নীরবে পকেট কাটছে কোক-পেপসি
দশ বছর ধরে নিয়মিত কোকাকোলা পান করছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান। যেকোনো আয়োজনে কোকাকোলা তার চা-ই চাই। সম্প্রতি এ কোমল পানীয় পান করা বন্ধ করেছেন তিনি। শুধু তিনি নন, কোকাকোলার ন্যায় পেপসিতে আকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাসনিম মনিও বর্জন করেছেন এ কোমল পানীয়।
দীর্ঘদিন কোকাকোলা বা পেপসি পান করলেও হঠাৎ কেন এগুলো বর্জন করছেন— জানতে চাইলে তারা জানান, বছর না ঘুরতেই এসব পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাদের মতো অনেকে এসব পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। দাম বাড়ার পেছনের কারণ হিসেবে তারা ‘নিয়ন্ত্রণহীন খোলাবাজার ব্যবস্থাপনা’-কে দায়ী করছেন। এতে একদিকে ভোক্তারা যেমন বিপাকে পড়ছেন, অপরদিকে নীরবে পকেট কেটে লাভের পাল্লা ভারী করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
যেভাবে ঘুরছে মূল্যবৃদ্ধির চক্র
কোমল পানীয়গুলোর বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে পেপসির সব পণ্যের দাম ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে, কোকাকোলার সব পণ্যের দাম প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
২০ টাকা মূল্যের ২৫০ মিলিলিটার কোকাকোলার বোতল গত বছরের (২০২২ সাল) অক্টোবরে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। চলতি বছরের (২০২৩ সাল) এপ্রিলে একই পণ্যের মূল্য আরেক দফা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। ৩৫ টাকা মূল্যের ৫০০ মিলিলিটারের কোক চলতি বছরের (২০২৩ সাল) জানুয়ারিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। জুনে আবারও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ টাকা। একই পণ্যের মূল্য আগস্টে তৃতীয় দফা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে
২০ টাকা মূল্যের ২৫০ মিলিলিটার কোকাকোলার বোতল গত বছরের (২০২২ সাল) অক্টোবরে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। চলতি বছরের (২০২৩ সাল) এপ্রিলে একই পণ্যের মূল্য আরেক দফা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। ৩৫ টাকা মূল্যের ৫০০ মিলিলিটারের কোক চলতি বছরের (২০২৩ সাল) জানুয়ারিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। জুনে আবারও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ টাকা। একই পণ্যের মূল্য আগস্টে তৃতীয় দফা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন >> বোতলজাত পানিও ছোঁয়া নিষেধ!
৬০ টাকা মূল্যের প্রতি লিটার কোকাকোলা প্রথমে ধাপে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ১১০ টাকার দুই লিটার কোকাকোলা এক লাফে বাড়িয়ে করা হয় ১৪০ টাকা। ৩০ টাকা মূল্যের ৪০০ মিলিলিটারের কোকাকোলা তিন ধাপে বাড়িয়ে এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬৫ টাকার সোয়া এক লিটারের বোতল তিন ধাপে বাড়িয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। একই গতিতে দাম বাড়তে থাকে সেভেন-আপ, স্প্রাইটেরও।
আরও পড়ুন>> ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা করছে পেপসিকো’
বসে নেই পেপসিও। বছর ঘুরতেই প্রতিষ্ঠানটির সব পানীয়ের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। ১৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ২৫০ মিলিলিটারের পেপসির দাম শত ভাগ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া ৫০০ মিলিলিটারের পেপসি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি লিটার ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পানীয়টি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অপরদিকে, ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া দুই লিটার পেপসির দাম ৬০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪০ টাকা।
দাম কেন বাড়ছে, যা বলছেন পরিবেশকরা
ডিলারশিপ বাতিল হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোকাকোলা ও পেপসির এক পরিবেশক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোকাকোলার ২৫০ মিলিলিটারের কেস (২৪ পিস) আগে পাওয়া যেত ৪০৮ টাকায়। এখন কেসপ্রতি ২৪০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪৮ টাকা। ৫০০ মিলিলিটারের কেস আগে ৭৪৪ টাকায় কিনলেও ৫৫২ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১২৯৬ টাকায়। এক লিটারের ১২ পিসের কেস ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০০ টাকা। দুই লিটারের ছয় পিসের কেস আগে ৬৫০ টাকায় কিনলেও বর্তমানে তা ৮১০ টাকায় নিতে হচ্ছে। অর্থাৎ দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬০ টাকা।
আরও পড়ুন >> কৃত্রিম মিষ্টি ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ, ঘোষণা দেবে ডব্লিউএইচও
‘বাজারে কোকাকোলা ও পেপসির প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এ কারণে তারা ইচ্ছা মতো দাম বাড়াচ্ছে। দাম যতই বাড়ুক মানুষকে তো কিনে খেতে হচ্ছে। তারা (কোক-পেপসি) বিভিন্ন কৌশলে পণ্য বিক্রি করে। গ্রাম ও শহর ভেদে পণ্যের আকার ও দামে ভিন্ন ভিন্ন পলিসি আছে তাদের। হুট করে দাম বাড়ানোয় গ্রামে এসব পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমেছে। গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ কোকাকোলা থেকে মুখ ফিরিয়ে মোজো, কালারস, আরসি কিংবা ফ্রেশের কোমল পানীয়ের দিকে ঝুঁকছেন।’
‘কোকাকোলা ও পেপসি আসলে মানুষের গলা কেটে দাম নিচ্ছে। তাদের দুই লিটারের পানীয় ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজারে ৭০ টাকায় দুই লিটার মোজো পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু পেপসি ও কোকাকোলা একটি বড় বাজার দখল করে নিয়েছে, সেহেতু মানুষও এখন জিম্মি। বাধ্য হয়েই তাদের এগুলো কিনে খেতে হচ্ছে। কোকাকোলা এক পয়সা বাকিতে পণ্য বিক্রি করে না। তাদের ভাব এমন যে, কিনলে কিনবেন, না কিনলে নাই। ফলে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে তারা পকেট ভারী করছে।’
শর্তের গ্যাঁড়াকলে খুচরা বিক্রেতা
ভোক্তাপর্যায়ে কোমল পানীয়ের দাম বাড়ানোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা— উল্লেখ করে রাজধানী বাসাবোর মুদি-দোকানদার আব্দুল হাই ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। দফায় দফায় তারা দাম বাড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের এগুলো কিনে পান করার মতো সক্ষমতা আছে কি না, সেটি তারা দেখছে না। আমরা অনেকেই শর্তসাপেক্ষে পেপসি কিংবা কোকাকোলার ফ্রিজ ব্যবহার করি। এসব ফ্রিজ ব্যবহারের অন্যতম শর্ত হলো- অন্য কোম্পানির পানীয় সংরক্ষণ করা যাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের পণ্য রাখি।
‘দাম বাড়ানোর ফলে ক্রেতা কমছে। আমাদের মুনাফা কিংবা আয়ও কমছে। দাম বাড়লেও আমরা কিন্তু লাভবান হচ্ছি না। ২৫০ মিলির বোতল ২৫ টাকায় বিক্রি করে যেমন তিন টাকা লাভ করতাম, এখনও ৩০ টাকা বিক্রি করে তিন টাকাই লাভ করি। আমাদের ২৭ টাকা দিয়েই বোতল কিনতে হয়। তাহলে দাম বাড়িয়ে আমাদের লাভ কি? শুধু বিক্রিই কমছে।’
আরও পড়ুন >> রোনালদোর এক ‘না’ তে কোকাকোলার ক্ষতি ৩৪ হাজার কোটি টাকা!
