প্রকল্প উদ্বোধনে ভোটের টোপ!
আগামী জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন ক্ষমতাসীনরা। জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে একের পর এক বড় প্রকল্প উদ্বোধন করছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকার।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এত প্রকল্পের উদ্বোধন ভোটার টানার কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। তবে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকাকে ভোট দেবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের টোপ হিসেবেও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কাজ করবে বলে মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
জানা গেছে, চলতি মাসের ৭ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের একাংশ এবং ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সুধী সমাবেশ করেছে সরকার। গতকাল ১৪ অক্টোবর জনসভাও করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া, পদ্মা রেল সেতু চলাচল উপলক্ষ্যে ফরিদপুরে বিশাল জনসভা করেছে আওয়ামী লীগ। সেখানেও প্রায় অর্ধলাখ নেতাকর্মী অংশ নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হবে। সেদিন মতিঝিল প্রান্তে এক বিশাল মহাসমাবেশের আয়োজন করবে ক্ষমতাসীন দলটি। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হচ্ছে চলতি মাসের ২৮ অক্টোবর। সেখানেও সুধী সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এসব প্রকল্প আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেছেন এবং করবেন।
আরও পড়ুন
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মহিউদ্দিন জালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়নি। প্রকল্প শেষ হয়েছে, তা-ই উদ্বোধন হচ্ছে। আমাদের দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে এটা কিন্তু ঠিক। আওয়ামী লীগ তার কথা মতো উন্নয়ন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এত উন্নয়ন হবে কেউ স্বপ্নেও ভাবছে কি না, আমার সন্দেহ হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করে দেখিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন দেখে ভোটাররা ভোট দেবেন কি না, তাদের ব্যাপার। আমি মনে করি যারা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে, বাংলাদেশকে ভালোবাসে, তারা ভোট দেবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত উন্নয়ন হয়নি। এসব উন্নয়নের কারণে মানুষের জীবন ও মান বদলে গেছে। যে দল মানুষের জীবন ও মান বদলে দিয়েছে উন্নয়ন দিয়ে সেই দলকেই তো মানুষ ভোট দেবে।
দলীয় সূত্র মতে, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ মাসের (অক্টোবর) মধ্যে ট্রেন চলাচলের ট্রায়াল দেওয়া হবে। আগামী ৯ নভেম্বর প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলপথ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে চলছে প্রস্তুতিও। এ দুই প্রকল্প ছাড়া আরও ছোট ছোট অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি। নির্বাচনের আগে দেশে একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধনকে আওয়ামী লীগের কৌশল বলে মনে করছেন ভোটাররা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জননেত্রী দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কাজ শেষে সেগুলো উদ্বোধন করছেন। ভোটের সময় জনগণ মূল্যায়ন করবে, শেখ হাসিনা তাদের জন্য কী করেছেন। আমাদের বিশ্বাস জনগণ শেখ হাসিনার পক্ষে আছেন।’
দলীয় সূত্র মতে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের সকল উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার জন্য দলের হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের উন্নয়নের চিত্র তুলে ভোট চাইতে বলছেন। শুধু নেতাকর্মীরা নয়, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশ কিংবা জনসভায় নিজেও ভোট চাচ্ছেন। সুধী সমাবেশ লাখ লাখ মানুষের জনসভায় রূপ নিচ্ছে।
সর্বশেষ ফরিদপুরের ভাঙ্গার ডা. কাজী ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভোট চান তিনি। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ায় স্বাধীনতা এসেছে। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। লুটেরা (বিএনপি) এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী। তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। ধ্বংসের হাত থেকে আপনাদের নৌকাই রক্ষা করবে। নৌকায় ভোট দিন।
আরও পড়ুন
এদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও নিজ নিজ এলাকায় সরকারের উন্নয়ন-চিত্র তুলে ধরছেন। দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলোর ছবি দিয়ে ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রতিনিয়ত সরকারের উন্নয়ন-চিত্র তুলে ধরছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, দেশের এত উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনবেন ভোটাররা। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে আওয়ামী লীগকে বিশেষ প্রয়োজন। অন্য কোনো দল আসলে বর্তমান যে প্রকল্পগুলো রয়েছে সেগুলো থমকে যাবে। অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। ভোটের আগে এসব প্রকল্প উদ্বোধন অবশ্যই আওয়ামী লীগের কৌশল। রাজনীতিতে কৌশল তো থাকবে। আমরা এত উন্নয়ন করেছি, সেগুলো উদ্বোধন করে মানুষের কাছে তো ভোট চাইব-ই, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। ভোটের টোপ বলেন আর ভোটের কৌশল বলেন, সব-ই তো রাজনীতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি সবসময় মানুষের কল্যাণের জন্য। প্রকল্পের উদ্বোধন ভোটের টোপ হিসেবে ধরে নিলেও এতে মানুষের উপকার হচ্ছে।
এমএসআই/