রানার গ্রুপ : কোম্পানি সেক্রেটারি মিজানুরের সম্পদ কত?
রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড কোম্পানির সেক্রেটারি ও রানার মোটরস লিমিটেড ওয়ার্কার্স প্রফিট স্যাটিসফ্যাকশন ফান্ডের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। দেশের বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার- ২০২০’ পাওয়া রানার গ্রুপের শীর্ষপদে আসীন এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারপরও বহাল তবিয়তে তিনি!
শুধু মিজানুর রহমান নন, একই প্রতিষ্ঠানের হেড অব সেলস মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধেও অনৈতিক উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার তথ্য এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে।
মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দেশীয় ব্র্যান্ড রানার মোটরস লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন নানা কৌশলে। নিজ মালিকানায় নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেট, ইশরা প্রোপার্টিজ লি. ও তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
মিজানুর রহমান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজ নামে ও নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে অজ্ঞাত ও অবৈধ উৎস হতে অর্থ জমা করেছেন। জমা করা অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নামে বিভিন্ন সম্পদে রূপান্তরের বিষয়টি দুর্নীতির শামিল। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(শ) (১) ধারা মোতাবেক সম্পৃক্ত অপরাধ
তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- দুই নাবালক পুত্রের নামে পরিচালিত ২৪টি স্থায়ী আমানতের আড়াই কোটি টাকা, যা ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কোটি টাকা মূল্যের জমি, মিরপুরের টোলারবাগে ৯০০ থেকে ১৬০০ বর্গফুটের চারটি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি, সহকর্মী রেজাউল করিমের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় ঢাকা ও গাজীপুরে ৯.৪৮ কোটি টাকার জমি, তিনটি সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানে ৩.২৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং নিজ শহর পাবনায় কোটি টাকা মূল্যের ২১ কাঠা জমির ওপর এলপিজি ফিলিং স্টেশন। তার দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম অংশীদার রেজাউল করিমেরও অঢেল সম্পদের পাশাপাশি সন্দেহভাজন লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
আরও পড়ুন >> দুর্নীতির ৯৮ মামলায় আসামি ১১১ সরকারি ব্যক্তি
শুধু অভিযোগ নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ, সন্দেহভাজন লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। একই সঙ্গে দুদকের উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নথিপত্র তলব করে রানার গ্রুপ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- দুই নাবালক পুত্রের নামে পরিচালিত ২৪টি স্থায়ী আমানতের আড়াই কোটি টাকা, যা ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কোটি টাকা মূল্যের জমি, মিরপুরের টোলারবাগে ৯০০ থেকে ১৬০০ বর্গফুটের চারটি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি, সহকর্মী রেজাউল করিমের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় ঢাকা ও গাজীপুরে ৯.৪৮ কোটি টাকার জমি, তিনটি সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানে ৩.২৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং নিজ শহর পাবনায় কোটি টাকা মূল্যের ২১ কাঠা জমির ওপর এলপিজি ফিলিং স্টেশন
অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত দুদকের জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। অন্যদিকে, জনসংযোগ দপ্তর এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন >> বছরে ২ লাখ টাকার পত্রিকা, ওভারটাইমের নামে ১৬২ কোটি টাকা নয়ছয়!
যদিও দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে দায়িত্ব পালন করে তারা (মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিম) দিনের পর দিন দুর্নীতি ও অনিয়মের খেলা চালিয়েছেন। যার অধিকাংশই মানি লন্ডারিং আইনে গুরুতর অপরাধ। এগুলো কীভাবে সম্ভব? এত অনিয়মের পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ! বিষয়টি আরও সন্দেহজনক। মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পেছনের অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা থাকবে।
এদিকে, দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি অবগত হলেও রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড কোম্পানির সেক্রেটারি মিজানুর রহমান কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘রানার গ্রুপের জনসংযোগ দপ্তর থেকে আমার পক্ষে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। জনসংযোগ দপ্তর আপনাকে বক্তব্য দেবে।’ যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রানার গ্রুপের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এ বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বিএফআইইউ’র গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে যা মিলেছে
গত পাঁচ বছরে মো. মিজানুর রহমানের নিজ নামে ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে সন্দেহজনক, অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর আওতায় অধিকতর তদন্তের আবশ্যকতা রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন >> সার্ভেয়ারের চাকরি নাকি সম্পদ গড়ার পরশ পাথর!
বিএফআইইউ’র গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, তিনি রানার গ্রুপে কাজ করার সুবাদে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিজানুর রহমান পাবনা শহরে ২১ কাঠা জমি এক কোটি টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপন করেছেন। স্ত্রী ও নিজ মালিকানায় ঢাকার মিরপুর- ১ এর ১/৯/৩-এ, টোলারবাগে একটি এবং ১৪/১, টোলারবাগ অভিজাত ভবনের দ্বিতীয় ও পঞ্চম তলায় সাড়ে ৯০০ থেকে ১৬০০ বর্গফুট আয়তনের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। SUV RAV4, Premio Sedan Car ও LX Corolla মডেলের তিন গাড়ি রয়েছে।
অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কর্মকর্তা ইয়াছির আরাফাত দুদকের জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। অন্যদিকে, জনসংযোগ দপ্তর এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে
দুই নাবালক পুত্র এহসান উল্লাহ ও নাজমুস সাদাতের নামে ২.৩৪ কোটি টাকার এফডিআর, মিজানুর রহমানের মালিকানায় নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেট, ইশরা প্রোপার্টিজ লি. ও তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন। তিনি রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের হেড অব সেলস মো. রেজাউল করিমের সহযোগিতায় ৯.৪৮ কোটি টাকায় ঢাকা ও গাজীপুরে জমি ক্রয় করেছেন।
মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেট, ইশরা প্রোপার্টিজ লি. ও তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের ব্যাংক হিসাবসমূহ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরজেএসসি’র নিবন্ধিত ইশরা প্রোপার্টিজের নামে ই-টিন সার্টিফিকেট থাকলেও বাকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনোটির বিপরীতে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করা হয়নি, যা কর ফাঁকির শামিল।
আরও পড়ুন >> নিটল মটরসের ৩৬৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি
এছাড়া বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও সিএমএসএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ৩.২৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে।
অন্যদিকে, মো. মিজানুর রহমান ২০২১-২২ কর অর্থবছরে আয়কর বিবরণীতে বেতন ক্যাটাগরিতে মোট আয় ২০ লাখ ৬৫ হাজার ৬০৭ টাকা, মোট সম্পদ দুই কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং নিট সম্পদ দুই কোটি ৬৫ লাখ টাকা প্রদর্শন করেছেন। আয়কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে তিনি সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক হতে এক কোটি ৪০ লাখ টাকার গৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণ করলেও ওই ঋণের অর্থ দিয়ে তিনি অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি ক্রয় না করে অন্যত্র ব্যবহার করেছেন। আয়কর ফাঁকি দিয়ে তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ কালো টাকা ও সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মো. মিজানুর রহমানের সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে আরও রয়েছে- রেজিয়া মোটরসের ব্যাংক হিসাবে ১৮.৪০ লাখ টাকা, সিএমএসএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টরস অ্যাকাউন্টে ৩১ লাখ টাকা, মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেটের হিসাবে ৪২.১৫ লাখ টাকা, এফডিআর ক্রয়ের জন্য হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের হিসাবে ৬৮ লাখ টাকা, তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের হিসাবে ৬০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব থেকে ১.১৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হলেও সম্পত্তি হস্তান্তরের বায়না দলিল অনুযায়ী মো. মিজানুর রহমান ১.৯০ কোটি টাকায় ঢাকার খিলগাঁও অঞ্চলের নন্দিপাড়া মৌজায় জমি ক্রয় করেন। বায়না দলিলে সাক্ষী হিসেবে মো. রেজাউল করিমের নাম উল্লেখ রয়েছে। বায়না করা জমিটি পরবর্তীতে মো. মিজানুর রহমানের নামে রেজিস্ট্রি না করে পাবনার স্থায়ী বাসিন্দা মোছা. সানজিদা জাহান ববির নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি অবগত হলেও মিজানুর রহমান কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘রানার গ্রুপের জনসংযোগ দপ্তর থেকে আমার পক্ষে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। জনসংযোগ দপ্তর আপনাকে বক্তব্য দেবে।’ যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রানার গ্রুপের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি
অন্যদিকে, রাজধানীর খিলগাঁও অঞ্চলের আমুলিয়া মৌজায় এক কোটি টাকায় জমি ক্রয়ের জন্য সৈয়দা সেলিনা মাহমুদ ও রুমানা আহমেদ নামের দুজনের হিসাবে অর্থ পরিশোধ করা হয়, যদিও বায়নানামা দলিলটি মো. রেজাউল করিমের নামে সম্পন্ন হয়।
আরও পড়ুন >> জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে গুনতে হবে দ্বিগুণ কর, সর্বোচ্চ ২০ লাখ
