হঠাৎ কেন বেড়েছে সাপের উপদ্রব?
বাংলাদেশে সাপের বৈচিত্র্য অনেক। বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টিরও বেশি প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থা ও পরিবেশ অনুযায়ী এলাকাভেদে একেক রকম সাপের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে, সম্প্রতি প্রায় সারা দেশে বেড়েছে বিষধর রাসেলস ভাইপারসহ অন্যান্য সাপের উপদ্রব। যা জনসাধারণের মধ্যে নতুন এক আতঙ্ক তৈরি করেছে।
প্রাণিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশে চিল ও বেজির মতো প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। যা সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কারণ, প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণীরা বাস্তুসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সাপের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। কোনো কারণে এসব প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পেলে সাপের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, দেশজুড়ে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষ এবং আড়াই হাজার গবাদিপশু সাপের দংশনে শিকার হয়। এর মধ্যে সাত হাজার ৫১১ জনই মারা যায়। এসব বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের প্রাণ হারানোর প্রধান কারণ হলো, সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া। অনেক মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। সেখানে চিকিৎসা সুবিধা কম থাকায় সমস্যাটি আরও বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিমাত্রায় নগরায়ণ, বনাঞ্চল কেটে ফসলি জমি তৈরির ফলে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সাপের গুরুত্ব বিবেচনায় এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। কেননা সাপ প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছে। সঠিক সময়ে অ্যান্টিভেনম (সাপের বিষের প্রতিষেধক) প্রয়োগ করা হলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সাপের কামড়ের সব ঘটনার মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ বিষাক্ত সাপের দংশন হয়ে থাকে। ফলে অনেকেই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরলেও পরবর্তীতে অধিকাংশের শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতাসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিষধর ও নির্বিষ উভয় প্রজাতির সাপ রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু প্রজাতি মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে। বিষধর সাপের মধ্যে কিং কোবরা, কোবরা, রাসেলস ভাইপার, কমন ক্রেইট (কালাচ কেউটে), ব্যান্ডেড ক্রেইট, স ব্লকেড রাসেলস ভাইপার, গ্রিন পিট ভাইপার অন্যতম। অবশ্য বেশকিছু নির্বিষ সাপও রয়েছে। যেমন- ইন্ডিয়ান পাইথন, র্যাট স্নেক, রেড স্যান্ড বোয়া, গ্রিন ওয়াটার স্নেক, চিকন সাপ ও ফ্লাইং স্নেক উল্লেখযোগ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিমাত্রায় নগরায়ণ, বনাঞ্চল কেটে ফসলি জমি তৈরির ফলে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সাপের গুরুত্ব বিবেচনায় এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। কারণ, সাপ প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সাপ মেরে ফেলা সমাধান নয় বরং বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণীরাই সাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে।
আরও পড়ুন
যেসব প্রাণী সাপের প্রাকৃতিক শত্রু
সাপের প্রাকৃতিক শত্রু বা শিকারি প্রাণীর সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে কিছু প্রাণী সরাসরি সাপ শিকার করে খেয়ে ফেলে। এর মধ্যে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বেজি (মঙ্গুজ)। সাপ শিকারিদের মধ্যে আরও রয়েছে চিল, বাজপাখি, ঈগল, পেঁচা, বনবিড়াল, বড় বিড়াল, গুঁইসাপ, খাটাশ, শিয়াল, মেছোবাঘ ও বড় ব্যাঙ। কিন্তু বহুদিন ধরেই গ্রামাঞ্চল এমনকি সংরক্ষিত গহীন জঙ্গলেও মানুষ হানা দিয়ে নির্বিচারে এসব প্রাণী হত্যা করছে। ফলস্বরূপ সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি পাল্টে গেছে। এসব প্রাণীর সংকটের কারণে খাদ্যশৃংখলে তাদের অনুপস্থিতির প্রভাব পড়েছে। ফলে দেশজুড়ে বেড়েছে সাপের উপদ্রব।
দেশজুড়ে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষ এবং আড়াইহাজার গবাদিপশু সাপের দংশনের শিকার হয়। এর মধ্যে সাত হাজার ৫১১ জনই মারা যায়। এসব বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের প্রাণ হারানোর প্রধান কারণ হলো, সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া
সাপ-বেজির লড়াই চলে মৃত্যু পর্যন্ত, বেজির প্রধান শিকার গোখরা ও ভাইপার
