নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে ‘মোখা’র প্রভাব
বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের দিকে ক্রমেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরই মধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় জারি করা হয়েছে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। রোববার সকাল থেকে আঘাত হানতে শুরু করবে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়। তবে, এর আগেই মোখা প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়।
ইতোমধ্যে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে বন্ধ করা হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। ফলে গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ নেমে গেছে অর্ধেকের কাছাকাছি। এতে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। এছাড়া পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় আবাসিক গ্রাহকরাও পড়েছেন বিপাকে।
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২২০ কোটি ঘনফুট। বাকিটা জোগান দেয়া হয় আমদানি করা এলএনজির মাধ্যমে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বেড়ে গেছে ঘাটতি
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২২০ কোটি ঘনফুট। বাকিটা জোগান দেয়া হয় আমদানি করা এলএনজির মাধ্যমে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বেড়ে গেছে ঘাটতি।
আরও পডুন >> মোখা এখন সুপার সাইক্লোন
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। এক বার্তায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানায়, চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে তিন হাজার মেগাওয়াট। বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে লোডশেডিং।
সারাদেশে এখন দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে, উৎপাদন হচ্ছে ১১ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উৎপাদনের পরিমাণ চলে এসেছে নয় হাজার মেগাওয়াটে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বিতরণ সংস্থাগুলো বেশি বেশি লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রধান দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড- ডিপিডিসি ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড- ডেসকো। তারা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিচ্ছে।
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। এক বার্তায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানায়, চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে তিন হাজার মেগাওয়াট। বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে লোডশেডিং
শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং দেখা গেছে। বিশেষত মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মগবাজার ও গুলশানে এর হার ছিল বেশি। স্থানীয়রা বলছেন, গরম আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট বাড়িয়ে দিচ্ছে ভোগান্তির মাত্রা।
মিরপুরনিবাসী মিনার হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকেই বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে ছিল। লোডশেডিং, তার ওপরে গরম; সবমিলিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি।’ মগবাজারে বসবাসরত শামীম মাহমুদ বলেন, ‘সারাদিনই থেমে থেমে লোডশেডিং হয়েছে। তাপমাত্রা সেভাবে না কমায় গরমে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন >> এলএনজি সরবরাহের বড় বাধা অবকাঠামোগত ঘাটতি
ডেসকো সূত্রে জানা যায়, শনিবার তাদের বিতরণ এলাকায় চাহিদা ছিল এক হাজার ১৫৭ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৮৩৫ মেগাওয়াট। ফলে ৩২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হয়েছে তাদের। অপরদিকে, ডিপিডিসি’র বিতরণ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং দিতে হয়েছে ৪৭৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ স্বল্পতায় লোডশেডিং ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, কয়লা সংকটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকায় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। ঘাটতি তৈরি হওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য। দুর্যোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আবাসিক এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ
এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় পাইপ লাইনে কমে গেছে গ্যাসের চাপ। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড জানায়, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের এমন চাপ থাকবে।
আরও পড়ুন >> ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গাদের কী হবে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উদ্বেগ
চাপ কমে যাওয়ায় রাজধানীতে চুলা জ্বালাতে বেগ পেতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। মতিঝিলের বাসিন্দা আফরোজা বেগম বলেন, ‘সারাদিন বলতে গেলে চুলায় গ্যাস ছিল না। পরে এলপিজি গ্যাসে রান্না করতে হয়েছে।’ মুগদায় বসবাসকারী পারভীন আক্তার বলেন, ‘চুলায় গ্যাসের চাপ খুব একটা ছিল না। যতটুকু পেয়েছি তা দিয়ে রান্না করা কষ্টকর ছিল।’
এ বিষয়ে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) সেলিম মিয়া বলেন, আমরা এখন সাপ্লাই কম পাচ্ছি। তাই অনেক জায়গায় চাহিদামাফিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিরও চাহিদা রয়েছে। মোখা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা গ্যাস সাপ্লাই আগের মতো বাড়াতে পারব।
দুর্যোগ কাটলে স্বাভাবিক হবে বিদ্যুৎ-গ্যাস পরিস্থিতি
ঘূর্ণিঝড় মোখার ফলে মহেশখালীতে অবস্থিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সারাদেশে গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গেলেই গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন >> রেকর্ড উৎপাদনেও লোডশেডিং, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ
শনিবার রাতে নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় 'মোখা’র প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে বেশ কয়েকটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আংশিক চালু/বন্ধ থাকছে। ফলে ঢাকা-সহ দেশের অনেক জায়গাতেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘অনাকাঙ্ক্ষিত এ অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়া মাত্রই ভাসমান টার্মিনালগুলো পুনঃস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ এবং গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করা হবে। এ মহাদুর্যোগে সবার সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।’
ওএফএ/এমএআর/