কোক-পেপসি থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন ভোক্তারা
কোক, পেপসি, স্প্রাইট ও সেভেন-আপসহ বাজারে যেসব কোমল পানীয়ের দাম হুট করে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে সেসব পণ্য থেকে ভোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার এসব পণ্যের বিকল্প খুঁজছেন। ইমরান কবির নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিয়মিত কোক পান করি। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে এখন এ পণ্য বয়কট করা ছাড়া উপায় নেই। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কোক পান করছি, সেহেতু হুট করেই অন্য পণ্য গ্রহণ করতে পারছি না। তবে, এমন লাগামহীন দাম বাড়তে থাকলে এ পানীয় আর পান করা হবে না।
শিমুল কবির নামের আরেক ভোক্তা বলেন, প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। চাল, ডাল, কিংবা পেঁয়াজের মতো কোকের ঝাঁজও বাড়ছে। এভাবে চলতে পারে না। তারা ইচ্ছা মতো একটা দাম বোতলে লেপ্টে দেয়, আমাদের সেই দামে খেতে হয়। এখানে দেখভালের কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। আমি এখন কোক-পেপসি বাদ দিয়ে নিয়মিত মোজো-আরসির গ্রাহক হব।
ফেসবুকে বয়কটের হুঁশিয়ারি
দফায় দফায় কোকের দাম বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও পণ্যটি বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। হঠাৎ করে খোলা বাজারে পণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না তারা। ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে আলী আহাদ নামের এক ভোক্তা বলেন, ‘৪০০ মিলি (মিলিলিটার) কোকের দাম প্রথমে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, এরপর ৪০ টাকা হয়ে এক লাফে ৫০ টাকায় দাঁড়ায়। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। যদিও কোক আমার পছন্দের তালিকায় ছিল, তারপরও এটি আজ থেকে বয়কট করলাম।’
ফারহাদ আলম নামের আরেক ভোক্তা লেখেন, ‘নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোকাকোলা, আজ থেকে বয়কট করলাম! তার থেকে দেশীয় প্রোডাক্ট মোজো, ক্লেমন খাব! দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এ দেশের মাফিয়া ব্যবসায়ীদের কোনো নীতিমালা নেই, নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। যার যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, জনগণের পকেট লুটবে!’
আরও পড়ুন >> কৃত্রিম মিষ্টিকে ক্যান্সারজনক ঘোষণা করলেও সমস্যা হবে না কোকাকোলার
কেন বাড়ছে দাম
খাত-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোমল পানীয় বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর টার্নওভার ট্যাক্স ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত এ টার্নওভার ট্যাক্স, চিনি আমদানির উচ্চ মূল্য, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং এলসি খুলতে জটিলতায় দাম বাড়ছে।
উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজার বাংলাদেশ, বেড়েছে বিনিয়োগও
বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে কোকাকোলা বিক্রি হলেও বাংলাদেশে পণ্যটির উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজার। ফলে বাণিজ্যিক স্বার্থে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালে বাংলাদেশে কোকাকোলার ব্যবসা বাড়াতে পাঁচ বছর মেয়াদে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) জেমস কোয়েনসি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
চিঠি দিয়ে দায় এড়াচ্ছে প্রতিযোগিতা কমিশন
খোলা বাজারে কোমল পানীয়ের দাম দিনদিন অস্থিতিশীল হলেও ভোক্তা অধিদপ্তরকে কেবল চিঠি দিয়ে দায় এড়াচ্ছে প্রতিযোগিতা কমিশন। দাম নিয়ে তাদের পদক্ষেপ কী— জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘কোমল পানীয় ও মিনারেল ওয়াটারের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পানীয় জলের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কয়েকটি মার্কেট যাচাই করেছি। তারা কত দাম নেয়, কারা কমিশন নেয়, কমিশনের বাড়তি টাকা কারা নেয়, কমিশনের অতিরিক্ত টাকা কি উৎপাদক পর্যায়ে যায়, নাকি দোকানিরা পায়— বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। এগুলো উল্লেখ করে আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছি। তারা তাদের আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন >> কৃত্রিম মিষ্টি ক্যান্সারের ‘সম্ভাব্য কারণ’, সীমিত খেলে সমস্যা নেই
‘কোমল পানীয়ের ক্ষেত্রেও যেহেতু বাজারে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ রয়েছে, সেহেতু আমরা পূর্বের ন্যায় ব্যবস্থা নেব।’
দায় প্রতিযোগিতা কমিশনের : ভোক্তা অধিদপ্তর
কোকাকোলা কিংবা পেপসির মতো কোমল পানীয়ের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা কোথায়— এমন প্রশ্নের উত্তরে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হলেও সব দায়িত্ব নিতে পারব না। মোড়কজাত পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় যারা, তারাই পণ্যের উৎপাদক। পণ্যের মোড়কে মুদ্রিত দাম অপেক্ষা বেশি যদি কেউ নেয় তাহলে ভোক্তা অধিকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তবে, দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরাসরি কাজ করে প্রতিযোগিতা কমিশন। এ বিষয়ে তারা একটি চিঠি দিয়েই দায় শেষ করেছে!’
