২০০ আসনে চূড়ান্ত সিগন্যাল যাবে অক্টোবরে
ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো তোড়জোড় না থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অক্টোবর মাসে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলটি— এমন ইঙ্গিত মিলেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায় থেকে। তারা বলছেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ১০০ আসন এবং শেষ সপ্তাহে আরও ১০০ আসনের প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তাদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এখনই লিখিত কোনো কাগজ পাবেন না প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ১০০ আসনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তাদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের (মনোনীত প্রার্থী) অফিসিয়াল চিঠি দেওয়া হবে না। তবে, নির্বাচনী মাঠে কাজ করার জন্য একটি সিগন্যাল দেওয়া হবে।’
আরও পড়ন : শরিকদের আসনে ‘চোখ’ তৃণমূল আ.লীগের
‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে একটি তলিকা দেব, আরেকটি দেব শেষের দিকে; তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে।’
এদিকে, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এখনও ভোটগ্রহণের কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। অনেকে নিজের প্রার্থিতা জানান দিয়ে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। আয়োজন করছেন নানা অনুষ্ঠান, অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মসজিদের খুতবায়ও বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার করছেন তারা।
আরও পড়ুন : তৃণমূলেও নির্বাচনী হাওয়া, দৃষ্টি ‘ঢাকা’
বিগত সময়ে বর্তমান সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও এখন নিজ এলাকায় বেশি বেশি অবস্থান করছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের সময় দিচ্ছেন। চালাচ্ছেন সাংগঠনিক তৎপরতা। জনসেবায় ব্যতিব্যস্ত তারা। তবে, নিজ দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠ ছাড়া করতে অনেক এমপি কলকাঠি নাড়ছেন বলে দলের হাই কমান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মসজিদের খুতবায়ও বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার করছেন তারা।
গত ৬ আগস্ট সারা দেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা এবং ১২ আগস্ট আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব সভায় বর্তমান এমপিদের বিভিন্ন কুকর্মের তথ্য তুলে ধরেন অনেকে। দলের হাই কমান্ড তৃণমূলের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও অভিমানের কথা শোনেন। সেই সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ব্যাপারে নেতাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।
আরও পড়ুন : মন্ত্রী-সচিবদের সাবেক পিএসদের কাঁধেই সংসদ নির্বাচন!
তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ্যে সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না, সারাদিন কাজ করি, সংগঠনেরও কাজ করি। কোথায়, কার কী অবস্থা, সেটি কিন্তু ছয় মাস পরপর জরিপ করি। আমাদের এমপিদের কী অবস্থা, অন্য জনপ্রতিনিধিদের কী অবস্থা, তার একটি হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া। এটি মাথায় রেখে আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যখন মনোনয়ন দেব, অবশ্যই আমাদের একটি হিসাব থাকবে যে কাকে দিলে আসনটি পাব।’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়ও দলের দুঃসময়ে যারা সামনে ছিলেন, যারা দুর্দিনের কর্মী, কমিটি করার সময় তাদের নাম সামনে রেখে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি।
আরও পড়ুন : গুজব নিয়ে আতঙ্কে বিএনপি
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি আগামী মাসের (অক্টোবর) প্রথম সপ্তাহে আসবেন। দেশে এলেই বেশ কয়েকজনকে মনোনয়নের ব্যাপারে সিগন্যাল দেবেন। কারণ, নির্বাচনের সময় খুব কম। সময় ঘনিয়ে এসেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি বিষয়ও আছে। আগেভাগে সিগন্যাল দিলে প্রার্থীরা ভালো করে মাঠ গোছাতে পারবেন।
প্রার্থীদের প্রস্তুত করতে নির্বাচনের আগে নতুন করে আওয়ামী লীগের কোনো শাখায় সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, যেসব স্থানে আগেই তারিখ চূড়ান্ত ছিল শুধুমাত্র সেসব শাখায় সম্মেলন হবে
তারা বলেন, বিগত সময়ে যে ফরম্যাটে মনোনয়ন দেওয়া হতো এবারও সেভাবে দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার পর আমরা দলীয় ফরম বিক্রি শুরু করব। সেই ফরমগুলো আমাদের হাতে আসার পর জরিপের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করব। তবে, জরিপের ভিত্তিতে সিগন্যালটা আমরা আগেই দিয়ে দেব। এখন অনেক আসনের জরিপ চলছে। প্রথমে যে আসনগুলোতে সিগন্যাল দেব সেগুলোর জরিপ কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়েছে।
দলীয় সূত্র মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি, প্রচার-প্রচারণাসহ যাবতীয় কাজ সাংগঠনিকভাবে করছে দলটি। এরই মধ্যে তৃণমূলের সব তথ্য ও দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট হাই কমান্ডকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, প্রার্থীদের প্রস্তুত করতে নির্বাচনের আগে নতুন করে আওয়ামী লীগের কোনো শাখায় সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, যেসব স্থানে আগেই তারিখ চূড়ান্ত ছিল শুধুমাত্র সেসব শাখায় সম্মেলন হবে। কেন্দ্রের নির্দেশনা ছাড়া জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে : নাছিম
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন সম্মেলন করে কমিটি দিতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ, প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশী চাইবেন তার লোক নেতৃত্বে আসুক। এখানে প্রভাব বিস্তারের একটা চাপ থাকবে। নির্বাচনের পর করলে কোনো চাপ আসবে না। দলকে নির্বাচনমুখী করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এমএসআই/এসএম