মানুষে-মানুষে বিবাদ হলে অনেক সময় প্রচলিত প্রবাদ বাক্য হিসেবে ‘সাপ-বেজি সম্পর্ক’ উদ্ধৃত করা হয়। গ্রামাঞ্চলে সাপ-বেজির লড়াই এবং বেজির জিতে যাওয়া নিয়ে অনেক গল্পও প্রচলিত আছে। বলা হয়, সাপের বিষও বেজিকে কাবু করতে পারে না। যদিও কথাটি ভুল। আসলে অল্প বিষে বেজির তেমন সমস্যা হয় না। কারণ, প্রকৃতিগতভাবে এদের শরীরে এক ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে যা সামান্য পরিমাণ সাপের বিষকে মুহূর্তেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারে। কিন্তু সাপ যদি যথেষ্ট পরিমাণ বিষ বেজির গায়ে ঢালতে পারে তবে তার মৃত্যু অবধারিত।
তবে, বেজিকে সাপ অসম্ভব ভয় পায়। কারণ, বেজির আক্রমণাত্মক মনোভাব, ক্ষিপ্রতা, পিচ্ছিল শরীর, স্বল্পমাত্রার সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করে ফেলার ক্ষমতা এবং যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাপকে লড়াইয়ের সময় তটস্থ করে দুর্বল করে ফেলে। আর তখনই সুযোগ বুঝে বেজি সাপের মাথায় কামড় দিয়ে চূর্ণ করে ফেলে। সেই সাপ তখন বেজির আহারে পরিণত হয়। সাপ-বেজির লড়াই কেউ একজন না মরা পর্যন্ত চলতে থাকে। সাপ বেজিকে প্রচণ্ড আক্রমণ করলেও বেজি কখনও সাপকে দংশনের সুযোগ দেয় না। প্রকৃতির আশীর্বাদে বেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী যা বিভিন্নভাবে পরিবেশ ও মানুষের উপকার করে। বেজি বিশেষ করে বিষধর সাপ যেমন- গোখরা, রাসেলস ভাইপার ইত্যাদি শিকার করে। এভাবেই বেজি সাপের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
শুধু সাপ নয় বরং ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে বেজি। বেজির এসব উপকারিতা পরিবেশ ও মানুষের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আরও পড়ুন
প্যাঁচা, চিল, বাজপাখি, গুইসাপের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়েছে সাপ
মাংসাশী প্রাণী শিকারি পাখি চিল, বাজপাখি এবং নিশাচর প্রাণী পেঁচাও সাপ শিকারে বেশ পটু। তাদের তীক্ষ্ণ নজর ভূমিতে চলাচল করা ছোট-বড় সাপ, ইঁদুর এড়াতে পারে না। ফলে অতিমাত্রায় সাপের আনাগোনা কিংবা লোকালয়ে তাদের চলাচল ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিল, বাজপাখির পরিমাণ কমেছে অনেক। আগে শহরাঞ্চলেও তাদের দেখা পাওয়া যেত। এখন গহিন অরণ্য কিংবা ঘন বন-জঙ্গল ছাড়া গ্রামে চিল, বাজপাখি কিংবা পেঁচার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আবার আগের চেয়ে সংখ্যা কমেছে গুইসাপেরও।
বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শুভব্রত সরকার বলেন, বিভিন্ন কারণে পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা কমছে। এর প্রভাব সমগ্র বাস্তুতন্ত্রে পড়ছে। নির্বিচারে প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী যেমন- গন্ধগোকুল, গুঁইসাপ, বনবিড়াল, শেয়াল, মেছোবাঘকে হত্যা করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক শিকারির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যার জন্য খাদ্যজাল ভেঙে যাচ্ছে। এসবের ফলস্বরূপ বিষধর রাসেলস ভাইপারসহ অন্যান্য সাপের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। খাদ্যশৃঙ্খল ঠিক না থাকলে এর ফল ভোগ করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, বেজিসহ অন্যান্য শিকারি প্রাণীর সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যথাযথ পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উচিত, যেন বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় থাকে। এটি মানুষ ও পরিবেশ উভয়ের জন্য উপকার বয়ে আনে।
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় না থাকলে খেসারত দিতে হবে : ঢাবি অধ্যাপক
পরিবেশের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে প্রাণিকুলের নির্ভয় বিচরণ ও প্রজনন বজায় রাখার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নাদিরুজ্জামান মন্ডল।
তিনি বলেন, প্রকৃতিতে ফুড চেইন বা খাদ্যশৃঙ্খল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ চেইন ঠিক না থাকলে বিপর্যয় হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমন- কোনো এলাকায় যদি হঠাৎ করে কুকুরের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে এটি মানুষকে বেশি উৎপাত করবে। নিধন করা না হলে মানুষের সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে, কামড় দেবে। এটি সাপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পরিবেশের প্রতিটি প্রাণীর জন্যই এ ভারসাম্য বজায় থাকতে হবে। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই উপায়ে এ ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমাদের খেসারত দিতে হবে।
বেজিকে সাপ অসম্ভব ভয় পায়। সাপ-বেজির লড়াই কেউ একজন না মরা পর্যন্ত চলতে থাকে। সাপ বেজিকে প্রচণ্ড আক্রমণ করলেও বেজি কখনও সাপকে দংশনের সুযোগ দেয় না। প্রকৃতির আশীর্বাদে বেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী যা বিভিন্নভাবে পরিবেশ ও মানুষের উপকার করে। বেজি বিশেষ করে বিষধর সাপ যেমন- গোখরা, রাসেলস ভাইপার ইত্যাদি শিকার করে। শুধু সাপ নয় বরং ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে বেজি
