ডাকলেও আসেন না চিকিৎসক, খারাপ ব্যবহার নার্সদের!
• চাহিদার তুলনায় নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক
• সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে নার্সদের দুর্ব্যবহার
• খালি মেঝেতে অবস্থান, নেই ফ্যান
• চাহিদা থাকলেও জনবল দেন না ডিজি
রাজধানীর মাদারটেক থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সুমি খানম। প্রথমদিকে প্ল্যাটিলেট বেশি নিয়ে হাসপাতালে আসলেও তিন/চার দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর প্ল্যাটিলেট এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে সুমিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
হাসপাতালটিতে সুমির চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট নন মা রুমি খানম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার মেয়ের অবস্থা ভালো না। নিশ্বাস নিতে পারছিল না। প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পাশাপাশি প্রেশার খুব কম ছিল আগে থেকে। আমি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে গেলাম মেয়ের অবস্থা জানাতে। চিকিৎসক বললেন, নার্সদের কাছে যান। নার্স বললেন, চিকিৎসকের কাছে যান। তারা একজন আরেকজনের নিকট পাঠাচ্ছেন। এদিকে মেয়ের অনেক জ্বর, খিঁচুনি শুরু হয়েছে। আমি একা, কী করব বলেন?
‘রোগী বিছানা থেকে উঠতে পারছে না, এটা বলার পরও তার বিছানার কাছে চিকিৎসক কিংবা নার্স কেউ আসেননি। তাদের ডাকলেই বলেন, এখান থেকে যান; এখন আসব, তখন আসব। আরও রোগী হলে যাব। হাসপাতালটা মনে হয় তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি! এখানে ১০ বার বললে চিকিৎসকের একবার সাড়া মেলে। নার্সদের ব্যবহার খুবই খারাপ। এরপর বহু কষ্টে চিকিৎসকের কাছ থেকে একটা প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করি। বাইরে থেকে ওষুধ এনে মেয়েকে খাওয়াই। সে এখন আইসিইউতে।’
আরও পড়ুন >> ঢামেকে চালু হয়নি ডেঙ্গু কর্নার, ভোগান্তিতে রোগীরা
রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়া থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আসমা বেগম। সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেও মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ মেলেনি কোনো চিকিৎসকের দেখা। রাতে ভর্তির সময় শুধু একটি ইনজেকশন ও স্যালাইন লাগানো হয়। এরপর কোনো নার্সই খোঁজ নেননি।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পেট ফুলে যাচ্ছে। গত ছয়/সাতদিন ধরে ডেঙ্গুতে ভুগছি। এখানকার চিকিৎসা ভালো লাগছে না। বিকাল পর্যন্ত দেখব, না হলে বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাব।’
কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে এমন অভিযোগ শুধু সুমির মা কিংবা আসমা বেগমের নয়। হাসপাতালে সেবাপ্রত্যাশী প্রায় সব রোগী এবং তাদের স্বজনদের অভিযোগ একই। আরও আছে অভিযোগ। রক্ত পরীক্ষা করাতে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা। তাদের দাবি, চিকিৎসক ও নার্সরা একটু সহনশীল হলে শত কষ্ট তারা মেনে নিতে পারতেন।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিন মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অবস্থান করে রোগী এবং তাদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বর, বমি, শরীরে ব্যথা ও পাতলা পায়খানা নিয়ে সোমবার রাতে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সিনথিয়া ইসলাম। তীব্র জ্বরে কাতর সিনথিয়া ইসলাম কথা বলতে না পারলেও তার আত্মীয় মো. মামুন মিয়া বলেন, আমরা রাত থেকেই অপেক্ষায় আছি চিকিৎসকের। কিন্তু তিনি আসছেন না। রাতে একটা স্যালাইন দিয়েছে, এরপর আর খোঁজ নেয়নি। মাথার ওপর ফ্যানও নাই। গরমে বাচ্চাটার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অনুরোধ থাকবে দ্রুত কয়েকটি ফ্যানের ব্যবস্থা করার।
আরও পড়ুন >> অস্বাভাবিক অনুভব করলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করুন
