শারফুদ্দিনে শুরু, একে একে স্বাচিপ সিন্ডিকেটের পতন
দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৫; বিদায়ের প্রহর গুনছে আলোচিত বছর ২০২৪। রাজনৈতিক উত্থান-পতনে বছরটির সমাপ্তি ঘটতে চললেও নানা ঘটনায় আলোচিত থাকবে দেশের স্বাস্থ্য খাত। ঘটনাবহুল বছরটিতে এ খাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
বছরের শুরু থেকে পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে পত্রিকার পাতায় খবরের প্রধান শিরোনাম হন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এমনকি একপর্যায়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাড়তে হয় তাকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে ভাঙতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত ১৬ বছর ধরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী আওয়ামী সিন্ডিকেট।
আরও পড়ুন
গত ২০ জানুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে ‘সন্তান-পুত্রবধূকে সুবিধা দিতে কী না করছেন ভিসি শারফুদ্দিন’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। খবরে সাধারণ চিকিৎসকদের পাশ কাটিয়ে নিজ সন্তান ও পুত্রবধূকে শর্তপূরণ না করেই কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। এ খবরে ফুঁসে ওঠেন সাধারণ চিকিৎসক-শিক্ষার্থীরা।
বছরের শুরু থেকে পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে পত্রিকার পাতায় খবরের প্রধান শিরোনাম হন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ। এমনকি একপর্যায়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাড়তে হয় তাকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে ভাঙতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত ১৬ বছর ধরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী আওয়ামী সিন্ডিকেট
সাধারণত সরকারি হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউতে কর্মরত মেডিকেল অফিসারদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো- দুই বছর হাসপাতালে সেবা দেওয়ার পর কোর্সের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে, প্রান্তিক অঞ্চল বা বেসিক অনুষদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এক বছর হলেও আবেদনের যোগ্য হবেন তারা। এমনকি উচ্চ শিক্ষার জন্য নিয়ম মেনে কোর্সে অংশগ্রহণ করলে কোর্স চলাকালীন মেডিকেল অফিসাররা বেতনসহ শিক্ষাছুটি পাবেন। ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে উঠে আসে, তৎকালীন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ তার ছেলে ও ছেলের বউকে বিশেষ সুবিধা দিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই কোর্সে ভর্তির সুযোগ করে দেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থি।
শারফুদ্দিনবিরোধী আন্দোলন, গড়ায় হাতাহাতি পর্যন্ত
বছরের শুরু থেকে পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে শুরু হয় আন্দোলন। পরবর্তীতে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যখন তার বিদায় নিশ্চিত হয়, তখন শেষ সময়েও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এডহক ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণের চেষ্টা করেন তিনি। এ নিয়ে গত ১৬ মার্চ চিকিৎসকদের একটি পক্ষ আন্দোলনের ডাক দিলে দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে গড়ায় এবং আহত হন বেশ কয়েকজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। ফলে ওই সময়ে ব্যাহত হয় হাসপাতালের চিকিৎসা গবেষণা কার্যক্রম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নিয়ম না মেনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভাইভা নিচ্ছিলেন। যদিও ওই সময় সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন উপাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার আগে কোনো পদোন্নতি বা স্থায়ীকরণ যেন না করা হয়।
আরও পড়ুন
শারফুদ্দিন যুগের অবসান, নতুন দায়িত্ব পান দীন মো. নূরুল হক
গত ৪ মার্চ ‘বিএসএমএমইউয়ের নতুন উপাচার্য হচ্ছেন ডা. দীন মো. নূরুল হক’— এমন শিরোনামে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। এরপর থেকে ডা. শারফুদ্দিনের বিদায় নিয়ে বেশ অস্থিরতা শুরু হয়। জানা যায়, মেয়াদের শেষ সময়ে এসে নিজ অনুসারীদের নিয়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন ‘ডায়নামিক ভিসি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শারফুদ্দিন আহমেদ। শেষ সময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বিএসএমএমইউ’র চেয়ার ছাড়তে হয় তাকে।
গত ১১ মার্চ নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে চার বছরের জন্য বিএসএমএমইউ’র ভিসি পদে বসানো হয় তাকে। এরপর অনেকটা শারফুদ্দিনের অনুগত হয়েই দায়িত্ব পালন করে যান দীন মো. নূরুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে নিজের কর্মপরিকল্পনা, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন ডা. দীন মোহাম্মদ। তবে, সবমিলিয়ে সাড়ে চার মাসের মতো কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতন-পরবর্তী সময়ে পদ ছাড়তে হয় তাকেও।
গত ৪ আগস্ট সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন ছাত্র-জনতা। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে থাকা অন্তত ৫০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এমনকি শাহবাগ থেকে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারপিটও করা হয়
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কলঙ্কিত ভূমিকা
গত ৪ আগস্ট সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন ছাত্র-জনতা। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভেতরে থাকা অন্তত ৫০টি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এমনকি শাহবাগ থেকে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারপিটও করা হয়।
