মিথ্যা বলে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভোট চাই না
যেটুকু মেধা, যোগ্যতা ও শিক্ষাদীক্ষা আছে তাতে সচ্ছলভাবেই জীবন-যাপন করতে পারি। এমপি হলে বেশি বেশি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে, সে আশা করি না; তার কোনো দরকার নেই। আমি টাকা দিয়ে বা টাকার জন্য এমপি হতে চাই না। যারা নিজের টাকায় ভোটভিক্ষা চাইবে, এমপি হওয়ার পর তারা প্রথমে ফ্ল্যাটের আবেদন করবে, কীভাবে ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ি আনা যায় সে চিন্তা করবে। এসব উদ্দেশ্যে আমার এমপি হওয়ার দরকার নেই— অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
বিজয়ী হলে মাত্র পাঁচ মাস ঢাকা-১৭ আসনের নাগরিকদের সেবা করার সুযোগ পাবেন তিনি। এই অল্প সময়ে কী করতে পারবেন, কতটুকু করতে পারবেন, এমন স্বল্প সময়ের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের রহস্যই বা কী— এসব বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সাইফুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : ঢাকা- ১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন? মাত্র পাঁচ মাসের জন্য এ নির্বাচন, সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন কি না?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে আমরা তিনটি গোল (লক্ষ্য) নির্ধারণ করেছি। আমরা শুধু বিজয়ী হব, এটা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এত অল্প সময়ের জন্য যে নির্বাচন সেখানে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে একটা অনাগ্রহ থাকে, সেটা হলো ভোট দিতে না আসা।
আরও পড়ুন >> ‘হারলে সুষ্ঠু, জিতলে কারচুপি’— বিব্রত আ. লীগ
আমরা, আমাদের সমর্থকগোষ্ঠী; তারাও চিন্তা করে যে মাত্র পাঁচ মাসের নির্বাচন, এ নির্বাচনে কী হবে? তারপরও আমরা ভোটারদের আগ্রহ তৈরিতে কাজ করছি। যাতে তারা ভোট দিতে আসেন। ভোট সংগ্রহ এবং ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে আসেন— ব্যবস্থাপনার এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের দলের ভেতরে নেতাকর্মীদের নিয়ে একটা পর একটা সভা করতে হয়েছে। পুরো ব্যবস্থাপনাটা আমাদের ঢেলে সাজাতে হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি, সংস্থাপন কমিটি প্রভৃতি।
কেন্দ্রভিত্তিক বিভিন্ন কমিটিও আমাদের করতে হয়েছে। এখানে তিন লাখ ২৫ হাজার ভোটার আছেন। কেন্দ্র আছে ১২৪টি। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গ ও সংগঠনের আলাদা আলাদা কমিটি আছে। আমরা যে ভোটার স্লিপটা বিতরণ করব, ভোটার লিস্টটা মানুষের কাছে পৌঁছানো, যাতে তারা সহজে এসে ভোট দিতে পারেন— এসব ব্যবস্থাপনার যে কাজ, বিশাল একটা কাজ; এতদিন এর প্রস্তুতিপর্বের কাজ আমরা করেছি।
এরপর আছে জনসংযোগ, ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরির বিষয়টা। ভোটারদের অনুপ্রাণিত করা, দলের ভেতরে নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহ দেওয়া। এত অল্প সময়ের নির্বাচন হলেও ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা কিন্তু জরুরি।
প্রথমেই বলেছিলাম, আমার তিনটি লক্ষ্য আছে। এক. নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া, দুই. অধিক সংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং তিন. একটা সুন্দর, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দেওয়া। ফলে খাটনিটা অনেক বেশি।
ঢাকা পোস্ট : ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : যেখানেই যাচ্ছি খুবই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। শুধু আমি না, আমার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা যাচ্ছেন তারাও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন >> সংলাপ হবেই, তবে এখনই নয়!