শ্যামপুরের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন নূরে ইয়াসমিন। ডেঙ্গু নিয়ে তিনিও সোমবার রাতে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ভর্তি হতে হয় যুদ্ধ করে। গুরুতর রোগীকে ভর্তি না করিয়ে আগে টিকিট কাটানো হচ্ছে। এদিক-সেদিক পাঠানো হচ্ছে। কোভিড টেস্ট করানো হচ্ছে। ফলে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ভর্তির পরও ঝামেলা কম নয়। রাতে ভর্তি হয়েছি। সকাল গড়িয়ে দুপুর এসে গেল কিন্তু এখনও চিকিৎসকের দেখা পেলাম না। খুব আশায় আছি কখন তাদের দেখা পাব। তাদের সেবায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আর সিস্টারদের কথা তো বাদই দিলাম। তাদের আচরণ খুবই ভয়ানক, ডাকতে ভয় লাগে।
খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া থেকে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আছিয়া বেগম। ‘হাসপাতালের নার্সদের আচরণ খুবই খারাপ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্যালাইন শেষ হয়ে গেলে আমি নার্সদের কাছে গেলাম। কিন্তু তারা ক্যানোলা খুলে দিল না৷ বলল, বেডে গিয়ে বসেন। এক ঘণ্টা পর আবার গেলাম, তখনও খুলল না। এদিকে, ওয়াশ রুমে যাব। সারারাত প্রস্রাব করতে পারিনি। আমার পাশেই আরেক রোগীর স্যালাইনে রক্ত উঠে গেল। তারা এসে তার ক্যানোলা খুলে দিল। আমি আবারও অনুরোধ করলাম। তিনি বলেন, আপনারা শুধু ভেজাল করেন। তার আচরণে খুবই আহত হই। পরে ক্যানোলা খুলতে গিয়ে অনেক রক্ত ঝরায়। তাকে বলেছি, আপনার নিকট এমন ব্যবহার আশা করিনি। গতরাতে ভর্তি হলেও এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের দেখা পাইনি।’
মাদারটেক থেকে এসেছেন আঁখি ইসলাম। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে নার্স নেই বললেই চলে। আমরা রোগী। আমাদেরই উঠে নার্সের কাছে যেতে হয়। জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারি না। তবুও যেকোনো প্রয়োজনে নার্সদের কাছে লাইন দিতে হচ্ছে। এখানে চারজন সিস্টার। তাদের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। পাঁচ-ছয়দিন এখানে আছি। এখন আমার অবস্থা অনেক খারাপ। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেবার কথা থাকলেও তারা আমাকে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলে। এখানে ভোগান্তির শেষ নেই। কয়টা আর বলব? কিছু করাতে গেলে এরা টাকা চায়। ৫০/১০০ করে দিতে হয়। আর আচরণ, না বললেই নয়!
ফিরোজা বেগম নামের আরেক রোগী বলেন, গরীব দেখে এখানে এসেছি। টাকা থাকলে তো বেসরকারি হাসপাতালে যেতাম। এখানে নার্সদের ব্যবহার খারাপ। তাদের পাওয়াই যায় না। ওয়াশ রুম নোংরা। এদিকে কারও খেয়াল নাই।
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গু পরীক্ষার সরকারি-বেসরকারি ফি কত?
ফয়েজ আহমেদ নামের এক রোগীর স্বজন জানান, সরকারি হাসপাতাল বলে তাদের যেমন মন চায় তেমন সেবা দেয়। জনবল সংকট তো রয়েছে। খুব অসুস্থ রোগীকেও লাইনে দাঁড়িয়ে রক্ত দিতে হয়। চিকিৎসক আসেন না, রোগীকে যেতে হয় তাদের কাছে। সমস্যা হলে রোগীকেই স্যালাইনসহ যেতে হয়৷ হাজারবার ডাকলেও নার্সরা রোগীর কাছে যান না।
কী বলছেন চিকিৎসকরা
প্রচণ্ড অসুস্থ রোগীরাও আপনাদের কাছে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন— রোগীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. আতিক বলেন, আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। নিয়ম অনুযায়ী সব চিকিৎসক আসছেন, সেবা দিচ্ছেন। সকাল থেকেই রাউন্ড চলছে। রোগীদের এমন অভিযোগ করার কথা নয়। কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগ করেন তবে বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
বাইরের যে সব রোগী বেড পাননি তাদের কাছে যেতে একটু দেরি হচ্ছে। ভেতরের রাউন্ড শেষ না হলে তো বাইরে যেতে পারি না। সবাইকে একই সময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে, আমাদের চিকিৎসক সংকট নেই— বলেন তিনি।
ব্যবহার খারাপ, কী বলছেন নার্সরা
সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সিনিয়র স্টাফ নার্স শারমিন আক্তার বলেন, যেসব রোগী বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে পারতেন তারাও হাসপাতালে আসছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে ধারণক্ষমতার তুলনায় এখানে রোগীর সংখ্যা অনেক। চাইলেও আমরা সব রোগীর কাছে যেতে পারি না। দিনভর সেবা দিতে দিতে অনেক সময় সামান্য ত্রুটি হতেই পারে। এত রোগীর চাপে আমরাও বিষণ্ন হয়ে পড়ি। এছাড়া প্রতিনিয়ত রাতের শিফটে ডিউটি করতে হচ্ছে। প্রাপ্ত ছুটি পাচ্ছি না। মাত্র চারজন নার্স দিয়ে একটা ফ্লোর কীভাবে সামলানো সম্ভব?
