নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন, জেলায় জেলায় অফিস চায় দুদক
দুর্নীতির লাগাম টানতে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাত্রা। বর্তমানে সারাদেশে ৩৬টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে কেন্দ্র করে চলছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের কার্যক্রম।
তবে, অল্প সংখ্যক কার্যালয় ও সীমিত লোকবল নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশা পূরণে সংস্থাটিকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নানামুখী বিরূপ চাপে প্রকৃত কাজের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত দুদক। ফলে বরাবরই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
মানুষের দরজায় সেবা পৌঁছে দিতে হটলাইন-১০৬, এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ও ফরেনসিক ল্যাবসহ নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সীমিত কার্যালয় ও দক্ষ লোকবল স্বল্পতায় কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিকে। ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না দুদক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
মানুষের দরজায় সেবা পৌঁছে দিতে হটলাইন-১০৬, এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ও ফরেনসিক ল্যাবসহ নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সীমিত কার্যালয় ও দক্ষ লোকবল স্বল্পতায় কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটিকে। ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না দুদক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য
দুদকে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে যারা কাজ করছেন তাদের মতে, সংস্থাটির আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পরিচালক থেকে চেয়ারম্যান পর্যায়ে যারা নিয়োগ পান তাদের মধ্যে প্রকৃত নেতৃত্বগুণ সবার আগে থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে থাকতে হবে দক্ষতা ও সততা। পাশাপাশি প্রয়োজন বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে বিশেষভাবে দক্ষ জনবল, সব জেলায় দুদক অফিস, লজিস্টিক ও কাঠামোগত সহায়তা। না হলে কখনোই দুদক প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের আতঙ্ক হতে পারবে না, কাজের স্বাধীনতা কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
আরও পড়ুন
দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতার দায় সবসময় আমাদের নিতে হয়। অথচ শুরু থেকেই দুদক পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে ছিল বা বর্তমানে আছে, তাদের প্রায় সবাই দুদককে নিজের প্রতিষ্ঠানই মনে করেন না। কারণ, তাদের বেশিরভাগই প্রেষণে আসা কর্মকর্তা। তারা তিন থেকে চার বছর দায়িত্ব পালন করে চলে যান। যাদের অধিকাংশই আবার প্রশাসন ক্যাডারের। তারা নিজেদের ক্যাডারের ঊর্ধ্বতনদের সুরক্ষা কবজ হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছেন। ওই গোষ্ঠী কখনোই শক্তিশালী দুদক চায় না। সে কারণে দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কাজের স্বীকৃতি, যথাসময়ে পদোন্নতি কিংবা লজিস্টিক সাপোর্ট ইত্যাদি বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারের অদৃশ্য চাপ তো আছেই।
দুদকের সংস্কার নিয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দুদকে সবার আগে প্রয়োজন নেতৃত্বের পরিবর্তন। বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে দুদকের ভালো কার্যক্রম কখনোই আশা করা যায় না। এরপর প্রয়োজন আইনি সংস্কার। এর আগে আইনি সংশোধনের নামে দুদককে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গাটা ঠিক করার প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয়ত হচ্ছে, চেয়ারম্যান ও কমিশনারের নিচে মহাপরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত প্রায় শতভাগের কাছাকাছি প্রেষণে আসা আমলাতন্ত্রের প্রতিনিধি। দুদকে বসে তারা আমলাতন্ত্রে আনুগত্য প্রকাশ করে এবং আমলাতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করে। কাজেই এই প্রথা বন্ধ করতে হবে।‘
দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতার দায় সবসময় আমাদের নিতে হয়। অথচ শুরু থেকেই দুদক পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে ছিল বা বর্তমানে আছে, তাদের প্রায় সবাই দুদককে নিজের প্রতিষ্ঠানই মনে করেন না। কারণ, তাদের বেশিরভাগই প্রেষণে আসা কর্মকর্তা। তারা তিন থেকে চার বছর দায়িত্ব পালন করে চলে যান। যাদের অধিকাংশই আবার প্রশাসন ক্যাডারের। তারা নিজেদের ক্যাডারের ঊর্ধ্বতনদের সুরক্ষা কবজ হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছেন। ওই গোষ্ঠী কখনোই শক্তিশালী দুদক চায় না
‘এরপর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক ভালো জনবল রয়েছে, তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। আবার অনেকে দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক ল্যাব করা দরকার। যদিও ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে, যেটা ততটা কার্যকর নয় বলেই জানি। নতুন নতুন দুর্নীতির পদ্ধতি যোগ হচ্ছে, সেই সম্পর্কে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
