ইউএনডিপিকে ‘ঘোল খাইয়ে’ ৩ দফায় ভর্তুকি লুটেছেন ব্রামার আসাদ
ভুয়া কাগজ বানিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) পরিচালিত প্রজেক্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) সদ্য সাবেক সভাপতি মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বাস্তবে কোনো ফ্যাক্টরি বা চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না থাকলেও ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা, ২০০২ সালে প্রোডাকশন শুরু এবং ১১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করছেন— এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি তিনটি কিস্তিতে লোপাট করেছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কুলিং পয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’। কিন্তু অনুসন্ধান করে ওই সময় এমন কোনো চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
উল্টো জানা গেছে, তিনি মাত্র দুই বছর আগে (২০২২ সালে) মানিকগঞ্জের খাসের চর গ্রামে ১৫ শতাংশ জমি কেনেন। যার আরএস নম্বর ২***৩/২***৪ (ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হয়েছে)। সেই জমিতে ২০২৩ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন ব্যবহার করে একটি শেড তৈরি করা হয়। তবে, সেখানে নেই কোনো যন্ত্রপাতি বা কোনো সামগ্রী। কোনো দিন চালু হয়নি একটি মেশিনও। কিন্তু কাগজপত্রে ২০১৭ সালেই দেখানো হয়েছে একটি কাল্পনিক চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে। প্রজেক্টের ভর্তুকি পেতে জমা দেওয়া তথ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ঠিকানা হেড অফিস হিসেবে উল্লেখ করলেও চতুর আসাদুজ্জামান দেননি ফ্যাক্টরির কোনো ঠিকানা। ‘ফ্যাক্টরি অফিস’ ঘরটিতে তিনি দিয়েছেন শুধু দুটি মোবাইল নম্বর। কিন্তু ভর্তুকি পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই ফ্যাক্টরির ঠিকানা উল্লেখ করেছে। আর মোহাম্মদপুরে তার উল্লিখিত ঠিকানায় একটি এসি সার্ভিস সেন্টার ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
মাত্র দুই বছর আগে (২০২২ সালে) মানিকগঞ্জের খাসের চর গ্রামে ১৫ শতাংশ জমি কেনেন। যার আরএস নম্বর ২***৩/২***৪ (ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হয়েছে)। সেই জমিতে ২০২৩ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন ব্যবহার করে একটি শেড তৈরি করা হয়। তবে, সেখানে নেই কোনো যন্ত্রপাতি বা কোনো সামগ্রী। কোনো দিন চালু হয়নি একটি মেশিনও। কিন্তু কাগজপত্রে ২০১৭ সালেই দেখানো হয়েছে একটি কাল্পনিক চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে
মূলত, বাংলাদেশে ওজোনস্তরের ক্ষতি ঠেকাতে মন্ট্রিল প্রোটোকলের আওতায় একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট পরিচালনা করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। যার নাম ‘এইচপিএমপি প্রজেক্ট ২’। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল এর কার্যক্রম। এ প্রজেক্টের আওতায় ওজোনস্তরের সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং বিকল্প পদার্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পাঁচটি রেফ্রিজারেন্ট উৎপাদনকারী ও একটি চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে (মোট ছয়টি) তিন দফায় অর্থ সহায়তা বা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টরিতে ওজোনস্তরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ‘হাইড্রো-ক্লোরোফ্লুরোকার্বন’ (এইচসিএফসি) এর ব্যবহার নির্দিষ্ট ধাপে ধাপে শূন্যে নামিয়ে আনা।
এ জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মোট ছয়টি কোম্পানি ইউএনডিপির ‘এইচপিএমপি প্রজেক্ট ২’ এর আওতাভুক্ত হয়। কোম্পানিগুলো হচ্ছে— ইউনিটেক প্রোডাক্টস (বিডি) লিমিটেড, এলিট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসি বাজার ইন্ডাস্ট্রি, সুপ্রিম এয়ার কন্ডিশনার, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং কুলিং পয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস। এ ছয়টি কোম্পানির সঙ্গে ইউএনডিপির একটি চুক্তির মেমোরেন্ডাম (এমওএ) স্বাক্ষরিত হয়। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং একটি চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে শর্তারোপ করা হয়।
তাদের মধ্যে পাঁচটি এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনকারী কোম্পানিকে এসির গ্যাস আর-২২ (R-22) এর উৎপাদন বন্ধ করে এইচএফসি আর-৪১০ (R-410) এবং চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে লো-জিডব্লিউপি এর বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব আর-৩২ (R-32) এ রূপান্তর করতে বলা হয়।