অভিযোগ রয়েছে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের হেড অব সেলস ও চিফ বিজনেস অফিসার মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধেও। যিনি মোটমোসন বিডি, রেজিয়া মোটরস, অলওয়েলস মার্কেটিং লিমিটেডের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন। রেজিয়া মোটরসের (রানার মোটরসাইকেলের ডিস্ট্রিবিউটর, পাবনা আউটলেট) মালিকানায় মো. রেজাউল করিমের স্ত্রী সালমা করিমের নাম ব্যবহার করা হলেও প্রকৃত সুবিধাভোগী রেজাউল করিম। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব খোলার ফরমে সালমা করিমকে একজন গৃহিণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে মো. মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ ও মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেটের ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিজানুর রহমান পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজ নামে ও নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে অজ্ঞাত ও অবৈধ উৎস হতে অর্থ জমা করেছেন। জমা করা অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নামে বিভিন্ন সম্পদে রূপান্তরের বিষয়টি দুর্নীতির শামিল। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২(শ) (১) ধারা মোতাবেক সম্পৃক্ত অপরাধ। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে। যে কারণে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধান পর্যায়ে দুদক যেসব নথিপত্র তলব করেছে
রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের সেক্রেটারি মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত প্রোফাইল, রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের চাকরিবিধি ও নিয়মনীতি, কোম্পানি সেক্রেটারি ও রানার মোটরস লিমিটেড ওয়ার্কার্স প্রোফিট স্যাটিসফ্যাকশন ফান্ডে নিয়োগের পর থেকে হালনাগাদ বেতন বিবরণী এবং গ্রুপের চিফ সেলস অফিসার রেজাউল করিমের ব্যক্তিগত প্রোফাইল, যা রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের এমডি ও সিইও বরাবর দেওয়া তলবি চিঠিতে চাওয়া হয়েছে।
মিজানুর রহমানের দুই ছেলে নাজমুস সাদাত ও এহসান উল্লাহর নামে হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডে ২৪টি স্থায়ী আমানতের বিস্তারিত বিবরণী চাওয়া হয়েছে পৃথক এক চিঠিতে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত বিবরণ, ব্যাংক এশিয়ার হলি ফ্যামিলি শাখা ও ধানমন্ডি শাখায় মিজানুর রহমান, মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেট, ইশরা প্রোপার্টিজ লি. ও তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের নামে ব্যাংক হিসাব-সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত বিবরণ এবং মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেটের নামে অগ্রণী ব্যাংকের পাবনা শাখার ব্যাংক হিসাবসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র।
এছাড়া ইশরা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস বরাবর, মমতা ফিশারিজ অ্যান্ড এস্টেট ও রেজিয়া মোটরস লিমিটেডের ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে পাবনা পৌরসভা, পাবনায় অবস্থিত তাজ পোলট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে পাবনার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ এবং মোটোমোশন বিডি ও অল-অয়েলস মার্কেটিং নামের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বরাবর চিঠি দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
দুদকে পাঠানো বিএফআইইউ’র চিঠি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে দুদকে পাঠানো চিঠি সূত্রে জানা যায়, রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি ও রানার মোটরস লিমিটেড ওয়ার্কার্স প্রফিট স্যাটিসফ্যাকশন ফান্ডের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান এবং একই প্রতিষ্ঠানের হেড অব সেলস রেজাউল করিম কোম্পানির নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তারা বিধিবহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মোটরযান ব্যবসার অর্থ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নানা ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদে রূপান্তর করেছেন। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২ (শ) ধারা অনুসারে অপরাধ।
অন্যদিকে, মিজানুর রহমানের দুই নাবালক পুত্রের নামে পরিচালিত ২৪টি স্থায়ী আমানত হিসাবের লেনদেন, যার পরিমাণ দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা (বর্তমানে যা ফ্রিজ অবস্থায় আছে), যা আদালতের মাধ্যমে অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোক করতে দুদককে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর আওতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরএম/এমএআর