দেশের ৬৪ জেলায় দুদকের কার্যালয় থাকা প্রয়োজন— মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘দুদকের শাখা অফিস বৃদ্ধির চেয়েও প্রথমত দরকার– যেসব কার্যালয় রয়েছে, সেগুলো কতটুকু কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে; যেসব অফিস রয়েছে, সেখানে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কতটুকু কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করা। সব জেলায় দুদক অফিস কিংবা লোকবল সংকট অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে, তবে সর্বোচ্চ প্রাধান্যের বিষয় নয় বলে মনে করছি।’
অন্যদিকে, দুদকের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম কাজ হবে কমিশন পুনর্গঠন করা। দক্ষ, অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও স্বচ্ছ মানুষ দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করা জরুরি। নেতৃত্ব এখানে বড় একটি বিষয়। আর একটি বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় দ্রুত বিচার করার ব্যবস্থা করা। দ্রুত বিচার করতে না পারলে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নিম্ন থেকে আপিল আদালত পর্যন্ত শুধু দুদকের জন্য পৃথক আদালত গঠন এবং নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট চালু করতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, তারপরও বাস্তবায়ন করা জরুরি।
আরও পড়ুন
দুর্নীতির বিস্তার ও সরকারি সেবার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ৬৪ জেলায় দুদকের অফিস স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে— দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘দুদক যদি সঠিকভাবে কাজ করে এবং সরকার যদি কাজ করার মতো যথেষ্ট পরিবেশ রাখে তাহলে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এর সঙ্গে আদালত থেকে দ্রুত সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ছোট ছোট দুর্নীতি এমনিতে রোধ করা সম্ভব হবে। কারণ, নিচের দিকের দুর্নীতি হয়তো বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে সব জেলায় দুদক অফিস বড় ভূমিকা রাখবে। যদিও এর সঙ্গে জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হবে।’
কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়ে দুদকের সাবেক এ মহাপরিচালক বলেন, কোয়ালিটি অনুসন্ধান ও তদন্ত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষভাবে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। এখানে প্রেষণে আসা জনবল যদিও প্রয়োজন হয়, সেটা হতে পারে খাতভিত্তিক দক্ষ জনবল। কিন্তু দুদকে সবসময় দেখেছি প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য। এর মাধ্যমে দুদককে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে, এটা বন্ধ করা উচিত। এর কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করছি না।
মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য আইনের সংস্কার
একসময় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সম্পৃক্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুদক। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং অপরাধ দুদকের আওতায় রেখে বাকিগুলোর অনুসন্ধান-তদন্তের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অন্যান্য সব অপরাধ দুদকের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়। অনেকদিন ধরেই হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে তোড়জোড় চালিয়ে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি। দুদকের আগের ক্ষমতা ফিরে পেতে আইন ও বিধির সংশোধন প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২৭টি প্রেডিকেট অফেন্স অনুসন্ধান-তদন্তের জন্য সাতটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংস্থাগুলো হলো– দুদক, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ কাস্টমস, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পরিবেশ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ অনুসারে ওই সাতটি সংস্থা তাদের ওপর নির্ধারিত প্রেডিকেট অফেন্সের অনুসন্ধান-তদন্ত করবে। বিধিমালা অনুসারে ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সম্পৃক্ত একটি অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের ভার এককভাবে দুদককে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা সচিবের হাতে দেওয়ার মাধ্যমে কমিশনকে প্রাক্তন ব্যুরোর মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে টিআইবিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিধি অনুযায়ী, দুদকের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যান ও তার নেতৃত্বে কমিশনারদের হাতে অর্পিত ছিল। নির্বাহী ক্ষমতা ঢালাওভাবে সচিবের হাতে অর্পণ করে কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করে দুদকের নিজস্ব কর্মী ও টিআইবি। আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী ও নিয়মিতকরণ, চলতি দায়িত্ব প্রদান, ভাতা ও ছুটি, পেনশন, পিআরএল এবং মামলার সাজার পরিপ্রেক্ষিতে পুরস্কার ইত্যাদি সব ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের হাতে অর্পিত হয়েছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য সংস্থাটির প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসহ জনবল নিয়োগ, পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা দুদক সচিবের কাছ থেকে সরিয়ে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে দুদকের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করতে হবে। যেমন– সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট- ২০১৮; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ ও আয়কর আইন- ২০২৩।’