তবে, বাস্তবতা হচ্ছে চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসাদুজ্জামানের কথিত প্রতিষ্ঠান ‘কুলিং পয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’ এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এরপরও শুধু জাল কাগজ ব্যবহার করে কাগজে-কলমে ফ্যাক্টরির অস্তিত্ব দেখিয়ে ইউএনডিপিকে একপ্রকার ঘোল খাইয়ে তিন কিস্তিতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকির টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
ট্রেড বহির্ভূত ৮৭ জনকে দিয়েছেন ব্রামার সদস্যপদ
অভিযোগ উঠেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্রামার সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন এবং সদ্য সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৮৭ জনকে বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) সদস্যপদ দিয়েছেন। এ ছাড়া নিজস্ব বলয় বাড়িয়ে নামমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়ে ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ বিবেচনায় এ সংগঠনে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তোলেন তিনি। একই সঙ্গে বিরোধী মতের সদস্যদের দমনে এবং পরবর্তী নেতৃত্ব যেন আসতে না পারে সেজন্য গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যপদ লাভে সরকারের ও সংগঠনের নীতিমালার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ট্রেড বহির্ভূত বিভিন্ন ব্যক্তিদেরও টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন ব্রামার সদস্যপদ।
ইউএনডিপির প্রজেক্টের আওতায় ওজোনস্তরের সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং বিকল্প পদার্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পাঁচটি রেফ্রিজারেন্ট উৎপাদনকারী ও একটি চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে (মোট ছয়টি) তিন দফায় অর্থ সহায়তা বা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টরিতে ওজোনস্তরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ‘হাইড্রো-ক্লোরোফ্লুরোকার্বন’ (এইচসিএফসি) এর ব্যবহার নির্দিষ্ট ধাপে ধাপে শূন্যে নামিয়ে আনা
২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত ‘বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২’ এর প্রণীত আইনে সংগঠনের সদস্যপদ লাভের শর্তে বলা হয়েছে— ‘কোনো ব্যক্তি তার ট্রেড লাইসেন্সে উল্লিখিত শ্রেণির ব্যবসা ব্যতীত অন্য কোনো শ্রেণির অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে পারবেন না’। তবে অনুসন্ধান বলছে, ব্রামায় প্রায় ৮৭ জন ট্রেড বহির্ভূত ব্যক্তি সদস্যপদ লাভ করেছেন। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তার (আসাদুজ্জামান) ব্যাপারে মুখ খুলতে সাহস করেননি কেউ। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর এ বিষয়ে অভিযোগ গড়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। যেখানে ব্রামার কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ব্রামার বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে (২০২৩-২৫) কাউকে নমিনেশন ফরম কিনতে দেয়নি। যা তৎকালীন নির্বাচন কমিশন অবহিত আছে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এর আগের ২০২১-২৩ নির্বাচনেও একই কায়দায় বিনা ভোটে নির্বাচন সম্পন্ন করে। বর্তমান সভাপতি আসাদুজ্জামান ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা। তিনি (আসাদুজ্জামান) ও সাবেক কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন মিলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ব্রামাকে চর দখলের মতো জবর দখল করে রেখেছেন।
ইউএনডিপির প্রজেক্টের আওতায় ওজোনস্তরের সুরক্ষা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং বিকল্প পদার্থ ব্যবহারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পাঁচটি রেফ্রিজারেন্ট উৎপাদনকারী ও একটি চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে (মোট ছয়টি) তিন দফায় অর্থ সহায়তা বা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্যাক্টরিতে ওজোনস্তরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ‘হাইড্রো-ক্লোরোফ্লুরোকার্বন’ (এইচসিএফসি) এর ব্যবহার নির্দিষ্ট ধাপে ধাপে শূন্যে নামিয়ে আনা
‘আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই এটি মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু এত দিন সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। সেই সুযোগে তিনি ট্রেড বহির্ভূত অন্যান্য সেক্টরের ৮৭ জনকে ভোটার এবং তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর যারা রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবসা ও অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সময় থেকে সদস্য ছিলেন, তাদেরকে জোর করে বাদ দিয়েছেন।’
