ভিসা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাবেন ‘দলীয় মনোনয়ন’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস। নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাজনৈতিক নেতারাও পড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি।
এদিকে, নির্বাচনের আগে ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভিসানীতির আওতায় পড়লে দলীয় মনোনয়ন পাবেন কি না, সেটি নিয়েও সংশয়ে তারা। তবে, ‘দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না’ বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য। তাদের ভাষ্য, ‘ভিসানীতির আওতায় পড়লেও দলীয় মনোনয়ন পাবেন যোগ্য প্রত্যাশীরা’।
আরও পড়ুন : ভিসা নীতির আওতায় পড়ছেন কারা স্পষ্ট করলেন পিটার হাস
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে কারা মনোনয়ন পাবেন সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভিসানীতি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমাদের একজন ত্যাগী কর্মীর বিরুদ্ধে আমেরিকা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা কি নাচব? ত্যাগী হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলেও তিনি মনোনয়ন পাবেন।’
নির্বাচনের আগে ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভিসানীতির আওতায় পড়লে দলীয় মনোনয়ন পাবেন কি না, সেটি নিয়েও সংশয়ে তারা। তবে, ‘দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না’ বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য
দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় বইছে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভিসানীতিকে পুঁজি করে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনরাও ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’ বলে বক্তব্য দিচ্ছেন। তারপরও দলের এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালীরা একটু হলেও চিন্তিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন কি না?
আরও পড়ুন : ‘উই আর ভেরি হ্যাপি’, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “ভিসা নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতি। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। তারা কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না— এটি তাদের বিষয়। আমাদের নির্বাচনে ‘তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন করবে না’— এটি সবসময় বলে আসছে। তাদের ভিসানীতি ‘নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্যও নয়’— এমনটি জানিয়েছে তারা।’’
সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কথা বলা যাবে না। আর মাত্র দুই মাস রয়েছে, অক্টোবর ও নভেম্বর। এ দুই মাসে অনেক তথ্য আদান-প্রদান হবে।’
আরও পড়ুন : ভিসা বিধিনিষেধ সুষ্ঠু নির্বাচনে কতটা সহায়ক হবে বা হবে না
‘দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিবেচ্য বিষয় হবে না। কার কী যোগ্যতা আছে, কী কাজ করেছেন এবং করছেন— এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাদের যোগ্যতা আছে এবং যারা জনগণের সেবক তারা মনোনয়ন পাবেন।’
আরও পড়ুন : ভিসা বিধিনিষেধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে
দলীয় সূত্র আরও জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভিড় করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও বাড়িয়েছেন তারা।
এদিকে, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই’ বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশ থেকে যদি কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।’
আরও পড়ুন : বাইরে থেকে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় জনগণ তাদের স্যাংশন দেবে
একই দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য হতে পারেন। ওই ব্যক্তিরা ছাড়াও ভবিষ্যতে যাদের বিরুদ্ধ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং এতে সহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া যাবে, তারাও এ নীতির আওতায় পড়বেন।’
এমএসআই/এসকেডি