আমি যতটুকু সুযোগ পাচ্ছি ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আমি ছাড়াও দলের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। যেহেতু আমি শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম, আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রীও বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের অনেক কর্মীও কাজ করছেন। কাজ শেষে সবাই আমার কাছে প্রতিবেদন পাঠান। ভিডিও ও ছবি পাঠান। প্রতিবেদনগুলো আমি প্রতি রাতে বাসায় ফিরে দেখি। চারদিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তবে, একটা হতাশার জায়গাও আছে।
গুলশান-বনানী-বারিধারা হলো রাজধানীর অভিজাত এলাকা। তিন লাখ ২৫ হাজার ভোটার রয়েছেন এখানে। কড়াইল, আদর্শ নগর, শাকতলা ও মহাখালীতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। সেখানে বিটিসিএলের কলোনি আছে, কর্মচারীদের বড় একটা অংশ আবাস। তারপর ভাষানটেক, মানিকদী, মাটিকাটা, বালুঘাট, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর— এখানেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বসবাস।
ঢাকা- ১৭ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু তারা। এখান থেকেই আমি ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তাদের অধিকাংশই নৌকার ভোটার। শেখ হাসিনার খুঁটি যে এতটাই শক্তিশালী সেটা এখানে এসে গভীরভাবে অনুভব করলাম। তবে, হতাশার জায়গাও আছে। দীর্ঘদিন এলাকার মানুষগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সংস্পর্শ পায়নি। ২০০১ সালে এখানে বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য ছিলেন। তারপর জোটভুক্ত এমপিরা ছিলেন। কিন্তু তারা আসলে কাজের কাজ করেননি। ফারুক সাহেব (প্রয়াত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক) আওয়ামী লীগের হলেও তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি এখানে সেভাবে সময় দিতে পারেননি, সমস্যার সমাধানও করতে পারেননি। ভোটারদের মধ্যে সেই হতাশার জায়গাটা আমি দেখেছি। এখন হতাশা থেকে আশার আলো তারা দেখছেন। তারা বলছেন, এখন আমরা প্রকৃত নৌকার প্রার্থী পেয়েছি।
আরও পড়ুন >> হামলাকারীরা আ.লীগের কর্মী হওয়ায় তদন্ত হচ্ছে না : হিরো আলম
ঢাকা পোস্ট : উপনির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা কম দেখা যায়। কিন্তু ঢাকা- ১৭ আসনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন কি না?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : ঢাকা- ১৭ আসনে কে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, ফোকাসও নেই। আমি জানি, নির্বাচন ও রাজনীতিতে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী, বাংলাদেশবিরোধী, চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ অপশক্তি। তারা কখনও নির্বাচনে থাকে, কখনও থাকে না। তারা পেছন থেকে দৃশ্যত বা অদৃশ্যভাবে আছে। তাদের সঙ্গেই আমাদের সার্বক্ষণিক লড়াই। এছাড়া অন্য কোনো পার্থিব বা কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই। ফোকাস শুধু নৌকায়। এখানে মেজরিটি হলো নৌকার ভোটার। তাদের সংঘটিত করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা, লাইনে দাঁড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করা— এখানেই আমার ফোকাস।
ঢাকা পোস্ট : শিক্ষকতা পেশা থেকে রাজনীতিতে পা— কেমন উপভোগ করছেন? কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : আমি কীভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি, আসলে আমি এ বিষয়ে কখনও প্রচার করিনি। যে কারণে অনেক কিছু হয়তো অনেকের অজানা। তবে এখন বলছি, কারণ প্রশ্নগুলো আসে বলেই বলা। আমি ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সেই লুটপাট, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, জঙ্গি-উগ্রবাদের উত্থান এবং রাজাকার ও দেশবিরোধীদের শাসন-অপশাসন, এটা ছিল তখন বাস্তবতা। এর আগে আমি বিভিন্ন দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করি, মাস্টার্স করি। যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমি ২০০৫ সালে চলে আসলাম, কেন?