মন্ত্রণালয়ের শুনানিতে আসেন না আসাদুজ্জামান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্রামার বিগত সালের নির্বাচন এবং সদস্য পদের বিষয়ে জানতে শুনানিতে ডাকা হয় ব্রামার সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামানকে। একই সঙ্গে গত বছরের ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রতিকল্প) অমিত দেবনাথের সই করা চিঠিতে ব্রামার ২০২৩-২৫ সালের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে অভিযোগের শুনানির জন্য গত বছরের ৭ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পুলক কুমার মণ্ডল একটি চিঠি পাঠান।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) অবৈধ নির্বাচন বাতিল এবং পরিচালনা কমিটি বিলুপ্তকরণের বিষয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর বেলা ১২টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের (বাণিজ্য সংগঠন) সভাপতিত্বে তার অফিস কক্ষে শুনানি গ্রহণ করা হবে। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পরে ১৭ নভেম্বরের শুনানিতে অধিকতর তদন্তের জন্য ফের শুনানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, গত ২৪ ডিসেম্বর ফের শুনানি হলেও আসাদুজ্জামান তাতে অংশ না নিয়ে প্রতিনিধি পাঠান। তবে ওই দিনও শুনানিটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার, ৬ জানুয়ারি, দুপুর ১২টা) শুনানির রায় প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন
শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে ব্রামা থেকে পদত্যাগ করেন আসাদুজ্জামান
বিভিন্ন দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন আসাদুজ্জামান। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ একটি সভার মাধ্যমে আবু সাঈদ নামের একজনকে সভাপতি হিসেবে চেয়ারেও বসিয়েছেন তিনি।
ব্রামার অফিস সেক্রেটারি জানান, ২০২৩-২৫ (দ্বি-বার্ষিক) মেয়াদের সভাপতি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শারীরিক অসুস্থতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামে থাকার জন্য গত ২ জানুয়ারি পদত্যাগ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে মো. সায়েদুল হক সাঈদ সভাপতি হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন।
চিলার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসাদুজ্জামানের কথিত প্রতিষ্ঠান ‘কুলিং পয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস’ এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এরপরও শুধু জাল কাগজ ব্যবহার করে কাগজে-কলমে ফ্যাক্টরির অস্তিত্ব দেখিয়ে তিন কিস্তিতে ইউএনডিপির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ভর্তুকির টাকা নিয়েছেন তিনি
অভিযোগের বিষয়ে যা বলছেন আসাদুজ্জামান
নিজের বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ অস্বীকার করে ব্রামার সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, আমাকে নিয়ে খুব নোংরামি করা হচ্ছে। টানাহেঁচড়া করা শুরু হয়েছে। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং কোনো রকমের সত্যতা নেই। আমার কাছে সব ধরনের কাগজপত্র আছে। আমাকে হেয় করার জন্য এসব করা হচ্ছে।
‘তখন আমার ফ্যাক্টরি ঢাকাতে ছিল। ২০০৫ সাল থেকে আমি চিলার তৈরি করার সঙ্গে জড়িত। আমার প্রতিষ্ঠান ছোট ছিল। আমি সেটি ধীরে ধীরে বড় করেছি।’
ট্রেড বহির্ভূত মানুষজনকে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে সদস্য দেইনি। আগে যদি কেউ কিছু করে থাকে সেই দায়িত্ব আমি নেব না।’
আসাদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। আমি এখন আর ব্রামার নেতৃত্বে নেই। সভাপতি পদ ছেড়ে দিয়েছি। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাইদ ভাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। ব্রামাকে এ সেক্টরের কেউ চিনত না। আমি দেশে ও বিদেশে এ সংগঠনকে পরিচিত করিয়েছি। এখন আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
শুনানির রায় না দিয়ে আসাদকে পদত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে
অপরদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুনানির পর দীর্ঘ সময় রায় না দিয়ে আসাদুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে সুযোগ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর অভিযোগের বিষয়ে অধিকতর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও রায় প্রকাশ করা হয়নি। দুটি শুনানিতেই আসাদুজ্জামান কোনো কাগজপত্র ও প্রমাণাদি উল্লেখ করতে পারেননি। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কিংবা প্রশাসক নিয়োগ না দিয়ে অদৃশ্য কারণে আসাদুজ্জামানকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরএইচটি/এমএআর