‘রোগীরাও আমাদের বুঝতে চান না। আমরা নার্স। আমরাও তো মানুষ। দুঃখ-কষ্ট বা অনুভূতি আমাদেরও আছে। আমাদের কথা কেউ শোনে না। আমাদেরও বাচ্চা আছে, পরিবার আছে। নিজেদের নিরাপত্তার বিষয় আছে। এত চাপে এক গ্লাস পানি যে খাব সে সময়টাও পাই না। এরপরও আমরা সবসময় চেষ্টা করছি রোগীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার।’
এ বিষয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিমেল রোজারিও ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিয়মমাফিক সকাল ও রাতে সবাইকে ওষুধ দিয়ে আসি৷ দুপুরে কিছু রোগীকে ওষুধ দিতে হয়। এ সময় সব রোগীর ওষুধ প্রয়োজন হয় না৷ এখানে এত রোগী যে বেডে বেডে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব। যেসব রোগী একদম আমাদের কাছে আসতে পারছেন না, আমরা তাদের কাছে গিয়ে সেবা দিচ্ছি। তবে, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সবার মানসিকতা এক নয়। কেউ কেউ একটু খারাপ আচরণ করতেও পারেন। একজন রোগীকে একবার বোঝানোর পর তিনি তার স্বজনদের আবার নিয়ে আসেন। আমরা পরামর্শ দিই যে একজন শিক্ষিত মানুষ পাশে রাখার। তাকে একবার বুঝালে হয়ে যায়, সময়ও সাশ্রয় হয়।
আরও পড়ুন >> মুগদা মেডিকেলে নিত্যদিনের ‘যুদ্ধ’ লিফটে ওঠা
‘অনেক সময় এমন হয় যে হাতের কাজ করছি৷ ওই মুহূর্তে অনেকে রোগী ফাইল নিয়ে আসেন। বারবার সেটা দেখতে বলেন। একটা কাজ শেষ না করে আরেকটি কাজ করা তো মুশকিল। এছাড়া রোগীদের অনেকেই সিরিয়াল মেইনটেইন করেন না। এত রোগীকে সেবা দিতে দিতে আমরাও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছি।’
‘গত কয়েকদিন তিনজন নার্স দায়িত্বপালন করেছেন। এখন চারজন আছেন৷ এর আগে ইভনিং শিফটে তিনজন ছিলেন, এখন চারজন। রাতে তিনজন সেবা দিচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় এ সংখ্যাটা খুবই অপ্রতুল। প্রতি শিফটে ১০ জন করে নার্স হলে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন পরিচালক
নার্সদের খারাপ আচরণ, চিকিৎসক সংকট, ফ্যানের সমস্যাসহ নানা বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, আমার হাসপাতালে মোট আসন আছে ৫০০টি। এখন রোগী ভর্তি আছেন ১২৯০ জন। ডেঙ্গু ছাড়া রোগীর সংখ্যা এ মুহূর্তে ৬৬৯ জন। রোগীদের আমরা বলছি ডিএনসিসিতে যেতে। কিন্তু তারা সেখানে যাবেন না। এখন আমার এখানে চারটি ফ্লোরে প্রায় ২০০ করে রোগী ভর্তি। চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচজন।
‘একজন চিকিৎসক যদি একজন রোগীকে দুই মিনিট করেও সময় দেন তা হলে ৪০০ মিনিট লাগবে। প্রায় আট ঘণ্টা। এ কারণে আমরা চিকিৎসককে রুমে রেখে রোগীদের সেখানে এসে সেবা নিতে উৎসাহিত করছি। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কুর্মিটোলা, স্যার সলিমুল্লাহ, ডিএনসিসিসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে সিট খালি আছে। রোগীরা কিন্তু সেখানে যাচ্ছেন না। ফলে আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাচ্ছে।’
‘যেখানে ১০ জন নার্স লাগবে সেখানে পাঁচজন দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে কীভাবে একজন নার্সকে ডাকলেই রোগীরা কাছে পাবেন? তবুও প্রতিনিয়ত তারা সেবা দিচ্ছেন। আমাদের তিনজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন। অধ্যাপকরাও সময় ভাগ করে নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। রোগী বাড়লেও আমার চিকিৎসক কিন্তু বাড়ছে না। ফলে তারা রুমে থেকেই সেবা দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গু চিকিৎসায় ‘ভরসা’ মুগদা হাসপাতাল, ঠাঁই নেই মেঝেতেও
