বয়ঃসন্ধিই যেন ‘কাল’ রোহিঙ্গা কন্যাশিশুদের
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পেলেও দুই কন্যাকে নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন নূরন্নাহার। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুবেলা যখন খাবারের কষ্ট, তখনো অতীতের অপমান ঘুরপাক খেত মা নূরন্নাহারের মাথায়। এ অবস্থায় ১৪ বছর বয়সেই বড় মেয়ে শরিফাকে বিয়ে দেয় পরিবার।
কেন অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় শরিফাকে? এমন প্রশ্নে নিমেষেই নূরন্নাহারের মুখে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বলেন, ‘বাওজি ভুল তো হয়েই গেছে’।
তিনি জানান, মিয়ানমারে থাকতে নিজে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বড় মেয়ের সামনেই। তখন শরিফার বয়স ছিল ১১ বছর। সেই লজ্জা-আড়ষ্টতা থেকে মানসিক চাপ অনুভব করতেন। সেই দুঃসহ স্মৃতি, অপমান তাড়িয়ে বেড়াত তাকে। এসবের মধ্যেই এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) আশ্রয় নেওয়ার তিন বছরের মাথায় ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় বড় মেয়ে শরিফাকে।
পরপুরুষের কুদৃষ্টির বিষয়টি সামনে আসায় পড়াশোনার পরিবর্তে বিয়েতেই সমাধান দেখেছে পরিবার। তবে চেষ্টা করেও শরিফার মতো তার ছোট বোন জামিলাকে বিয়ে দিতে পারেনি পরিবার। সে বড় বোনের আকস্মিক বিয়ে মেনে নিতে পারেনি।
গত বছরের নভেম্বরে জামিলার অজান্তেই বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। সে শরিফার চেয়ে দুই বছরের ছোট। ক্যাম্পে ইউনিসেফের বাল্যবিয়ে বিরোধী প্রচারণা, কন্যাশিশুদের জন্য আলাদা লার্নার সেন্টারে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া সবে ১৩ বছরে পা দেওয়া জামিলার ছিল স্পষ্ট জবাব– ‘কোনোভাবেই বিয়ে করব না’।
সে যাত্রায় বাল্যবিয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া জামিলা এখন অদম্য স্পৃহার নাম। তার দেখাদেখি বাল্যবিয়ে বিরোধী অবস্থান, লার্নার সেন্টারগুলোতে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের পাঠাতে আগ্রহ বেড়েছে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক অভিভাবকের।
জামিলার মা নূরন্নাহার বলেন, আমারও অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। সেজন্য আমিও শরিফার বিয়েতে সায় দিয়েছিলাম। পরে বুঝেছি, হয়ত বড় মেয়ের মতোই জামিলার সংসারটা হয়ে যেত। এখন বুঝছি, ঘরে রাখা বা বিয়ে দেওয়া সমাধান নয়।
জামিলা বলে, অনেকে পড়তে যাচ্ছে। আমারও ইচ্ছে করেছে। সেই ইচ্ছে পূরণে বিয়ে কেন বাধা হবে। লার্নার সেন্টার বা স্কুলে যেতে যেতে বুঝছি, শিখছি নতুন কিছু। যা ঘরে থেকে বা মায়ের কাছে থেকে হয়ত জানা হতো না। মা তো কখনো স্কুলে যায়নি। আমি শিখতে চাই, জানতে চাই।
জামিলার বাল্যবিয়ে বিরোধী বার্তা, পড়াশোনায় অদম্য স্পৃহা আর মা নূরন্নাহারের বোধ আশা জাগানিয়া হলেও মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী অভিভাবকের এখনো ধারণা, কন্যাশিশুদের সুরক্ষায় তাদের ঘরে রাখাই নিরাপদ। বিশেষ করে যখন তারা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে।
খোঁজ নিয়ে ও কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা অভিভাবকদের অনেকের ধারণা, কন্যা বা ছেলে শিশু বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছা মানে তাদের একই শ্রেণিকক্ষে সময় কাটানো উচিত নয়। শুধু তাই নয়, কন্যাদের বাইরে যাওয়াই মানা। শিশু অবস্থায় কেউ কেউ শিক্ষা নিকেতনে যাওয়ার সুযোগ পেলেও বয়ঃসন্ধি যেন ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের ধারণা, এ সময়টায় মেয়েদের বিয়ে হবে আর ছেলেরা যাবে কাজে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌলিক চাহিদার অন্যতম শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। একটা অমানবিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে রোহিঙ্গারা নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। শুরুটা তাদের নির্যাতনে, এরপর বাস্তুচ্যুত করা হয়। আশ্রয় মিললেও শিশুরা তো বটেই, বয়স্ক রোহিঙ্গা নাগরিকরাও ট্রমায়, অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলোকে রোহিঙ্গা শিশুদের সামনে বড় করে উপস্থাপন করা উচিত। নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা-সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।
রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনায় বাধার নেপথ্যে
রোহিঙ্গা অভিভাবক, ইউএনএইচসিআর, স্থানীয় প্রশাসন, রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মীয় ভুল ধারণা, মিয়ানমারের সংস্কৃতি, সামাজিক সম্মানহানি ও নিরাপত্তা অজুহাতকে অনেক বড় করে দেখা হয়। এর বলি হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু, কিশোর-কিশোরীরা।
ঘরের বাইরে নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকলেও বাড়িতে থাকা কন্যাশিশুরাই বাল্যবিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, লিঙ্গ-সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর ছেলে শিশুরা থাকে ঝুঁকিতে। নানা অজুহাতে তাদের পাঠানো হয় শিশুশ্রমে।
ছেলে শিশুদের শ্রমে পাঠানোর ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ, দুষ্টচক্রের নির্যাতন ও হামলা, সংঘর্ষে শিশুর মৃত্যু, ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড ও জলবায়ুর প্রভাবে সব হারানো, শিশু অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়। পাশাপাশি শ্রমে খাওয়া ও টাকার লোভ।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে প্রচলিত বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা কন্যাশিশুদের বাড়ির বাইরে সময় কাটানো এবং কারও সঙ্গে মেলামেশাকে সীমিত করে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে। যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনাকে সামাজিক সম্মানহানিসহ নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে রোহিঙ্গা কন্যাশিশুদের বাল্যবিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইউনিসেফ বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চার লাখের বেশি স্কুল-বয়সী শিশুর বসবাস, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মেয়ে। তাদের সার্বিক মঙ্গল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য পড়াশোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও মেয়েরা প্রায়শই ছেলেদের তুলনায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি বাধার সম্মুখীন। এ বাধার পেছনে রয়েছে প্রচলিত বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা, যা তাদের বাড়ির বাইরে সময় কাটানো এবং কারও সঙ্গে মেলামেশাকে সীমিত করে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষাকেন্দ্র
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে থাকা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৮০০টি কেন্দ্র ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত। শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ইংরেজি, বার্মিজ, গণিত, বিজ্ঞান ও বিভিন্ন জীবন দক্ষতা সম্পর্কিত বিষয়ে শেখানো হয় এবং এগুলোর চাহিদাও অনেক। ৬ থেকে ১১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদের ৮০ শতাংশ এখন শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তির হার ছেলে-মেয়ে উভয় ক্ষেত্রেই বেশি।
নতুন শিক্ষাবর্ষে রেকর্ড সংখ্যক রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষার সুযোগ
বাল্যবিয়ের ভয়, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছা শিশুদের ঘরে রাখার প্রবণতা, প্রায়শই আগুনে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে নানামুখী ক্ষতির মধ্যেও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের শ্রেণিকক্ষগুলোতে বেড়েছে শিক্ষার সুযোগ। কিশোর-কিশোরীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোয় রেকর্ড সোয়া তিন লাখ শিশু নিবন্ধিত হয়েছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে।
