উপদেষ্টার ব্যক্তিগত লোক দিয়েই কেন প্রকল্পের মনিটরিং-মূল্যায়ন?
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন চলমান সব উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ, চলমান সব প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম ও অর্থছাড় বন্ধ করে দিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। চলমান এসব প্রকল্প উপদেষ্টার ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ করা মো. তারিক কাদেরের মাধ্যমে মনিটরিং ও মূল্যায়নের পরই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে, ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পের অনুকূলে নিয়মিত অর্থছাড় করে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন বা বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগেরও (আইএমইডি) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ বা নির্দেশনা নেই। সুতরাং উপদেষ্টার এমন সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও হতবাক।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নিজ ক্ষমতার জোরে অনেক কিছুই করতে চাইছেন। উনি সহজে কারও সঙ্গে দেখা করতে চান না। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা অথবা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গেই তিনি কথা বা দেখা করেন না। উনি ইতোমধ্যে নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন এনজিও প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করা মো. তারিক কাদেরকে চলমান সব প্রকল্প মনিটরিং ও মূল্যায়ন করার দায়িত্ব দিয়েছেন। উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারিক কাদেরের নিয়োগ প্রশাসনিক কাঠামো মেনে করা হয়নি।তারা আরও বলেন, সরকারের সব উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়নের দায়িত্ব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি)। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন, বাজেট ও মূল্যায়ন অনুবিভাগ থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও এ অনুবিভাগ আছে। মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মূল্যায়ন অনুবিভাগ থাকা এবং আইএমইডির কাজ কেন ব্যক্তিগত লোক দিয়ে করবেন উপদেষ্টা— এমন প্রশ্ন রাখেন তারা।
আরও পড়ুন
তাদের মতে, একটি প্রকল্প নেওয়ার আগে কয়েক দফা যাচাই-বাছাই হয়। যে কোনো প্রকল্পের অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি ও জিইডির মতামত নেওয়া হয়। বিশেষ করে পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডি অধিকতর যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়। সুতরাং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করতে উপদেষ্টা প্রকল্পের কার্যক্রম এভাবে বন্ধ করে রাখতে পারেন না। প্রকল্পের কাজ চলমান রেখেই উনি মনিটর বা মূল্যায়ন করতে পারেন। বর্তমানে প্রত্যেকটা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং এ সব প্রকল্পে অর্থছাড় আটকে থাকলে আইএমইডি ও অডিট অধিদপ্তরের নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করতে না পারলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সময় অনেক ঝামেলা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২০ অক্টোবর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করতে মো. তারিক কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের চিঠিতে বলা হয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন স্পেশালিস্ট মো. তারিক কাদেরকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান সব প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়ন সম্পর্কিত সব কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।অর্থছাড়ের বিষয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সাবেক একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. মাহমুদ হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের ক্রয় কার্যক্রম ও অর্থছাড় সাময়িক স্থগিত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের ক্রয় কার্যক্রম ও অর্থছাড় সাময়িক স্থগিত থাকবে। উল্লেখ্য, এ সংক্রান্ত যে কোনো অপরিহার্য পরিস্থিতি দেখা দিলে নথিতে উপস্থাপনের পূর্বে মৌখিক আলোচনা করে কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে। এ অবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
প্রকল্পগুলোর আওতায় আয়বর্ধক/কল্যাণমূলক উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের অসহায়, হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন হবে। জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করায় তারাও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। এ পর্যায়ে প্রকল্পের অর্থছাড় ও কার্যক্রমের কিছু সিদ্ধান্তে বিলম্ব হওয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে। ফলে হতদরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলোর সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগে প্রায় সাড়ে তিন বছর যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্পের জনবল নিয়োগ, অফিস ভাড়া, উপকারভোগীদের তালিকা করে ডাটাবেজ তৈরি করা, এপিপি অনুমোদন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, আয়বর্ধক জীবন-জীবিকা অর্জনে কর্মসংস্থানের উপকরণসমূহ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রম চলমান আছে। প্রকল্পগুলোর আওতায় আয়বর্ধক/কল্যাণমূলক উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের অসহায়, হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন হবে। জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করায় তারাও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। এ পর্যায়ে প্রকল্পের অর্থছাড় ও কার্যক্রমের কিছু সিদ্ধান্তে বিলম্ব হওয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে। যার ফলে হতদরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন স্পেশালিস্ট মো. তারিক কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপদেষ্টা আমাকে স্পেশালি অ্যাসাইন করেছেন প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন করার জন্য। আইএমইডি একটা সময়ে গিয়ে প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন করে। কিন্তু উপদেষ্টা যদি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে দেখতে চান তাহলে কীভাবে দেখবেন? এখন নিজে গিয়ে কি দেখা সম্ভব— প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আরও পড়ুন
নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়নে আমার ২০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। যেমন- আজ আমি একটি প্রকল্পের ইনফরমেশনগুলো চেক করলাম এবং যে অবজারভেশন পেলাম, সেটাই আমি উপদেষ্টাকে জানালাম। তখন উপদেষ্টার ওই প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে সহজ হবে। কারণ, সব জায়গায় উপদেষ্টার যাওয়া তো সম্ভব না। মূলত আমি প্রকল্পের এলাকা ভিজিট করে অবজারভেশন দিলে উনার (উপদেষ্টা) পক্ষে ডিসিশন দিতে সহজ হবে। এখানে আমি কারও শত্রু না। আমি নিরপেক্ষ লোক। আমার মনিটরিং ও মূল্যায়ন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞতা আছে।’
আপনাকে কি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, নাকি স্পেশাল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তারিক কাদের বলেন, ‘আপনি আমার প্রফেশন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, সেটা আমি জানিয়েছি। এটা আসলে কনফিডেনশিয়াল, আমি আপনাকে বলতে পারি না। এ বিষয়ে উপদেষ্টা মহোদয়কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’
‘প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থাকা উচিত। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন সম্পর্কে জানেন না। কীভাবে মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন করতে হয়, সেটাও তারা বোঝেন না। একটা প্রকল্প তৈরির সময় ঝামেলা থাকতে পারে। মন্ত্রণালয়ে একটা মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন সেল যদি না থাকে এবং সবাই যদি বলে আইএমইডি করবে বা আইএমইডির ওপর চাপিয়ে দেয়; আইএমইডির সেই সক্ষমতা আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। আইএমইডির যদি মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন এতোই ভালো হয়, তাহলে তো এত অনিয়ম হতো না। তাদের (আইএমইডি) রিপোর্টে ওই ধরনের কিছু পাওয়া যায় না। বিষয়টা উপদেষ্টা বুঝতে পেরেছেন বলেই মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশনের ওপর জোর দিয়েছেন। নিজের মতো করে তিনি সবকিছু বোঝার চেষ্টা করছেন। এ পর্যায়ে এসে যদি আমার মতো কাউকে দিয়ে মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন করে কিছু পাওয়া যায় তাহলে সেটা সবাই সমর্থন করবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’
এ বিষয়ে জানতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মোহা. কামরুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অর্থছাড় প্রসঙ্গে উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আমরাই নিব। আমাদের কাছে যেহেতু অর্থ এসেছে, সেহেতু এর দায়বদ্ধতাও আমাদের আছে। আমরা প্রকল্প বন্ধ করিনি, আপাতত অর্থায়ন বন্ধ রেখেছি প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে। এ বিষয়ে আমি আপনাকে কিছুই বলতে পারব না। অর্থছাড় নিয়ে বা বন্ধ রাখার বিষয়ে আমার অফিস কী করবে না করবে, সেটা আমরাই বুঝব। এটা ইন্টারনাল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এরপর আপনার আর কিছু জানার থাকতে পারে? প্রকল্প নিয়ে আপনি অবশ্যই নিউজ করেন, সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা আমাদের মূল্যায়ন কীভাবে করব, আমার কাজ কীভাবে করব, সেটা আমাদের বিষয়।’প্রকল্পে অর্থছাড় বন্ধের সিদ্ধান্ত কারা দিয়েছেন— এমন প্রশ্নে তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘আমরা যে সিদ্ধান্ত পাই, সেটা ফলো করা আমাদের দায়িত্ব। সিদ্ধান্ত কারা দিল, সেই বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব না। আমি আগেই বলেছি, এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কোনো বিষয় থাকলে উনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’
ছাড় হওয়া অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার উপসচিব মো. রাজিবুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে তিনটা বিষয় আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, তারা অর্থ ছাড় করবে না। এখন পর্যন্ত দুইটা চলমান প্রকল্পের অর্থছাড় হয়েছে। মানে প্রকল্পের দুই কিস্তি দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন
‘অনেক সময় অর্থ বিভাগ থেকেই অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত অর্থছাড়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চাইলে অর্থছাড় সাময়িক বন্ধ রাখতে পারে। তবে, দীর্ঘসময় অর্থছাড় বন্ধ রাখতে পারে না। বর্তমানে কম পরিমাণে অর্থছাড় দেওয়া হচ্ছে। অর্থছাড় করা যাবে না— এ বিষয়ে এখনও আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের আর্থসামাজিক উইংয়ের যুগ্মপ্রধান মাকসুদা হোসেন এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থছাড় বন্ধ রাখার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এর বেশি জানতে হলে সচিব স্যার অথবা কার্যক্রম বিভাগের প্রধানকে ফোন দিতে পারেন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।
এ প্রসঙ্গে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি সারপ্রাইজড। কারণ, এগুলো চেক করার জন্য নানা ইনস্টিটিউশন আছে। গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউশনও হতে পারত। জানি না এমনটি কেন হলো? তবে, আমি যেটা বুঝতে পারছি, তাদের একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সব লোক তো ভালো নয়। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুলো চালু করা যায় ততই মঙ্গল। কারণ, আসলেই যারা দুঃখী, তাদেরকে প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া উচিত। এটা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা উচিত না। কারণ, এসব প্রকল্পের আওতায় যারা উপকারভোগী তারা সবাই কিন্তু গরিব।’
‘যদি কোনো দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে এটা সলভ (সমাধান) করার জন্য আইনগত ব্যবস্থা রাখা উচিত। যে লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা যেতে পারে। আমার মতে, যত তাড়াতাড়ি মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন কার্যক্রম শেষ করা যায়, ততই ভালো। কারণ, গরিবদের জন্যই এ সব প্রকল্প। দেরি হলে তারাই বঞ্চিত হবেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক বলেন, ‘একজনকেই কেন প্রকল্পের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা আমি জানি না। আইএমইডির দুর্বলতা আছে, জনবলের সংকট আছে। অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তারা ভয়ে কথা বলতে চান না, এটাও সত্য। তবে, একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি আমার কাছে সারপ্রাইজড মনে হচ্ছে। কারণ, এখানে ম্যাথলজিক্যাল ইস্যু আছে। তবে আমি বুঝি, সময়ে বেঁধে দেওয়া উচিত। কারণ, গরিব লোকদের তো ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার এটাও একটা মাধ্যম সরকারের। এটা সত্য, এগুলোতে এক সময় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। কিন্তু এগুলো বন্ধ রেখেও লাভ নেই। বরং বন্ধ রাখলে সবাই বিরক্ত হবেন।’
এসআর/এমএআর/