‘একক’ সমর্থন দিতে পারবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ
আসন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। তবে, প্রতীক না দিলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যে কোনো প্রার্থীকে ‘একক সমর্থন’ দিতে পারবেন। শুধু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নয়, রাজনীতির মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ না নিলেও তলে তলে ঘোমটার মধ্যে লড়াই করবে— এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে, দলীয় প্রতীক না থাকায় তৃণমূল নেতাদের যেমন কদর বেড়েছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের এমন কৌশল বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, তৃণমূল আওয়ামী লীগ বৈঠক করে একক প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে প্রতীকবিহীন নির্বাচনের যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে কি না— এমন প্রশ্ন রাখা হয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে। উত্তরে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এক হয়ে গেলে অসুবিধা কী? এক হলে তো দলের জন্য ভালো। তারা নিজেরা যদি এক হয়ে একজন ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) দেয়, সেটা তো দলের জন্য খুবই ভালো। মাঠে তো অন্যান্য দলও থাকবে। শুধু আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে, এমন তো নয়। কাজেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না, সে কথা বলা যাবে না।’
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, তৃণমূল আওয়ামী লীগ বৈঠক করে একক প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে প্রতীকবিহীন নির্বাচনের যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে কি না— এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে
আরও পড়ুন
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এসব নির্বাচনে কেন্দ্রের কোনো সমর্থন কিংবা প্রভাবও থাকবে না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর তৃণমূলের নেতারা যে কারও পক্ষে কাজ করতে পারবেন। এতে কোনো বাধা কিংবা জেরার মুখে পড়তে হবে না কোনো নেতাকেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার ভাষ্যমতে, দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় এখন বিএনপির নেতারাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবেন। বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও তাদের নেতারা অংশ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে দলের জন্য ভালো। দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীরা তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন।
তারা বলেন, ২০১৪ সালের আগে দলীয় প্রতীক ছাড়াই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন হয়েছিল। তখন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। দলীয় প্রতীক দিলে দলের একটা ফ্লেভার থাকে। দলের শক্তিশালী প্রার্থীরা তৃণমূলের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। যে কারণে এবার প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলের নেতারা কে কাকে সমর্থন দিল, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সবাই মিলে যদি এক প্রার্থীকে নির্ধারণ করেন, সেটা আলাদা বিষয়। তিনি তো দল থেকে মনোনীত হচ্ছেন না। আমাদের কথা হলো, স্থানীয় বা তৃণমূল আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দিতে পারবে না, কিন্তু সমর্থন দিতে পারবে।’
‘ব্যক্তিগত সমর্থন যে কেউ দিতে পারেন। একজন ভোটার যেমন ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন, তেমনি তিনি যে কাউকে সমর্থনও দিতে পারেন। ধরেন, থানার নেতারা যদি বসে একজনকে মনোনয়ন দেন, আবার সেই থানা থেকে যদি আরেকজন প্রার্থী হন, সেখানে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। যদি সবাই মিলে একজন প্রার্থীকে মনোনীত করেন..., এটা পারবে বলে আমার মনে হয় না।’
জানা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচন আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচনে না হলেও এ সিটির নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সম্পন্ন হবে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা অংশ নিচ্ছেন। উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন পেয়েছেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তার নাম ঘোষণা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এতে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ কমিটির নেতাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে তাহসিন বাহার সূচনাকে সমর্থন দেন। এরপর মহানগর সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার তাহসিন বাহার সূচনাকে সমর্থন দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ হয় ঢাকা পোস্টের। তারা জানান, দলীয় প্রতীক থাকলে দলের একটা নির্দেশনা থাকত, শৃঙ্খলা রক্ষা হতো। এখন তো অনেকেই প্রার্থী হবেন, প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। এরপরও শঙ্কা থেকে যায়। শঙ্কাটা স্থানীয় নেতাদের নিয়ে নয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে। কারণ ব্যাখ্যা করে তারা আরও জানান, অতীতে যখন দলীয় প্রতীক ছিল না, তখন কেন্দ্র থেকে অদৃশ্য ফোন আসত। এবারও কী তা-ই হবে? যদি কেন্দ্রীয় নেতারা তলে তলে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেন, তাহলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সমর্থন না দিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
এমএসআই/এমএআর/