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটনাটি (আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা) ঘটল, আমরা দেখলাম অপশাসন এক্সট্রিম লেভেলে চলে গেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফেরার। শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিলাম। এ পেশায় থাকলে রাজনীতিতে সময় দিতে পারব। আমি কিন্তু সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ দিইনি। কোনো পদও ছিল না। দেশে আসার পর সুচিন্তা ফাউন্ডেশন-এর জন্য বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্মকে আমি রিক্রুট করা শুরু করি, তাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করি। এক-এগারোর পুরো সময়টা আমি দেশে থাকলাম। এরপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে। আমি সে সময় কিন্তু মাঠে-ঘাটে চষে বেড়িয়েছি।
আরও পড়ুন >> কেন্দ্রের কাঁধে তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ
সাংগঠনিক বিষয়ক কাজগুলো করেছি। মানুষের সঙ্গে আমার মেলামেশা কিন্তু নতুন নয়। তবে, এটা ঠিক যে কোনো একটা আসন ফোকাস করে সেই লক্ষ্যে কাজ করা, এটা আমি করিনি। কারণ, আমার রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য ছিল না যে আমি এমপি হব। গোটা বাংলাদেশকেই আমার নিজের মনে করতাম।
আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর কন্যার যে নেতৃত্ব সেই নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা দরকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমি আমার নিজ কাজটা করার চেষ্টা করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতটা শক্তিশালী করতে পারলে অটোমেটিক্যালি আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। এটাই ছিল আমার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। আমার এখানে কোনো পদ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এমপি, মন্ত্রী হওয়ারও ইচ্ছা ছিল না। পর্দার আড়ালে থেকে সেই লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।
আমরা আসলে খুব বেশি অ্যাডভারটাইজ করি না। এই যে মাদ্রাসাগুলোতে বছরের পর বছর আমাদের টিম গেছে, আমি গেছি, উদারপন্থি আলেমদের নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছি, জয় বাংলার কথা বলছি; মাঠে-ঘাটে রাজনীতির অংশ হিসেবে অনেক কাজ আমরা করছি।
এটা বলতে পারেন যে আমার কোনো রাজনৈতিক পদ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল যে আদর্শিক জায়গা সেই জায়গাতে শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা বলেন বা টকশোতে তর্ক-বিতর্ক বলেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আমি কলাম লিখেছি, মাঠে-ঘাটে প্রচুর কাজ করেছি ও করছি। বলা যায়, দেশে আসার পর মাঠের বাইরে কোনোদিন ছিলাম না। এখন হয়তো ঢাকা- ১৭ আসনের মধ্যে আমাকে আবদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু আমি গোটা বাংলাদেশে বিস্তৃতভাবে গঠনমূলক কাজগুলো করেছি।
ঢাকা পোস্ট : ঢাকা- ১৭ আসনের উপনির্বাচন করতে এসে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আপনাকে?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : আমি যেহেতু ঢাকা- ১৭ কেন্দ্রিক মনোসংযোগ দিচ্ছি, এ এলাকার কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যা এখন আমার চোখের সামনে আসছে, যেটা আগে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে আসেনি। সাধ্যের মধ্যে থেকে সমস্যাগুলোর সমাধানে নিশ্চিতভাবে কাজ করব। আমি কিন্তু মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া মানুষ নই। যেটা পারব না, সরাসরি বলব।
আরও পড়ুন >> দুর্বল-ক্ষয়িষ্ণু আ. লীগ, চূড়া থেকে এবার তাদের পতনের পালা
রাজনীতির যে কালচার (সংস্কৃতি) চলছে, তার পরিবর্তন আনতে চাই। অনেকে আমাকে বলেন যে, আপনি এখন প্রার্থী হয়েছেন, ভোট ভিক্ষা নিতে হবে, অনেককে অনেক রকম আশ্বাস দিতে হবে। কিন্তু আমি ইল্লজিক্যাল (অযৌক্তিক) কিছু বলব না, মানবও না। শুধু ভোটের জন্য বা নির্বাচিত হওয়ার জন্য নয়, আমি কিন্তু সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে দেশে এসেছি। আমেরিকার সিটিজেনশিপের আবেদন করিনি।
যতটুকু মেধা, যোগ্যতা ও শিক্ষাদীক্ষা আছে, তাতে সচ্ছলভাবেই জীবন-যাপন করতে পারি। এমপি হলে বেশি বেশি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে, তার কোনো দরকার নেই। আমি টাকার কারণে এমপি হতে চাই না। যারা নিজের টাকায় ভোটভিক্ষা চাইবে, এমপি হওয়ার পর তারা প্রথমে ফ্ল্যাটের আবেদন করবে, কীভাবে ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ি আনা যায়— এসব উদ্দেশ্যে আমার এমপি হওয়ার দরকার নেই। জনগণের এটা বোঝা দরকার অসৎ উদ্দেশ্যে কার এমপি হওয়ার ইচ্ছা আছে, কার নেই। আপনি যাকে ভোট দেবেন তিনি টাকা বানানোর জন্য এমপি হচ্ছেন নাকি মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য হচ্ছেন। আমি এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সোজাসুজি বলতে চাই, মিথ্যা কথা বলে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভোট চাই না।
