নির্বাচনী মাঠে সাবেক আমলারা, হতে চান এমপি-মন্ত্রী
>> মনোনয়ন চাইবেন কয়েকজন সাবেক আমলা
>> জনসংযোগের পাশাপাশি তদবিরও করছেন কেউ
>> আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। দু-এক দিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট আসনে প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, এসব সাবেক আমলা মনোনয়ন পেতে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়ন দৌড়ে যুক্ত থাকার জন্য কেউ-কেউ দলের নেতাদের সঙ্গে তদবিরও করছেন।
খুলনা- ১ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটার ও এলাকাবাসীর খোঁজখবর নেওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক এ সচিব।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোলা- ৪ আসন থেকে ভোটে অংশ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। চরফ্যাশন উপজেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদশুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানাভাবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন
নওগাঁ- ৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকতে তিনি বিভিন্নভাবে জনসংযোগ করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ১ (শিবগঞ্জ) আসনের রাজনীতিতে আলোচনায় আছেন সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান। জানা গেছে, অবসর নেওয়ার পর ‘ফুলটাইম’ রাজনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন জিল্লার রহমান। তার শিবগঞ্জ বাজারের বাসভবনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের যাতায়াত। সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অনেককে তার বাসভবনে দেখা গেছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর- ১ (কচুয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব মো. গোলাম হোসেন। তিনি এলাকায় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদের মেয়াদ শেষে চলতি বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হয়েছেন কবির বিন আনোয়ার। সিরাজগঞ্জের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন তিনি।
তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, কবির বিন আনোয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার বাবা আনোয়ার হোসেন রতু ও মা প্রয়াত ইসাবেলা দুজনেই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবা ১৭ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেছেন। কবির বিন আনোয়ার নিজেও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। এজন্য তিনি মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য।
আরও পড়ুন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল- ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাবেক সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া। অনেক দিন ধরে ওই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এলাকায় বেশ কয়েকটি পথসভা ও উঠান বৈঠকও করেছেন সাবেক এ আমলা।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কুমিল্লা- ১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, অবস্থা বুঝে মনোনয়ন চাইতে পারেন তিনি।
জানতে চাইলে খুলনা- ১ আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজন্ম দাকোপ-বটিয়াঘাটার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা এখানেই। এ মাটি ও মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য লড়ব আমি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এ মহান দায়িত্ব নিচ্ছি। প্রত্যাশা করি, এ আসন থেকে দল আমাকে নৌকার টিকিট দেবে।
ড. রায় আরও বলেন, আধুনিক দাকোপ-বটিয়াঘাটা গড়তে আমাদের শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন। এ জনপদের মানুষের অধিকার নিয়ে মহান সংসদে কথা বলবে, উন্নয়ন প্রকল্প আনবে— এমন নেতার প্রয়োজন। ব্যক্তিস্বার্থ ও অহমিকা ছাপিয়ে সমাজের প্রতিটি কোনায় বঙ্গবন্ধুর চর্চাকে অবারিত করার সুযোগ প্রয়োজন। আমরা সে কাজটি করব। এ কারণে আমি আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। নানামুখী জরিপ ও জনগণের অভূতপূর্ব সমর্থন ও ভালোবাসা দেখে আশা করি আমাকে অবশ্যই মনোনয়ন দেওয়া হবে এবং বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে গণমানুষের কল্যাণে কাজ করব।
আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ
অবসরের তিন বছর পার না হওয়া পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এজন্য আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে কয়েকজন আমলা।
অবসরের তিন বছর পার না হওয়া পর্যন্ত সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার বিধান কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
নির্বাচনে সরকারি চাকরিজীবীদের অযোগ্যতার বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)- ১৯৭২ এর ১২ (১) (চ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসরে গমন করেছেন এবং উক্ত পদত্যাগ বা অবসর গমনের পর তিন বৎসর অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।’
এ বিধান চ্যালেঞ্জ করে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শামীম কামাল হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এ ছাড়া, একই ইস্যুতে অবসরে যাওয়া আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আদালত রুল জারি করেন। ইতোমধ্যে সবগুলো রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী শুনানি করছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত শুনানি করবেন।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বুধবার শুনানি হবে। তারপর আদালত রায় দেবেন।’
অবসরে যাওয়ার পর নির্বাচনে অংশ নিতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা থাকতে হবে— এমন শর্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ফখরুদ্দিন সরকারের সময় (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়) করা এ কালো আইন বাতিলের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারকে দিয়ে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এটার নিষ্পত্তি হবে।’
এসএইচআর/