ইউনিসেফের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, গত ২৩ জুলাই নতুন বর্ষের যাত্রা শুরু হয়। নতুন এ শিক্ষাবর্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৭ জন রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর ও যুবক ভর্তি হয়েছে। যাদের বয়স ৩-২৪ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ইউনিসেফ শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিতির জন্য কমিউনিটি কাঠামো, রোহিঙ্গা পিতা-মাতা এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে। বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট শিক্ষার উপকরণও সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইউনিসেফের তথ্য মতে, ২০২১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে এই আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমটি ধীরে ধীরে গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-৫ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। যা প্রথমবারের মতো গ্রেড-১০ পর্যন্ত চালু হয় গত ২৩ জুলাই। এ উদ্যোগ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বড় ও ছোট-উভয় শিশুদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
শিক্ষার সুযোগ বাড়লেও পিছিয়ে রোহিঙ্গা কন্যাশিশুরা
শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি সত্ত্বেও মেয়েদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে লিঙ্গ ব্যবধান প্রকট হয়ে ওঠে। বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছার পর সাধারণত ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী মেয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে কাছাকাছি বয়সের ছেলে শিশুদের জন্য শিশুশ্রম যেন অবধারিত হয়ে পড়ে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন মাসেই ঝরে পড়েছে ১৯ রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরী
ইউনিসেফের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে নথিভুক্ত ৯৫ হাজার ৮৩১ কন্যাশিশু ভর্তি হয়েছে। যাদের বয়স ৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির তিন মাসের মধ্যেই আবার ১৯ কিশোরী ঝরে পড়েছে। যাদের বয়স ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
রোহিঙ্গা কমিউনিটিতে লিঙ্গ বৈষম্য-সহিংসতা প্রবল
নিজের কমিউনিটিতে বিদ্যমান লিঙ্গ-কেন্দ্রিক প্রচলিত ধ্যান ধারণার কথা উল্লেখ করে শফি উল্লাহ নামে কুতুপালংয়ের একটি ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা অভিভাবক বলেন, মিয়ানমারে আমার মা কখনো স্কুলে যায়নি। আমার স্ত্রীও কখনো স্কুলে পা রাখেনি। নির্যাতনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। পরিস্থিতির বদলালেও ধারণা বদলেনি। এখানে এখনো অনেকের ধারণা ১২ বছরের বেশি বয়সি মেয়েরা বাড়িতেই থাকবে। তারা ছোট ভাই-বোনদের যত্ন নেবে, পরিবারের জন্য রান্না করবে, বিয়ের পর সংসার করবে। আমিও দুই মেয়েকে স্কুলে পাঠাইনি, অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, তবে এ বছর স্বেচ্ছাসেবকরা ঘন ঘন আসছিল। ইউনিসেফ প্রতিনিধিরাও বলছিল স্কুলে অন্তত ছোট মেয়েকে যেন ভর্তি করে দিই। নারী শিক্ষক ঘর পর্যন্ত এসেছিল। তাই এ বছরের জুলাইতে ছোট মেয়েকে স্কুলে দিয়েছি।
রোহিঙ্গা বাবা-মায়েরা ক্যাম্পে তাদের কিশোরী মেয়েদের ঘরে রাখার কারণ হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান। অথচ যেসব মেয়ে বাড়িতে থাকে তাদেরই বাল্যবিয়ে, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, লিঙ্গ-সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
তাদেরই একজন মুন্নি নামের এক কিশোরী। যাকে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার। স্বামীর সঙ্গে ভাষানচরে স্থানান্তরিত হওয়া মুন্নির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় মোবাইলে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, উখিয়ায় পরিবারের সঙ্গে ক্যাম্পে দুই ভাই আর আমি ছিলাম। দেখতাম বাবা-মা দুই ভাইকে যতটা সম্ভব যত্ন-আত্তি করত। আমার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে বিয়ের আগের দুই বছর। এখন তো স্বামী-সংসার আছে।
মুন্নি বলেন, পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিলাম। শরীরে যখন পরিবর্তন আসছিল, পরিবারের চিন্তাও যেন আরও বাড়ছিল। যত তাড়াতাড়ি আমাকে বিদায় (বিয়ে) করা যায়, এমন তোড়জোড় চলছিল। অথচ আমার ইচ্ছে ছিল স্কুলের শিক্ষিকা হব। যেখানে আমি বঞ্ছনার শিকার সেখানেই আলো ছড়াব, সেটা হয়নি। অন্ধকারেই থেকে গেছি।