বিষধর মনে করে নির্বিষ সাপও পিটিয়ে মারছে মানুষ
শুধু প্রাকৃতিক শিকারি বিভিন্ন প্রাণী নয় বরং না বুঝে নির্বিষ এবং প্রকৃতির জন্য উপকারী বিভিন্ন সাপ মানুষ মেরে ফেলছে বলে জানিয়েছেন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, গোখরা ও কেউটে সাপের কামড়ে আমাদের দেশে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়েও মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। মানুষ গুজবে কান দিচ্ছে বেশি। আমাদের দেশে সব সাপ যে বিষধর নয় সেটি অনেক দিন ধরেই আমরা মানুষের মধ্যে প্রচার করছি, জনসচেতনতা তৈরি করছি। ঘরগিন্নি ও দাঁড়াশ সাপের কিন্তু বিষ নেই। উল্টো তারা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুর খেয়ে উপকার করে। কিন্তু মানুষ এসব বিষয় শুনতে নারাজ। তারা সাপ দেখলেই মেরে ফেলছে। প্রাকৃতিক শিকারি অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে। মানুষ বুঝে বা না বুঝে এসব প্রাণী হত্যা করছে। এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, সাপের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো সার্ভে হয়নি।
‘যদি ইকোসিস্টেমের স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তাহলে এর বিরূপ প্রভাব আমাদের ভোগ করতে হবে। আমরা প্রাণ-প্রকৃতির সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে সচেতনতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার ইস্যুতে সেগুলো ভেস্তে গেছে।’
আরও পড়ুন
বাস্তুতন্ত্র চক্রের পুরো ব্যবস্থা হ-য-ব-র-ল হয়ে যাচ্ছে : ঢাবি অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান বলেন, বাস্তুতন্ত্র পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটি চক্র বিদ্যমান। এ চক্রে বেঁচে থাকার জন্য একটি প্রাণী অপর প্রাণীর ওপর নির্ভর করে। হঠাৎ করে আমরা যদি এ চক্রের একটি প্রাণীকে সরিয়ে ফেলি বা বিলুপ্ত করে দেই তাহলে পুরো ব্যবস্থাই হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে। বর্তমানে হয়েছেও তাই। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমরা অহরহ বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করছি। অনেকেই বলছেন যে, বন্যপ্রাণী আমার কী প্রয়োজন? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্যাঁচা, বেজি, সাপ, ব্যাঙ, গুইসাপসহ প্রতিটি প্রাণীই পরিবেশের জন্য প্রয়োজন।
‘হঠাৎ করে যদি পরিবেশে কোনো প্রাণীর পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই প্রাণী এ পরিবেশে ভালো খাবার পাচ্ছে। যা তার বংশবিস্তারে সহযোগিতা করছে। আমাদের দেশে হয়েছেও তা-ই। সম্প্রতি ইঁদুরের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এখন ইঁদুরের কারণে আগের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ফসল নষ্ট হচ্ছে। আবার বনভূমি ও জলাভূমি ধ্বংস হওয়ায় সাপের প্রাকৃতিক বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে। ফলে তারা মানুষের বসতিতে প্রবেশ করছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনও ফেলছে বিরূপ প্রভাব। যেমন- বন্যা, অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাপের বসতি পরিবর্তন হচ্ছে, যা তাদের মানুষের কাছে নিয়ে আসছে। আবার খাদ্যের সন্ধানে সাপ গ্রামের পাশাপাশি শহর এলাকায়ও প্রবেশ করছে।’
তিনি আরও বলেন, এখন ফসল-ফলাদিতে বিভিন্ন প্রকার পোকার উপদ্রব বেড়েছে। কারণ, যেসব শিকারি প্রাণী এসব পোকা ও ইঁদুর খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখত, আমরা তাদের মেরে ফেলেছি। কোথাও বড় কোনো গাছ নেই। পাখিরা কোথাও নিরাপদে নেই। বেজি, দাঁড়াশ সাপ, গুঁইসাপ, প্যাঁচার থাকার জায়গা নেই। একটি পেঁচা প্রতিদিন এক থেকে দুটি করে ইঁদুর খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। দিনদিন আমরা পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করে ফেলেছি।
‘মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতা ও অজ্ঞতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে’— উল্লেখ করে মোহাম্মদ ফিরোজ জামান বলেন, ‘এসব বিষয়ে মানুষের মধ্যে যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কথা ছিল, সেটির অভাব রয়েছে।’
সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে এখনও পাঁচ শতাংশ মানুষ সতর্ক হয়েছে কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একটি শেয়াল বা মেছোবাঘ দেখলে সবাই লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তাহলে কীভাবে হবে? মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই। সচেতন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এখন যদি সবাইকে সচেতন করে এসব বিষয়ে নজর দেওয়া হয় তাহলে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা না হলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে।’
আরএইচটি/এমজে