ঢাকা পোস্ট : অভিজাত থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস আপনার এলাকায়। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। উপনির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন— কোন দিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : তিন লাখ ২৫ হাজার ভোটারের মধ্যে গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় ২৫ শতাংশও ভোটার নেই। বেশির ভাগ ভোটারই নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত। তারা বস্তি এলাকার মানুষ। শুধু গুলশানের নন, যিনি এমপি নির্বাচিত হন তিনি কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের ভোটেই নির্বাচিত হন। আমার অগ্রাধিকার থাকবে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে। তাদের সমস্যাই বেশি, আমি সময় ওখানেই দেব। অভিজাত এলাকায় যারা আছেন তাদেরও কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে। কিন্তু তারা তো জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন। তারপরও যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। কোনোকিছু বাদ দেব, এটা বলছি না। তবে, আমার ফোকাসটা থাকবে যারা বেশি বঞ্চিত, তাদের প্রতি। সেখানেই কাজটা বেশি করব।
ঢাকা পোস্ট : ‘যত ভোট তত গাছ’— এই ঘোষণাটা আসলে কার?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : এটা আমার ঘোষণা নয়। আমার সমর্থকগোষ্ঠী দিয়েছে। আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তারা বলেছেন যে আরাফাত ভাই যে কয়টা ভোট পাবেন ততগুলো গাছ লাগাবেন তারা। অবশ্যই আমি এটা অ্যাপ্রিসিয়েট করি, এনকারেজ করি। তবে, এটা আমি বলছি না যে আমি দিইনি, মানে আমি এটা করতে চাচ্ছি না বা এটা ভালো কাজ না। অবশ্যই ভালো কাজ। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে, আমার এমন ঘোষণা নেই। নির্বাচিত হলে পাঁচ মাসের জন্য এমপি হবো। তারপর নমিনেশন পাব কি পাব না, জানি না। এ কথা আমি বলতে চাই না যে, বলার জন্য বলা, যা আমি রাখতে পারব না।
আরও পড়ুন >> সিটিতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও ভিসানীতিতে স্বস্তি
ঢাকা পোস্ট : অনেকেই এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন কি না?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : সবাই প্রচণ্ডভাবে আমাকে সহযোগিতা করছেন। সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আমার চেয়েও বেশি কাজ করছেন। শুধু তারা নন, ঢাকা শহরের মধ্যে যত নেতাকর্মী আছেন সবাই প্রচণ্ডভাবে কাজ করছেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের যত নেতৃবৃন্দ আছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ— সবাই প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন, সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনি মাঠের নেতা থেকে টেলিভিশন টক শো’র ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশি পরিচিত। আপনার কি মনে হয় ভোটাররা আপনাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : ধারণার চেয়ে বেশি ফিডব্যাক পাচ্ছি। আমি মনে করি, ইতিবাচকভাবে তারা আমাকে মেনে নেবেন। টক শোতে যারা আমাকে বেশি দেখেছেন, এটাও সঠিক নয় যে আমি ছিলাম না মাঠে, অনেক মানুষ আছেন যারা আমাকে মাঠেই বেশি পেয়েছেন। মাঠের নেতাকর্মী যারা আছেন তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন আমি কাজ করেছি। পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করার অভ্যাস আমার। আমি এভাবেই কাজ করতে পছন্দ করি। রাজনীতিতে আত্মপ্রচার বা অ্যাডভারটাইজ মনে হয় একটু করতে হয়! না হলে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
ঢাকা পোস্ট : নৌকার প্রার্থী আপনি। আরও প্রার্থী আছেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
মোহাম্মদ এ আরাফাত : আমার বক্তব্য হচ্ছে, আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দেবেন। আজ আমাকে প্রার্থী বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এমপি হওয়ার জন্য নয়, এমপি হতেও পারি; কিন্তু কতগুলো দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার কাছে দায়িত্বগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এলাকার মানুষের বিভিন্ন সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধান করা। এখানে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রচুর নেতাকর্মী আছেন। তারা যদি পরিবার নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমাকে ভোট দেন তাহলে আমি সহজেই জয়ী হব।
এমএসআই/এমএআর