আরও পড়ুন
কার্যকর দুদক পেতে কর্মীদের চাওয়া
দুদকের প্রধান কার্যালয়, জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধান, তদন্ত, এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযান ও প্রতিরোধমূলক কাজগুলো হয়ে থাকে। বর্তমানে ৩৭টি কার্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। ওই সব কার্যালয় থেকে সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন বলে মনে করেন দুদকের নিজস্ব কর্মীরা। কারণ, জেলাগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি। উপজেলা কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চল বিবেচনায় নিলে কাজ করা আরও কঠিন হয়ে যায়। এটি যেমন অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজের জন্য প্রযোজ্য, তেমন এনফোর্সমেন্ট কাজের জন্য আরও বেশি প্রযোজ্য। যেমন– বরিশাল অফিস থেকে ভোলা জেলার কোনো উপজেলায় দুর্নীতির কোনো অভিযোগের বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট অভিযান পরিচালনা করে আবার অফিসে ফিরে আসা এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কিংবা আসামি গ্রেপ্তার অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া দূরত্ব বেশি থাকায় খরচ বেশি হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, মানসম্মত কাজও নিশ্চিত করা যায় না।
দুদকের কর্মীরা বলছেন, একটি জেলা অফিসের আওতায় সাধারণত তিনটি জেলার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কাজই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু লোকবল সংকট, লজিস্টিক সাপোর্ট ও দূরত্ব– এ তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিলে এনফোর্সমেন্টের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সব জেলায় অফিস থাকলে ওই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজ হতো। এ ছাড়া প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন– সততা সংঘ, সততা স্টোর ও স্কুল বিতর্কসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজসহ স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার কাজ তো আছেই। আমাদের নির্দেশদাতা হিসেবে যারা কর্মরত থাকেন তারা বেশিরভাগ সময়ই এসব বিষয় বোঝেন না কিংবা বুঝলেও দায়িত্ব নিয়ে কাজের গতি বাড়াতে পদক্ষেপ নেন না।
আবার একজন অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তার কাজের পরিসর অনেক ব্যাপক। একজন কর্মকর্তাকে অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করতে হয়। তাকে দুর্নীতি সংক্রান্ত সব বিষয় নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ, চিঠি ও নোটিশ জারি, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, এরপর প্রতিবেদন তৈরি, তদারকি কর্মকর্তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন সহকারী পর্যন্ত পাওয়া যায় না। লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবের মধ্যে রয়েছে পরিবহন, রুমের সংকট কিংবা অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তার অভাব। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তার ওপর কাজে যদি ঊর্ধ্বতনদের অযাচিত হস্তক্ষেপ থাকে, তাহলে সেই কাজের সাফল্য দেখা অসম্ভব বলে মনে করছেন দুদকের কর্মীরা।
তারা আরও বলছেন, আমাদের ২০তম থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা ঝুঁকিভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালক যারা দুদকের ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা, তারা ঝুঁকিভাতা পান না। বিষয়টিও বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
দুদকের বর্তমান কার্যালয় ও জনবল
২০০৪ সালের আগে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় ৬৪ জেলাতেই জেলা কার্যালয় ছিল। দুদক প্রতিষ্ঠার পর ২০০৭ সালের তা গুটিয়ে ২২টি করা হয়। তবে ২০২২ সালে আবার ১৪টি কার্যালয় সংযুক্ত করা হয়। প্রধান কার্যালয় ছাড়া সারা দেশে দুদকের ৩৬টি জেলা কার্যালয় রয়েছে। এগুলো হলো– সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল ও পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
২০২২ সালে নতুন করে যোগ হওয়া দুদক কার্যালয়গুলো হলো– নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর ও হবিগঞ্জ। যেখানে একজন চেয়ারম্যান, দুজন কমিশনার, একজন সচিব, আটজন মহাপরিচালক ও ৩৭ জন পরিচালকসহ ২০৯৮টি পদ রয়েছে। যদিও কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ১২০০ জন।
আরএম/এসএসএইচ