তবে মুন্নির স্বপ্ন, একদিন মিয়ানমারে ফিরবেন। সম্ভব হোক আর না হোক নিজ সন্তানকে মানুষ করবেন। শিক্ষায় যে রোহিঙ্গা কন্যাশিশুরা পিছিয়ে, সেখানে সন্তানদের এগিয়ে রাখবেন।
হাসি ফিরেছে তাসফিয়ার
মুন্নির স্বপ্ন অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেও নতুন শিক্ষাবর্ষ ও নতুন শিক্ষা কারিকুলামে হাসি ফুটেছে তাসফিয়ার। উখিয়ার বালুখালির ৮ (ডব্লিউ) নম্বর ক্যাম্পের ১৪ বছর বয়সি তাসফিয়া বলেন, ২০২০ সালে ঘরের কাছেই একটা শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। যাওয়াও শুরু করেছিলাম। এক বছর পার হতেই সেখানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
কারণ উল্লেখ করে তাসফিয়া বলে, আমার শরীরে পরিবর্তন আসে এবং বাড়ির বাইরে সময় কাটানো ও কারও সঙ্গে মেলামেশা বা ছেলে সহপাঠীর সঙ্গে একই কক্ষে ক্লাস হওয়ায় পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনি, আমিও মেনে নিয়েছিলাম। তবে শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষ চালু করার পর পরিবারের সেটা পছন্দ হয়। এ বছর আবার পড়াশোনা শুরু করেছি।
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাল্যবিয়ে বেশি
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার ফারজানা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাইল্ড প্রটেকশন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ অনুসারে রিপোর্ট করা মামলার উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের ঘটনা জড়িত। পরিসংখ্যান সবসময় বাল্যবিয়ের ব্যাপকতার সম্পূর্ণ চিত্র প্রদান করতে পারে না। প্রকৃত বাল্যবিয়ের ঘটনা আরও বেশি হতে পারে। তবে বাল্যবিয়ের মতো জটিল সমস্যার সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউনিসেফ। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছি আমরা।
মেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য সৃজনশীল উপায়
২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনিসেফ ও সহযোগীরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের মিয়ানমারের জাতীয় পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। মিয়ানমার কারিকুলাম পাইলটের অংশ হিসেবে শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সহায়তা করছে ইউনিসেফ, যেহেতু অনেক রোহিঙ্গা বাবা-মা সহশিক্ষা কার্যক্রম অপছন্দ করেন।
এ ব্যাপারে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার ফারজানা সুলতানা বলেন, মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের কার্যকর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য রোহিঙ্গা এবং হোস্ট সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের পেশাগত উন্নয়ন প্রদান করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রতিবন্ধী শিশুদের শেখার সুযোগকে সামনে আনা ও সহায়তা করার জন্য এবং কিশোরীদের জন্য নারী রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছে ইউনিসেফ।
অদম্য স্পৃহার নাম হাত হারানো এহসান
চলতি বছরের গত ৩১ মে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রথমবারের মতো বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দেয় ১৪ বছর বয়সী এহসান। তবে এহসানের পরীক্ষা অন্য সহপাঠীদের মতো ছিল না। কারণ এহসানের হাত নেই। হাতের বদলে ডান পা দিয়ে কলম ধরে লিখে পুরো পরীক্ষা দিয়েছে এহসান। সব বাধা, অজুহাতের বিরুদ্ধে এহসানের অদম্য স্পৃহা অন্য রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য তৈরি করেছে বড় উদাহরণ।
এক বছর আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত হারায় এহসান। সে ভেবেছিল, তার সব স্বপ্ন শেষ। কিন্তু পরিবার ও শরণার্থী শিবিরের সেবাদাতাদের যত্ন ও পরিচর্যায় দুর্ঘটনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে শুরু করে এহসান। ইউনিসেফের কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশনের (এইচআই) একজন ফিজিওথেরাপিস্ট প্রতিদিন এহসানের বাড়িতে গিয়ে তার দুই পায়ে থেরাপি দেন। ধীরে ধীরে এহসান হাঁটাচলার শক্তি ফিরে পায়।
