সরকারের অসন্তোষ, সামনে ‘স্পেস’ নাও পেতে পারেন কূটনীতিকরা
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা নতুন কিছু নয়। তবে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকায় দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা যেন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। যা অতীতে দেখা যায়নি। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে তাদের ভূমিকা আরও বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অব্যাহত বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন যে বার্তাই দিক সেগুলো ছাপিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গতিবিধি যেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তিনি কখন, কোথায় যাচ্ছেন; কাদের সঙ্গে বসছেন এবং কী বলছেন— তা নিয়ে মানুষের আগ্রহও বেশ।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়েছে। এ ছাড়া, শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এ কারণেও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সক্রিয় তৎপরতা চোখে পড়ছে। তারা (কূটনীতিকরা) চাইছেন, তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে বসুক
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো সমাবেশ করে। সমাবেশ কেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতার পর অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় দলগুলো। বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির মধ্যেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- গত ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক। এরপর গত ২ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক রাজনৈতিক মহলে বেশ গুরুত্ব পায়। সর্বশেষ, গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে হওয়া হাসের বৈঠকটি ছিল বেশ আলোচনাপূর্ণ। এর আগে, ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন
১৫ দিনের ব্যবধানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গুরুত্বপূর্ণ ওই চারটি বৈঠকের মধ্যে শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে হওয়া বৈঠকটি সম্পর্কে সাধারণ জনগণ অবহিত হয়েছেন। কারণ, উভয়পক্ষ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাকি তিনটি বৈঠক নিয়ে কোনো পক্ষই গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি। ফলে সাধারণ ও সচেতন জনগণও কিছু জানতে পারেননি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এসব বৈঠক ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠক’ বলেই মনে করছেন। তাদের ধারণা, বৈঠকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৮ অক্টোবরের সংঘাত-সহিংসতা এবং পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সংলাপের তাগিদ দিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার বার্তাও থাকতে পারে। এ ছাড়া, বিএনপির শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও আলোচনায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।
চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অব্যাহত বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন যে বার্তাই দিক সেগুলো ছাপিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গতিবিধি যেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তিনি কখন, কোথায় যাচ্ছেন; কাদের সঙ্গে বসছেন এবং কী বলছেন— তা নিয়ে মানুষের আগ্রহও বেশ। কূটনীতিক রীতিনীতির বাইরে গিয়ে তাকে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে
তাদের মতে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়েছে। এ ছাড়া, শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এ কারণেও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সক্রিয় তৎপরতা চোখে পড়ছে। তারা (কূটনীতিকরা) চাইছেন, তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে বসুক।
মাস ছয়েক আগে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হয়ে ঢাকায় আসেন সারাহ কুক। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মতো সেভাবে আলোচনায় না থাকলেও সম্প্রতি ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দৃশ্যমান কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। গত ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল ছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
গত ১ নভেম্বর ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব বৈঠকে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের বার্তা পৌঁছে দেন কুক।
গত ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ওই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের বোধ হয় রাজনৈতিক দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা উচিত। তারা হয়তো বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চান
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি এবং ইইউভুক্ত কয়েকটি দেশের দূতরা নির্বাচন কমিশন, সরকার ও বিরোধীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত ২৮ অক্টোবরের সহিংস ঘটনার পর ইইউ’র ঢাকা মিশন ‘গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছে’ জানিয়ে এক খুদে বার্তায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে একটি ‘শান্তিপূর্ণ পথ’ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার সাতটি বিদেশি মিশন একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে ‘অংশীজনদের সংযম অনুশীলনের মাধ্যমে সহিংসতা পরিহার এবং নির্বাচনের শর্ত মেনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান’ জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মিশনগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন
এদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের এমন তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে তার ইঙ্গিত মিলেছে। গত ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ওই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের বোধ হয় রাজনৈতিক দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা উচিত। তারা হয়তো বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা নিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাদের এতটা সক্রিয় দেখিনি। এখন যতটুকু দেখছি। এবার তারা অনেক আগে থেকেই সক্রিয়। এর উদ্দেশ্য ও কারণ তারাই বলতে পারবেন।’
বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের অবশ্যই ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা উচিত। তারা চাইলেও অন্য একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারেন না। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কোনো একটি ঘটনা ঘটলে কয়েকটি মিশন মিলে বিবৃতি দিচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো বিষয়ে তাদের আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে কূটনৈতিক উপায়ে জানানোর নিয়ম। অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করবে, এটিই নিয়ম।’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে, নয়াদিল্লি এখনও খোলাসা করে কোনো বার্তা দেয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এর বাইরে দৃশ্যমান কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যায়নি ভারতের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন
এদিকে, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী চীন। দেশটি সাধারণত কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য করে না। তবে, গত মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীন কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
অতীতের মতো রাশিয়াকেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। অন্য দেশের ক্ষেত্রেও তারা এমন নীতি অবলম্বন করে। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি কোনো দেশের বিষয়ে কথা বললে তার পাল্টা মন্তব্য করছে মস্কো। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরূপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা জানায় মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পরীক্ষিত এ বন্ধু দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ইস্যুতে বেশ কয়েকবার দেশ দুটি তর্কে জড়ায়।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু দেশ জাপান। দেশটি বাংলাদেশের নির্বাচন এবং সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তেমন একটা নাক গলাচ্ছে না। তবে, তারা সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে বলে জানায়।
বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ঢাকার এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যা দেখছি তা নজিরবিহীন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ উদ্বেগ জানিয়েছিল। সেবার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসানোর জন্য জাতিসংঘ ভূমিকা রেখেছিল। ২০১৮ সালে সেই অর্থে বিদেশিদের নির্বাচনের আগে কথা বলতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিদেশিদের তৎপরতা বেশ চোখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইইউ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন, কেউ কেউ সামনে সফরে আসবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ তৎপর। তারা সরকারি ও বিরোধী দল এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, বৈঠক করছেন। যেটি আগে সেভাবে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন
ঢাকার জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, অনেক কূটনীতিককে এখন বেশ সক্রিয় দেখছি। তবে, তাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না যেটি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই সফরে যাচ্ছেন এবং ওনার সঙ্গে বিদেশি যারাই বৈঠক করছেন; তিনি তাদের আশ্বস্ত করছেন যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর বাইরে যুক্তরাজ্য বা ইইউও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলছে। তারা যে গণতন্ত্র বা নির্বাচনের কথা বলছে, সেটি তো তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে তাদের পাশে চাচ্ছে। তারা বললে তো নির্বাচন সুষ্ঠু বা অবাধ হবে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে একটি ভালো নির্বাচন হবে।
এদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি কূটনীতিকদের এমন তৎপরতায় সন্তুষ্ট নয় সরকারও। তাদের তৎপরতার আরও বাড়তে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বুধবার (৮ নভেম্বর) সৌদি আরব থেকে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পছন্দ করছি না। যদিও এটি কালচারে পরিণত হয়েছে। তারপরও আমরা তাদের একটি স্পেস দিয়েছি। সামনের দিনে এ কালচার থেকে আমরা সরে আসতে পারি। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নেবে।’প্রতিমন্ত্রী বলেন, তফসিল ঘোষণা যেকোনো সময় হয়ে যাবে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে। এ সময় একটু ধৈর্য ধরার প্রয়োজন আছে। রাষ্ট্রদূত যারা আছেন তারা আমাদের অতিথি। তারা (বিদেশি দূতরা) যদি ভিয়েনা কনভেনশন না মানেন, রাষ্ট্র হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। আমরা চাই সবার আচরণ, অঙ্গভঙ্গি এমনকি লেখালেখি সহনীয় হওয়া উচিত, এটির প্রয়োজন আছে।
রাষ্ট্রদূতদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের ডেকে পাঠানোর প্রয়োজন পড়বে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না সেটির প্রয়োজন হবে। যদি প্রয়োজন হয় সেটি হবে দুঃখজনক। যখন আমাদের হাতে আর কোনো অপশন থাকবে না, তখন কী করতে হবে, তা আমাদের জানা আছে।’
এনআই/এমএআর/