জরুরি প্রয়োজন। তাহলে কেন চিকিৎসক ও নার্সদের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন না— উত্তরে তিনি বলেন, ‘গতকালও (সোমবার) সচিব স্যার বলেছেন চিকিৎসক দেবেন। এদিকে, আমরা চাহিদা সামাল দিতে মেডিসিন, গাইনিসহ সব বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় রোস্টার তৈরি করেছি। সব ফ্লোরে সবসময় চিকিৎসক দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার চার ফ্লোরে ডেঙ্গু রোগী। চাহিদার তুলনায় এত রোগীর চাপ সামলানো বেশ কঠিন। আমাদের অধ্যাপকরা তাদের বিশেষায়িত বিভাগের রোগী দেখার পরও অতিরিক্ত ডেঙ্গুরোগীর সেবা দিচ্ছেন। রোগীরা যে অভিযোগ করছেন এ প্রসঙ্গে আমি বলব, তারা যেন সহনশীল হন। এছাড়া যেসব হাসপাতালে আসন খালি আছে সেখানে গিয়ে যেন সেবা নেন।’
রোগীদের ফ্যানের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব জায়গায় ফ্যান নেই সেসব জায়গা আসলে সেবা প্রদানের এরিয়া নয়। রোগীর অতিরিক্ত চাপে এসব এলাকায় বিছানা দেওয়া হয়েছে। তবে, আমরা আজই ফ্যান লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।
‘বেশিরভাগ রোগী তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত ভিজিটর নিয়ে আসছেন। একজন রোগীর সঙ্গে কমপক্ষে চারজন ভিজিটর আসছেন। এ কারণে আমাদের সেবা দিতেও কষ্ট হচ্ছে।’
পরিচালক বলেন, ‘সবাই এসে বলেন আমার রোগী সিরিয়াস। সিরিয়াস হলেও নার্সদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাদের (নার্স) রুমের সামনে বেড দেওয়া আছে। সেখানে তারা ননস্টপ সেবা দিচ্ছেন। যিনি আসছেন তাকেই সেবা দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে যদি নার্সকে ডেকে নিয়ে যান তাহলে বাকি রোগীদের কী অবস্থা হবে? সবাই যদি সিরিয়াস হন তাহলে পাঁচজন নার্স কীভাবে সেবা দেবেন? বেড থেকে নার্স রুমে আসতে পারেন না এমন রোগী এখানে নেই। এমন রোগী হলে তো আমরা আইসিইউতে রাখতাম। পাঁচটি মেয়ের পক্ষে ২৪০ জন রোগীকে সমানভাবে সেবা দেওয়া কি সম্ভব? সুতরাং তাদের বাজে আচরণের বিষয়টি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে রোগীদের সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের।’
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গু : আগস্ট-সেপ্টেম্বর নিয়েও ভয়
নার্সদের সংখ্যাও কেন বাড়াচ্ছেন না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি শিফটে নার্স লাগে ১৫ জন। সেই হিসাবে তিন শিফটে ৪৫ জন নার্স দরকার। কিন্তু এত অল্প সংখ্যক নার্স দিয়ে কীভাবে সেবা দেব? ডিজি সাহেবকে অনেকবার নার্স দিতে বলেছি, সচিব স্যারও বলেছেন। এ সমস্যার সমাধান তো তার দায়িত্ব। আমি কি নার্সের জন্য তার পেছনে ঘুরে বেড়াব? ফোন করলেই তিনি বলেন, দিচ্ছি-দিচ্ছি। আমাদের এমপি সাহেবও ৫০ জন নার্সের ডিমান্ড লেটার দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। তিনি রেসপন্স করেননি। সমস্যাটা তো এখানে। ফলে বাধ্য হয়ে যে জনবল আছে তা দিয়েই আমাদের সেরা সেবাটা দিতে হচ্ছে।’
এমএম/এমএআর/