মিয়ানমারে একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছিল এহসান। এরপর আর স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় বাংলাদেশে।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠা এহসান ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের একজন। এহসান বলে, আমি আবার যখন হাঁটতে শুরু করলাম, আমার শিক্ষক আমাকে দেখতে এলেন এবং হেঁটে শিক্ষাকেন্দ্রে যেতে আমাকে সহযোগিতা করলেন। এমনকি কীভাবে পা দিয়ে লিখতে হয়, সেটা শিখতে তিনি আমাকে সহযোগিতা করলেন। অনেক কষ্টকর ও কখনো কখনো বিব্রতকর হলেও আমি এখন পা দিয়ে লিখি। আমার চেনাজানা আর কেউ এটা পারে না।
সামসুলের মন টানে স্কুলে
২০২১ সালের ২২ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির ৮ (ডব্লিউ) নম্বর ক্যাম্পে আগুন লাগে। যা পরে আশপাশের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। সেই আগুনে সামসুলের পরিবারের সব কিছু পুড়ে যায়। এরপর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। অল্প বয়সে খুঁজে নিতে হয় কাজ।
সামসুল ঢাকা পোস্টকে বলে, সবজির গাড়ি, মাল টানা গাড়িতে কাজ করি। কখনো হোটেলে সময় দিই। দিনে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা পাই। মন চায় পড়ি, সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যাই, খেলি। কিন্তু পরিবারকে সহায়তায় কাজ করতে হয়।
শুধু সামসুল নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সগোত্রীয়দের অনেককেই সহিংসতা, অভাব কিংবা পরিবারের চাপে কাজ করতে দেখা যায় টেকনাফ-কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁয়। আবার কাউকে দেখা যায় সবজির ভ্যান ঠেলতে কিংবা ফেরি করে চা-সিগারেট বেচতে।
টেকনাফ বাসস্ট্যান্ড বাজারের একটি হোটেলে খাবার পরিবেশনের কাজ করে রোহিঙ্গা শিশু মেনহাজ। সে জানায়, দেড় বছর ধরে কাজ করছে হোটেলটিতে। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পায়। সেখানেই থাকা। আগে থাকত টেকনাফের মুসুনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সগোত্রীয়দের অত্যাচারে ক্যাম্প ছেড়ে হোটেলে কাজ করাকে নিরাপদ মনে করেছে সে।
মেনহাজ জানায়, একই হোটেলে তিন বেলায় তার মতো আট-নয় জন রোহিঙ্গা শিশু কাজ করে। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
জানতে চাইলে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার ফারজানা সুলতানা বলেন, ইউনিসেফ ঐতিহ্যগত বিশ্বাস এবং দারিদ্র্যচালিত শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের ঘটনাগুলো নিরীক্ষণ এবং মোকাবিলায় অংশীদারদের সহযোগিতা করছে। শিশুশ্রম ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রশমিত করার জন্য শক্তিশালী শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলাদা শ্রেণি কক্ষ ও নারী শিক্ষক বাড়ানোর পরামর্শ
নারী শিক্ষকের উপস্থিতি শিক্ষায় মেয়েদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন রোহিঙ্গা নেতা ও রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা খিন মং। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো অনেক বাধা আছে। তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের উন্নয়নে নারী শিক্ষকদের যে ইতিবাচক প্রভাব আছে, ইতোমধ্যেই তা প্রমাণিত। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি আছে। প্রথাগত ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তনে সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি আলাদা শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো গেলে রোহিঙ্গা কন্যাশিশুদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়বে।
তিনি বলেন, শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গা কারিকুলাম চালু হলেও পর্যাপ্ত বার্মিজ ভাষা জানা শিক্ষক নেই। বেশ কিছু ইয়ুথ জেনারেশনের শিক্ষিত যুবক-তরুণী রয়েছে, যাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা উচিত।
এ ব্যাপারে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অফিসার ফারজানা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম কার্যকরের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য রোহিঙ্গা এবং হোস্ট সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের পেশাগত উন্নয়ন প্রদানে সহযোগিতা করছি।