আরও পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অভিযোগ, ছাত্র সমাবেশে বাধা দিতে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র, গ্রেনেড-বোমা নিয়ে শাহবাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে জড়ো হতে থাকে। তারা ছাত্রদের ওপর হামলা করার পাঁয়তারা করছিল। সাধারণ ছাত্রদের ওপর দায় চাপাতে তারা পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালের ভেতরে আগুন দেয়। এমনকি তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা হাসপাতালে আসা গুলিবিদ্ধ ও আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ বিএসএমএমইউ শাখা। তাদের দাবি, তৎকালীন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সাবেক উপাচার্যের একান্ত সচিব ও সাবেক প্রক্টরের নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। দ্রুততম সময়ে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
একই সঙ্গে আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসাসেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা দিয়েছিল, তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সব শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীকে নিজ নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন
সায়েদুর রহমানের হাত ধরে সংস্কার শুরু
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তারা। ১৮ আগস্ট সর্বপ্রথম পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান। এরপরই পদত্যাগ করেন অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নূরুল হকসহ অন্য উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরসহ আরও পাঁচজন। তাদের কেউ কেউ বাধ্য হন পদত্যাগ করতে, আবার অনেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এরপর একে একে ভাঙতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গড়ে ওঠা ১৬ বছরের আওয়ামী সিন্ডিকেট।
গত ২৭ আগস্ট বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানকে। ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) হিসেবে নিয়োগ পান বিএসএমএমইউ’র হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি একই প্রতিষ্ঠানের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে প্রো-ভিসি (শিক্ষা ও গবেষণা) পদে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড অ্যান্ডওডন্টিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
আবারও নতুন ভিসি, হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ
গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় তাকে সেখানে নেওয়া হয়। এরপর বেশ কিছুদিন একই সঙ্গে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয় উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) হিসেবে দায়িত্বরত অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলমকে।
এক বছরে চার-চারজন উপাচার্যের পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিৎসা-গবেষণা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এ অবস্থায় নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার কাজ সহজ হবে না বলেও মনে করেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, চলতি বছর বিএসএমএমইউ’র স্বাভাবিক কার্যক্রম বলতে গেলে স্থবির ছিল। বছরের শুরু থেকে একের পর এক ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো প্রশাসনে পরিবর্তন এসেছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরনের স্থবিরতা বিদ্যমান ছিল। দীর্ঘ একটা সময় প্রশাসনিক পদগুলোতে শূন্যতা ছিল। বলতে গেলে কাজ করার মতো তখন কেউ ছিলেন না। ফলে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে আশানুরূপ কোনো উন্নতি হয়নি।
‘তবে আশা করছি, আগামী বছর সবাই মিলে কাজ করলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজই শিক্ষা-গবেষণা, আমি আমার জায়গা থেকে এ দুটি বিষয়ের উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করে যাব। সবমিলিয়ে আশা করছি, নতুন বছরে শিক্ষা-চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয়টির হারানো গৌরব আবারও ফিরিয়ে আনতে পারব।’
স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু
এদিকে, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিতে নানা কর্মপরিকল্পনার পাশাপাশি বিগত দিনের সব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত এবং স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে অবস্থানরত আওয়ামী দোসররা আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা দিতে বাধা দেওয়াসহ পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সি-ব্লকের সামনে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দুজনকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ৪ আগস্ট জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। এসব ঘটনায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিগগিরই সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমরা প্রকাশ করব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
‘বিগত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন সেন্টার নির্মাণে ভয়াবহ দুর্নীতি করা হয়েছে। ফলে আজ তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ২০০৬ সালের আগে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের যে হয়রানি, চাকরিচ্যুতি, পদাবনতি, উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বাধা এবং বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব অনিয়মের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণা কার্যক্রম ধ্বংস করা হয়েছে।’
‘আমাদের গত সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আশা করছি, শিক্ষা-চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয়টির হারানো গৌরব আবারও ফিরিয়ে আনতে পারব’— বলেন ডা. শেখ ফরহাদ।
টিআই/