আরও পড়ুন >> কোকা-কোলা, ফান্টা ও স্প্রাইটের বিকল্প পানীয় আনল রাশিয়া
‘ডিমের বিষয়ে আমি এক বছর আগে রিপোর্ট দিয়েছি। তারা মামলা করেছে, দেখছে। ডিমের উৎপাদন খরচ কত হবে, সেটি কিন্তু আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারি না। আমার কাজ হচ্ছে বাজারে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত নিলে ব্যবস্থা নেওয়া। তারা (প্রতিযোগিতা কমিশন) একটি চিঠি দিলেই কি আমি সবকিছু ঠিক করে ফেলতে পারব? একজন অতিরিক্ত সচিব হিসেবে আমার পক্ষে যতটুকু করার, করছি। আমার ক্ষমতার বিষয়টি আপনারা জানেন। সবকিছু তো আমি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারি না। মূল্য যদি পাঁচ টাকা বাড়ানো হয় সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ট্যারিফ কমিশনেরও একটি বিষয় আছে। উৎপাদন বা কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বাড়ল কি না, সেটিও বিশ্লেষণ করে দেখার দরকার আছে।’
বাজারদর দেখা প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙুল ক্যাবের
কোকাকোলা কিংবা পেপসির দাম নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তাপর্যায়ে অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘কোনো জায়গা থেকে কোনো প্রতিকার আসে না। ব্যবসায়ীদের স্বার্থই চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত হয়। ফলে যে পণ্যের দাম বেশি হবে সেই পণ্য বর্জন করবেন ভোক্তারা। শুধু কোকাকোলা নয়, এমন সব পণ্যের ক্ষেত্রেই হবে। শুধু জীবনরক্ষাকরী পণ্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে কার্যকর নয়। ব্যবসা তো রাজনীতিবিদদের হাতে। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এখানে জনগণের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে না।’
দাম বৃদ্ধি : কীভাবে দেখছেন বিপণন বিশেষজ্ঞরা
বিপণন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কোকাকোলা কোম্পানির পণ্য উৎপাদনে গ্যাসের প্রয়োজন হয়। এটি উৎপাদনের বেশির ভাগ উপকরণ হলো- পানি, চিনি ও রং। যে চিনি ৭০ টাকা দরে তারা কিনত, সেটি এখন ১৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। উপকরণগুলোর দাম কতটুকু বেড়েছে সেটি দেখা দরকার। বাজারে যখন খোলা প্রতিযোগিতা হবে তখনই আসল চিত্র দেখা যাবে।’
‘ইউনিলিভার যখন সাবান, শ্যাম্পুর দাম বাড়াল তখন সবাই একযোগে দাম বাড়াল। তারা দাম কমাল, বাকিরাও সে পথে হাঁটল। কোক তৈরির পুরো বিষয়টির মধ্যে চিনির আমদানিটা গুরুত্বপূর্ণ। উপকরণগুলোর দাম বাড়ানোর কারণেই কোকের দাম বাড়ছে। তবে, মাত্রাতিরিক্ত দাম নিলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাজারে আরও প্রতিষ্ঠান আছে। তারাও সুযোগ বুঝে প্রতিযোগিতায় টিকতে কিছুটা কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোকাকোলা কিংবা পেপসির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তারা কাদের সঙ্গে আলোচনা করে দাম বাড়াল, সেটি আমরা জানলাম না। দেশে কোমল পানীয়ের বিশাল বাজার। আমরা মনে করি, এখানে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের খেলা চলছে।
‘এসব পানীয়ের উপাদানের মূল্য কারা নির্ধারণ করে, আমরা জানতে চাই। কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে, কোনো জবাবদিহিতা না রেখে ইচ্ছা মতো কোম্পানিগুলো দাম বাড়াচ্ছে। আমরা এ মূল্য যৌক্তিকপর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।’
এমএম/এমএআর