তিনি বলেন, লার্নিং সেন্টার, কমিউনিটিভিত্তিক শিক্ষার সুবিধাগুলো চেষ্টা করা হয় যতটা সম্ভব শিশুদের বাড়ির কাছাকাছি করার জন্য। কিশোর-কিশোরীদের জন্য একক লিঙ্গের শিক্ষার সুবিধায় ক্লাসগুলো করা হয়।
বাল্যবিয়ে-শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কমিউনিটির সাহায্য-সমর্থন
সব মেয়েরই নিজের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে রোহিঙ্গা শিশুদের বাল্যবিয়ে রোধ ও শিশুশ্রম বন্ধ ও স্থায়ী পরিবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সহায়তা এবং স্থানীয় কমিউনিটির সমর্থন ও সম্পৃক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সি আর আবরার ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রুত তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যেমন সম্ভব হয়নি, সেরকম নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। জীবনমান অনুযায়ী খরচ বেড়ে গেলেও উল্টো তাদের আর্থিক, মানবিক সহায়তা কমে গেছে। সেখানে একটি অসহায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি কিংবা ছেলেকে শিশুশ্রমে পাঠাবে, এটাই মর্মান্তিক বাস্তবতা। সামাজিক নিয়ম এবং লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে বাল্যবিয়েতে অবদান রাখছে অভিভাবকরাই।
তিনি বলেন, এখানে মায়াকান্না না করে বাস্তবিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য এখন তাদের মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিও নিশ্চিত করা জরুরি, তেমনি শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাও জরুরি।
অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুনর্বাসন যেভাবেই হোক, প্রত্যাবাসনে কিন্তু ব্যর্থতা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সহসা তাদের প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা কম। এটা তো হতাশা তৈরি করেই। সেই হতাশা থেকেই হয়ত অনেক বাবা-মা মনে করেন, মেয়েদের লেখাপড়া করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বিয়ে ও নিজের পরিবার হওয়ার আগে তারা বাড়িতে মাকে কাজে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, জীবিকা অর্জনে শ্রমে যেতে ছেলেশিশুদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়েতে অনেক অভিভাবক সমাধান দেখেন।
তিনি বলেন, শিশু মাত্রই তার অধিকার শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। যত বাধাই থাক বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম বন্ধে বৈদেশিক সহযোগিতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার সরকারের সদিচ্ছা ও স্থানীয় কমিউনিটির সহযোগিতা।
মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে শিশুদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে হবে
রোহিঙ্গা শিশুদের বাল্যবিয়ে বন্ধ, কন্যাশিশু বা কিশোরীদের স্কুলে পাঠানোর দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা সম্পর্কে বোঝাতে রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে ইউনিসেফ ও সহযোগীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুরা শিখতে চায়। তারা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা ও স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে চায়। মিয়ানমারে এই শিশুদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশে থাকাকালে তারা যেন তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে।
প্রতিটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুর জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহযোগী ও দাতাদের ইউনিসেফের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক রীতিনীতির কারণে অভিভাবকরা প্রায়ই বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চান না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিভাবকদের কাছে মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে, মেয়েদের জন্য আলাদা শ্রেণিকক্ষ তৈরি করতে এবং নারীদের সাহচর্যে কিশোরীদের স্কুলে পাঠাতে ইউনিসেফ ও তার সহযোগীরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
জেইউ/এসএসএইচ