটারে এমন ক্ষমতা তৈরি করা, যাতে তারা চিন্তা করতে, শিখতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং সমস্যার সমাধান করতে পারে। স্বয়ংক্রিয় এ ব্যবস্থাপনা উন্নত দেশগুলোকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়েছে। সেই তুলনায় আমরা (বাংলাদেশ) বেশ পিছিয়ে। এর মূল কারণ হচ্ছে, আমাদের এখানে এখনও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দেওয়া হয়নি। মূলত, এ কারণেই গ্রিন ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপকেরা বাংলাদেশে প্রথম এআই নিয়ে স্নাতক কোর্স চালু করেছেন। এখানে আমরা অত্যাধুনিক সুবিধাসহ মোট ১৩৮ ক্রেডিটের সিলেবাস প্রণয়ন করেছি। একই সঙ্গে একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছি। যেখানে সবসময় শিক্ষার্থীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসহ ডেটা সায়েন্স ল্যাব এবং দেশ-বিদেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষকদের সহযোগিতা পাবেন।
বাংলাদেশের আইটি শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অসংখ্য কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান ও চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশি পেশাদারদের দেশি ও বৈশ্বিক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দিনদিন বাড়ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রযুক্তি খাতের বিস্তার, স্টার্টআপ সংস্কৃতি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, উচ্চ বেতন ও সুবিধা, উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ভালো র্যাঙ্কিং ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। এসব বিষয় আমলে নিয়েই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি কোর্স চালু করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
তিনি আরও বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে একেবারে গভীর পর্যন্ত সব বিষয় আমাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলতে গেলে, ছোট থেকে শুরু করে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজের যত মডেল রয়েছে সবকিছু এখানে শেখানো হবে। যেমন- বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হচ্ছে চ্যাটজিপিটি। এখানে যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলে এটি খুব সহজেই উত্তর দিতে পারে। তবে, সেই উত্তর দেওয়ার জন্য তার বিশাল রকমের অভ্যন্তরীণ কর্মযজ্ঞ পালন করতে হয়। এ কাজগুলোই আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখাব। যাতে তারা আগামী দিনে বাংলাদেশের অটোমেশন খাতে সব ধরনের কাজ করতে পারেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আমাদের সমস্যাগুলো আমরা নিজেরাই সমাধান করতে চাই।
আরও পড়ুন
প্রযুক্তির বিকাশে ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগও চালু করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি
বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি ডিগ্রির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে দেশের বিভিন্ন খাতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গ্রিন ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি ‘বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রোগ্রামটি চালু করেছে। এ ছাড়া সিলেবাস এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গ্রাজুয়েটগণ বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ পান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আইটি শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অসংখ্য কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান ও চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশি পেশাদারদের দেশি ও বৈশ্বিক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দিনদিন বাড়ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রযুক্তি খাতের বিস্তার, স্টার্টআপ সংস্কৃতি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, উচ্চ বেতন ও সুবিধা, উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ভালো র্যাঙ্কিং ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। এসব বিষয় আমলে নিয়েই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি কোর্স চালু করেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যা পড়াবে গ্রিন ইউনিভার্সিটি
গ্রিন ইউনিভার্সিটির ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে আমরা বুঝতে পেরেছি যে সফটওয়্যার উন্নয়ন, ডিজাইন ও অপ্টিমাইজেশনের জন্য একটি বিশেষ বিভাগের প্রয়োজন। নতুন বিভাগটি আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামটি আধুনিক পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, টেস্টিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে শিখতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ানো কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে- সফটওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট অ্যানালাইসিস, স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড কনসেপ্টস, ডেটা স্ট্রাকচার অ্যান্ড অ্যালগরিদম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সফটওয়্যার সিকিউরিটি, ওয়েব টেকনোলজি, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সিস্টেম অ্যানালাইসিস, মাইক্রোপ্রসেসর ও কম্পিউটার আর্কিটেকচার, ম্যালওয়্যার অ্যাটাক, ডিজাইন, সফটওয়্যার টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, অটোমেশন, সিম্যুলেশন ও মডেলিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, ডেটা মাইনিং, ডেটা সায়েন্স, বিগডেটা, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস ও বিজনেস কমিউনিকেশনস।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে অনার্স, মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দক্ষ জনশক্তির জোগান দিতে ভূমিকা রাখবে গ্রিন ইউনিভার্সিটি : উপাচার্য
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে দেশ-জাতি ও বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তির জোগান দিতে নতুন এ দুই বিভাগ বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, শিল্পবিপ্লবের এ যুগে এআই মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং জীবনকে সুন্দর করার অপরিহার্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধুমাত্র পদার্থ, রসায়ন ও গণিত বিভাগ চালু ছিল। পরবর্তীতে যুগের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এসেছে। মূলত, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি অংশ হচ্ছে এআই ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমানে এআইকেই সব অটোমেশনের মূল মন্ত্র বা চালিকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
‘বিশ্বব্যাপী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে এআই-এর বিকল্প নেই। প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে, ফলে এআইনির্ভর জব মার্কেট বা বাজার দিনদিন আরও প্রসারিত হচ্ছে। প্রসারিত এ বাজার মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। এ জনশক্তির জোগান দিতেই গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ‘বিএসসি ইন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স’ ও ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের নতুন দুটি বিভাগের সূচনা করেছে। ইতোমধ্যে এআই নিয়ে বাংলাদেশে আমরাই প্রথম কার্যক্রম শুরু করেছি। বিশ্বব্যাপী এআই ও ডেটা সাইন্সের চাহিদা অনেক। আমরা প্রত্যাশা করছি, নতুন দুটি বিভাগ সংযুক্তির মাধ্যমে দেশ-জাতি ও বিশ্বের উন্নয়নে গ্রিন ইউনিভার্সিটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারবে।’
আরএইচটি/