কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে বুলেট ট্রেন
বহু বছরের বঞ্চনা, জনম জনমের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার দূত শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তির সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে একটি জাতির। রক্তবন্যা পেরিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হওয়া শাপমুক্তি পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিপাগল বাঙালিকে থামানো যায়নি, অমঙ্গলের বিষদাঁত ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন সূর্য হাতে, ছড়িয়েছে নতুন আলো বিশ্বভুবনে। জীবনমান, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ বহু খাতে পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশীদের। ঢাকা পোস্টের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পগাথায় আজ থাকছে রেল খাতের সার্বিক উন্নয়ন…
ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ করে বুলেট ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। শুরুতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে ২২৭ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরবর্তী সময়ে এর দৈর্ঘ্য কক্সবাজার পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ফলে এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩০০ কিলোমিটার দাঁড়ায়।
প্রতিদিন এ রেলপথে ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বুলেট ট্রেনে যাতায়াতে যাত্রীদের কিলোমিটারপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব হয়েছে। সে হিসাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা। বুলেট ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ রেলপথে থাকবে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা। ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ হলে ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
এ রেলপথ নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিরোসিসই) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি)। উভয় প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের পর পাঁচ বছর পরিচালনা করতে চায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ প্রস্তাব পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ হলে এ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে
সিরোসিসই ও সিসিইসিসি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, যৌথভাবে তারা কোম্পানি গঠন করবে। উভয় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে রেলপথ নির্মাণের জন্য। এ বিনিয়োগ ঋণ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২০ বছর।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের নাম প্রস্তাব করা হয় ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম হাইস্পিড রেলওয়ে’। সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ কক্সবাজার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন হচ্ছে। বুলেট ট্রেন পরিচালনার জন্য নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কামরুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আগামী বছর (২০২২ সাল) রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করতে চাই।
আমরা আগামী বছর (২০২২ সাল) রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করতে চাই
কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে হাইস্পিড ট্রেন চলাচলের রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কাজটি শুরু করে চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন ও মজুমদার এন্টারপ্রাইজ। এখন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ করতে হলে নতুন করে সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন করতে হবে। অবশ্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খসড়া প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে উপস্থাপন করেছে। এ রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে লাগবে ৫৫ মিনিট।
চূড়ান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেলপথ নির্মাণে ৬২৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে।
পিএসডি/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে